আসামে বাংলাদেশ হাইকমিশনের গাড়িবহরে হামলা

কূটনীতিক প্রতিবেদক / লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :

ভারতের পার্লামেন্টে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইন পাশের বিরুদ্ধে আসাম রাজ্যজুড়ে অব্যহত রয়েছে আন্দোলন। চলমান এ সহিংসতা এবং কারফিউর পটভূমিতে রাজ্যটির গুয়াহাটিতে বাংলাদেশ হাই-কমিশনের গাড়ীবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত বুধবার বিমানবন্দর থেকে নগরীতে যাওয়ার সময় সহকারী হাইকমিশনারকে বহনকারী গাড়ীবহরে হামলা চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভকারীরা গুয়াহাটি হাইকমিশন থেকে প্রায় ৩০ গজ দূরে দুটি সাইন পোস্ট ভেঙে ফেলে।

এ ঘটনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব কামরুল আহসান ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ প্রতিবাদ জানান।

এসময় তিনি, ভারতীয় সরকারকে হাইকমিশনের কর্মী ও সম্পত্তি রক্ষার আহ্বান জানান। অবশ্য ঘটনার পরপরই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

সাক্ষাৎকালে রিভা গাঙ্গুলি জানান, ‘ঘটনার পরপরই গুয়াহাটিতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের চ্যান্সেরি এবং বাসভবনে এলাকার নিরাপত্তা জোরদারের জন্য ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে সতর্ক করা হয়েছে।’

ভারতের সংসদের উচ্চ কক্ষ রাজ্য সভায় বৃহস্পতিবার নাগরিকত্ব সংশোধন আইনটি পাশ হওয়ার পর থেকেই আসামের বিভিন্ন জায়গায় সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়।

রাতভর বিক্ষোভের পর রাজ্যটিতে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়। পুলিশের সাথে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও বহু লোক।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ভারতের যথাযথ কর্তৃপক্ষ সহকারী হাই কমিশন এলাকা, কমিশনের কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় এরই মধ্যে ব্যবস্থা জোরদার করার পদক্ষেপ নিয়েছে।

গাড়ীবহরে হামলার ঘটনাকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেখা হচ্ছে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে। এবং বাংলাদেশ ও ভারত দুই প্রতিবেশী দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে বাংলাদেশ মনে করে।

এদিকে সংসদে সিটিজেন শিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল বা সিএবি নামে পরিচিত এই বিতর্কিত বিলটির বিরোধিতা করেছে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসসহ ভারতের বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল। ভারতের বিভিন্ন মুসলিম দলের নেতারাও বিলটিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন।

আসামে যারা এই বিলের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তাদের বক্তব্য, ‘এই বিলের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ থেকে আসামে আরো বেশি সংখ্যক বাঙালী হিন্দুর আসার পথ খুলে দেয়া হয়েছে। আসামে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় অহমীয়া জনগোষ্ঠীর সাথে বাংলাভাষী জনগণের বিরোধ চলছে।’

এদিকে, বাংলাদেশের পর কয়েক ঘন্টার মাথায় ভারত সফর বাতিল করার ইঙ্গিত দিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ও এনআরসির প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল আসামের গুয়াহাটিতেই জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সফর অনিশ্চিত বলে জানিয়েছে জাপানি সংবাদ সংস্থা জিজি প্রেস।

ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রণালয় অবশ্য জানিয়েছে,‘তাদের কাছে এই সংক্রান্ত কোনো খবর নেই। ১৫ ডিসেম্বর রোববার থেকে তিন দিনের ভারত সফরে আসার কথা জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের।’

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *