ড্রাগ নিয়ন্ত্রণে বিচারকদেরও এগিয়ে আসতে হবে: জামাল উদ্দিন
সাইয়্যেদ মো: রবিন / লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
শুধু মাত্র মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি বা আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে বিচারকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে সংস্থাটির ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
জামাল উদ্দিন বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে মাদকের অপরাধ হচ্ছে জামিন অযোগ্য অপরাধ। এখন মাননীয় আদালত যদি সে বিবেচনায় না নিয়ে জামিন অযোগ্য অপরাধের জামিন দিয়ে দেন এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কিছু থাকে না। তবে আমি নির্ধিদায় বলতে পারি জাতিকে মাদক মুক্ত করতে হলে শুধু মাত্র মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বা আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নয় বিচারকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
আগামী ২ জানুয়ারি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ দিন নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে তারা দিবসটি উদযাপন করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে জামাল উদ্দিন বলেন, সারা দেশ থেকে মাদককে সমূলে নির্মূল করার জন্য হট লাইন চালু করা হয়েছে। দেশের যে কোন প্রান্তের মানুষ মাদক নিয়ে আমাদের তথ্য দিতে পারে। ০১৯০৮৮৮৮৮৮৮ এই নাম্বারে ফোন করলেই দ্রুত সেখানে আমাদের লোকজন পৌঁছে যাবে। কেউ প্রশাসনিক সহযোগিতা চইলে তাৎক্ষণিক সহযোগিতা করা হবে। কেউ কথা বলতে চাইলে কোন বিভাগের সঙ্গে কথা বলতে চায় সেটি জানালে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে তাৎক্ষণিক কথা বলতে পারবে।
তিনি বলেন, নতুন বছরে আমরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রবেশ করছি। ২০২০ সালে অনলাইনের মাধ্যমেই সবকিছু পরিচালিত হবে। আগামী ১২ তারিখে এর উদ্বোধন করা হবে। মাদক নিয়ে যে কোনো ধরনের অভিযোগ অনলাইনে করার সুযোগ থাকবে। মাদকের লাইসেন্সের জন্য কাউকে আর অফিসে আসতে হবে না। অনলাইনে সব করতে পারবে। লেনদেনসহ যাবতীয় কাজ করা যাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে।
জামাল উদ্দিন বলেন, আগামী ২ জানুয়ারি ২০২০ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এবার তার স্মৃতির প্রতি এটি উত্সর্গ করা হয়েছে। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর থিম হচ্ছে ‘মাদককে রুখবো, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়বো।’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারা দেশে র্যালি, আলোচনা সভা, মতবিনিময় এর মাধ্যমে আমরা দিবসটি পালন করবো। সমাজের মনুষকে মাদক এর নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে তুলে ধরে এ থেকে ফিরে আসার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
এই মহাপরিচালক আরও বলেন, দেশে প্রায় ৩৬ লাখ মাদকসেবী রয়েছে। তাদেরকে মাদকাসক্তির চিকিৎসা ছাড়া সঠিক পথে নিয়ে আসা অসম্ভব। তাই তাদের চিকিৎসা অপরিহার্য। আমরা সামনের বছরে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলিকে ১ কোটি টাকা প্রণোদনা দিচ্ছি। এর মাধ্যমে তারা চিকিৎসা এবং অন্যান্য কাজগুলো আরো ভালোভাবে করতে পারবে। সেবার মানকে উন্নত করতে পারবে। মাদকাসক্তদের নিরাময়ে ভুমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, আমরা যখন এর কার্যক্রম শুরু করি তখন নিরাময় কেন্দ্র ছিল ৫০টি। আর এখন এর সংখ্যা ৩২৫টিতে উন্নীত করা হয়েছে। আমাদের কর্মীরা নিয়মিত এসব কেন্দ্র পরিদর্শন করে থাকেন। এছাড়া প্রতিটি নিরাময় কেন্দ্র থেকে আমরা তিনজনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। যাতে তারা সঠিক চিকিৎসাটি মানুষকে দিতে পারে। তার মতে, বিশ্বে ৮৩টি পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হলেও আমার মাত্র দু’একটি পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিতে পারছি।
জামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের জনবলসহ নানা সংকট রয়েছে। এরপরও চেষ্টা করছি ভালো কিছু করার। আমাদের গাড়ির সংকট রয়েছে। পায়ে হেঁটে বা বিকল্প পদ্ধতিতে আমাদের অভিযান পরিচালনা করতে হয়। ২০১৯ সালে ১৭ হাজার মামলা দেওয়া হয়। লোক কম হওয়ায় সবাইকে অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। নতুন বছরে সারাদেশে ৩৬৬০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। ২০২০ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নতুন শক্তিতে আবির্ভূত হচ্ছে বলে জানান তিনি।