খাদ্যে ফরমালিন-কেমিক্যাল দেয়া গণহত্যা: রাষ্ট্রপতি

মেজবাহ /লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :

বেশি লাভের জন্য যারা খাদ্যে ফরমালিন ও কেমিক্যাল মেশায় তাদের সমালোচনা করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এর ফলে ক্যানসার ভয়াবহ আকার ধারণ করছে জানিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান এটাকে ‘গণহত্যার’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটসহ সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

বুধবার বিকালে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) তৃতীয় সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।

বেলা তিনটায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধনের পর রাষ্ট্রপতি ও সমাবর্তন বক্তাকে সমাবর্তন স্মারক প্রদান করা হয়। বিকাল সাড়ে ৪টার পর রাষ্ট্রপতি সমাবর্তনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

গ্র্যাজুয়েটদের পাশাপাশি উপস্থিত অতিথিদের কাছে ফরমালিনমুক্ত দেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ফরমালিনের কারণে বর্তমানে দেশে ক্যানসারসহ অন্যান্য মরণঘাতী রোগ বেড়ে যাচ্ছে, যার দায়ভার আমরা কেউই এড়াতে পারি না।’

সিলেটের ছাতকের কমলার স্বাদের প্রশংসা করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘সব জায়গায় এখন শুধু চীনের কমলা পাওয়া যায়। যা দেশে আনতে আড়াই মাস লাগে। এসবে ফরমালিন দেওয়া থাকে। শুধু ফলমূল না শাকসবজি, মাছ, মাংস সবকিছুতেই ফরমালিন। এসব খাওয়ার ফলে দেশে ক্যানসারের রোগী প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ২০/৩০ বছর আগেও এত ক্যানসারের রোগীর কথা শুনতাম না। যারা বেশি লাভবান হওয়ার জন্য ফরমালিন ও কেমিক্যাল দিচ্ছে তারা গণহত্যা করছে। এদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার এবং সরকারেরও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

চাকরির পেছনে না দৌড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার তাগিদ

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শিক্ষা ও গবেষণায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দেশে শীর্ষস্থান ধরে রাখার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সুনাম বয়ে এনেছে। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের সুনাম সৃষ্টিতে অনন্য ভূমিকা রাখছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যা আমাদের জন্য গৌরবের।’ প্রতিষ্ঠার ৩০ বছরে মাত্র তিনটি সমাবর্তন হওয়ার কারণে চলমান ‘সমাবর্তন জট’ নিরসনেও তাগিদ দেন তিনি।

আবদুল হামিদ বলেন, ‘দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিচর্চা ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি দেশ ও বিদেশে কর্মক্ষেত্রে শাবির গ্র্যাজুয়েটরা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের মাধ্যমে দেশের সুনাম বয়ে আনছে। দারিদ্র্য নিরসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। বিশ্ব দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।’

আবদুল হামিদ বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় তরুণদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি চাকরি বা অন্য চাকরির পেছনে মনোনিবেশ না করে উদ্যোক্তা হওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘পৃথিবীর সব রাষ্ট্রই এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নিজেদের শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলেছে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর নতুন এই বিশ্বব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত যেকোনো অসামর্থ্য দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশকে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নিরন্তর গবেষণা। নিত্য নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও তার প্রসারের ওপরেই নির্ভর করে দেশের সমৃদ্ধি। বিশ্বায়নের এ যুগে রাষ্ট্র ও জনগণের চাহিদা মোকাবেলায় প্রযুক্তিগত জ্ঞান ব্যতীত গত্যন্তর নেই। তথ্যপ্রযুক্তিতে সক্ষমতার ফলেই উন্নয়নকে আজ দেশের আপামর জনসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এক্ষেত্রে তোমরা আরও দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আমি আশাবাদী।’

রাষ্ট্রপতি এর আগে সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন। সিলেটের রাস্তা-ঘাটের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বিদেশের রাস্তা-ঘাটে থুতু ফেলতেও মানুষ ভয় পায়। অথচ আমাদের দেশে মানুষ নোংরা করার আগে একবারও ভাবে না, তাদের পরিষ্কারের মানসিকতা হারিয়ে গেছে। শাহাজালাল ও শাহপরানের এই পবিত্র ভূমির রাস্তাগুলো ঘুরে আমার মন খারাপ হয়ে গেছে। ধারণা করেছিলাম রাস্তা আরও পরিষ্কার থাকবে। এখানে সেখানে পলিথিন, কলার বাকল, কাগজ পড়েছিল।’ এক্ষত্রে তিনি জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নিতে বলেন।

এবারের সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০০০-০১ থেকে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ছয় হাজার ৭৫০ জন গ্র্যাজুয়েটের ডিগ্রি ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি। তাদের মধ্যে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য ২০ জন শিক্ষার্থীকে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম।

সমাবর্তন বক্তা বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য কোনো বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহের কারণে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি হচ্ছে না। মেধার বিকাশ সাধনের জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি করতে পারলে শিক্ষার্থীরা আরও অনেকদূর অগ্রসর হতে পারবে।’

এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘জ্ঞানকে আমরা সনদের ওজনে মাপতে শুরু করেছি, তার ওপর গবেষণাকে পশ্চিমা অনুসৃত পদ্ধতি ও প্রকাশনা শর্তের অধীনে এনে দেশীয় জ্ঞানকে গৌণ অবস্থানে ঠেলে দিয়েছি। এখন বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সাধারণত চাকরিতে স্থায়ী হওয়া এবং পদোন্নতি পাওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত। এর একটি কারণ আমাদের উচ্চশিক্ষার সামনে-পেছনে পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকা বাজার। এই বাজারের ভেতর চাকরির বাজার আছে, যার সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত রূপটি সরকারি চাকরি, আরও আছে করপোরেট বাজার, আছে মিডিয়া ও নানান পরিষেবাসহ ছোট-বড় অনেক বাজার। প্রাথমিক পর্যা।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *