প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত আগামীকাল

 

গাজীপুর প্রতিনিধি / লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :

অনুকূল আবহাওয়া, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও ধর্মীয় উদ্দীপনায় ইজতেমার পক্ষ-বিপক্ষ মতাদর্শী মুসল্লিদের অংশগ্রহণ ও কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গতকাল শুক্রবার বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ইমান, আমল ও আখলাক, দাওয়াত ও তাবলীগ সম্পর্কে তাবলীগি বুজুর্গ, ইসলামি চিন্তাবিদ, আলেম ও পাকিস্তানের মাওলানা খোরশেদ আলমের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আলমি শুরার তত্ত্বাবধানে প্রথম পর্ব। রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠ টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে তাবলীগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিনে গতকাল অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বের বৃহত্তম জুমার জামাত। ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী লাখ লাখ মুসল্লি­­ ছাড়াও রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষ রেলপথ, সড়কপথ, নৌপথসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে এবং অনেকে পায়ে হেঁটে শরিক হন এই বৃহত্তম জুমার জামাতে। বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশের দুই সহস্রাধিক প্রতিনিধিসহ লাখো মুসল্লি­র অংশগ্রহণে অসীম, অনন্ত ও প্রেমময় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ইবাদত-বন্দেগি আর কোরআন-হাদিসের আলোচনায় বিশ্ব ইজতেমার বিশাল প্যান্ডেলে পবিত্র ধর্মীয় পরিবেশ বিরাজ করছে। আগামীকাল (রোববার) দুপুরের আগে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ধর্মীয় মহাসমাবেশের প্রথম পর্ব শেষ হবে। গতকাল সকাল থেকেই সর্বস্তরের মুসলমানরা জুমার জামাতে শামিল হওয়ার জন্য টুপি, পাঞ্জাবি পরে জায়নামাজ হাতে ইজতেমা মাঠের দিকে ছুটতে দেখা গেছে। দেশ-বিদেশের মুসল্লির সঙ্গে একই জামাতে শরিক হয়ে নামাজ আদায় করার মাধ্যমে বেশি সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে সবার মধ্যে দেখা গেছে ব্যাকুলতা। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সি মানুষের সমাবেশ ঘটে জুমার জামাতে। টঙ্গী, উত্তরা, কামারপাড়া, মিরপুর, আব্দুল্ল­াপুরসহ আশপাশের এলাকার মসজিদে গতকালের জুমার জামাতে মুসল্লির সংখ্যা ছিল অপ্রতুল। ইজতেমা মাঠে জুমার জামাত সুবিশাল প্যান্ডেলের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিস্তৃতি লাভ করে চারপাশে। টঙ্গীর যেদিকে দৃষ্টি যায়, শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পরা মুসল্লিদের দেখা মেলে। পুরো টঙ্গী নগরী যেন টুপি-পাঞ্জাবি পরা মানুষের নগরে পরিণত হয়েছে। মাঠে স্থান না পেয়ে অনেকে মহাসড়ক, অলি-গলিসহ যে যেখানে পেরেছেন পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হয়েছেন। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বেশ কিছুক্ষণের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে শুরু হওয়া জুমার জামাতে ইমামতি করেন বাংলাদেশের তাবলীগ জামাতের শুরা সদস্য, শীর্ষ মুরব্বি, কাকরাইল মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ যোবায়ের আহমদ। জুমার নামাজের পর বয়ান করেন মাওলানা শেখ ইউনুস, বাদ আসর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা এহসান ও বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আহমদ লাট। বয়ানে ইমান ও আমলের কথা বলা হয়, দুনিয়ার কথা চিন্তা না করে আখেরাতের চিন্তা করার আহ্বান জানানো হয়।

জুমার নামাজে ভিআইপিদের অংশগ্রহণ :গতকাল শুক্রবারের জুমার নামাজে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা :বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষ্যে নিয়োজিত ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ইজতেমাস্থল ও আশপাশের খাবারের দোকান ও হোটেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পচা-বাসী খাদ্য পরিবেশন এবং ভেজাল খাদ্য বিক্রির অভিযোগে বিভিন্ন খাবারের দোকান ও হোটেল মালিকদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাসহ জরিমানা আদায় করা হয়।

হকার ও ভিক্ষুকের উপদ্রব :বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হকার ও ভিক্ষুক ইজতেমা ময়দানে ও আশপাশের এলাকায় ভিড় জমিয়েছে। এদের সঙ্গে যোগ হয়েছে পকেটমার, ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যরাও। এদের নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর নজরদারিতে রয়েছে।

চার মুসল্লির মৃত্যু :ইজতেমায় গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত চার জন মুসল্লি মারা গেছেন। তাদের সবাই বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল শুক্রবার ভোরে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর থানার পাটাগ্রামের খোকা মিয়া (৬০), চট্টগ্রাম জেলার কটিয়া থানা এলাকার খইগ্রামের মোহাম্মদ আলী (৭০) ও নওগাঁ জেলার আত্রাই থানা এলাকার পাইকরা বড়বাড়ী গ্রামের শহীদুল ইসলাম (৫৫) নামে ৩ মুসল্লি মারা গেছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার লাখিরপাড় গ্রামের এয়াকুব শিকদার (৭৫) মারা যান। জুমার নামাজের পর ইজতেমা ময়দানে তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

হারানো ও প্রাপ্তি :ইজতেমা মাঠের পশ্চিম দিকে হারানো ও প্রাপ্তি সেন্টার খোলা হয়েছে। ময়দানে কেউ কিছু হারালে এবং কিছু পাওয়া গেলে সেখান থেকে সঠিক তথ্য প্রদান করার কথা বলা হয়েছে।

বিদেশি মুসল্লিদের অংশগ্রহণ :ইজতেমার প্রথম পর্বে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চাঁদ, ইথিওপিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, খিরকিজস্তান, মালয়েশিয়া, মরক্কো, নেপাল, কেনিয়া, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, জর্দান, দুবাইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। বিভিন্ন ভাষা-ভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ইজতেমা ময়দানে বিদেশি মেহমানদের ভিন্ন ভিন্ন তাঁবু নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *