করোনাভাইরাস: চীনের মূল ভূ-খণ্ডের বাসিন্দাদের জন্য নতুন নিয়ম চালু করেছে হংকং
আন্তর্জাতিক ডেস্ক / লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
শেনঝেন এলাকায় নিরাপত্তা বাড়িয়েছে চীন যেখানে হংকংয়ে প্রবেশের অপেক্ষা করছে হাজার হাজার মানুষ।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রুখতে নতুন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে হংকং। আর তা হচ্ছে চীনের মূল ভূ-খণ্ড থেকে আগত যে কাউকেই দুই সপ্তাহ কোয়ারিন্টিনে রাখা হবে।
পর্যটকদেরকে তাদের হোটেলের কক্ষে নিজেদের একাকী করে রাখতে হবে অথবা সরকার পরিচালিত কেন্দ্রগুলোতে যেতে হবে। আর হংকংয়ের বাসিন্দা, যারা চীন থেকে ফিরবে, তাদেরকে এই সময়ের মধ্যে নিজেদের বাড়ি থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
যারা এই নিয়ম লঙ্ঘন করবে তাদেরকে জেল এবং জরিমানা গুনতে হবে।
মধ্যরাতের ডেডলাইনের আগে চীনের সীমান্ত শহর শেনঝেনয়ে হাজার হাজার পর্যটক হংকংয়ে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে।
হংকংয়ে এখনো পর্যন্ত ২৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং একজন ব্যক্তি মারা গেছেন। আর চীনের মূল ভূ-খণ্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ৩১ হাজার ২০০জন এবং মারা গেছে ৭১৭ জন।
চীনের বাইরে ২৫টি দেশে ২৭০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে ফিলিপিন্সে এক জন মারা গেছে।
এদিকে জাপানের উপকূলে কোয়ারিন্টিনে রাখা একটি প্রমোদ তরীর ৪১ জন আরোহীর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যা নিয়ে মোট আক্রান্ত আরোহীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৬১ জনে।
শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায় যে, চীনে গত দুই দিন ধরে সংক্রমণের সংখ্যা কিছুটা কম নজরে এসেছে। তবে সংস্থাটির মহাপরিচালক টেড্রোস আঢানম ঘেব্রেয়েসাস এমন সংখ্যার প্রতি খুব বেশি মনোযোগী না হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তিনি সাংবাদিকদের আরো বলেন, এই প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্বব্যাপী সুরক্ষা জনিত চিকিৎসা সরঞ্জাম যেমন গাউন, মাস্ক এবং গ্লাভসের সংকট দেখা দিয়েছে।
“যখন যোগান কম থাকে এবং চাহিদা বেশি থাকে, তখন সেগুলো চড়া দামে বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুদের প্রবণতা তৈরি হয়,” তিনি হুশিয়ার করে বলেন। ব্যবসায়ীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান তারা যেন মুনাফার প্রতি নজর না দিয়ে ‘মানবতার সুরক্ষাকে সমুন্নত রাখেন।’
এছাড়াও ডাব্লিউএইচও ১৭ হাজার রোগী সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে। তাদের তথ্য মতে, এসব রোগীর ৮২ শতাংশের সংক্রমণ খুব হালকা, ১৫ শতাংশের অবস্থা মারাত্মক এবং ৩ শতাংশের অবস্থা গুরুতর।
হংকংয়ের অবস্থা কেমন?
চীনের আধা-স্বায়ত্তশাসিত এলাকাটি জানায়, মূল ভূ-খণ্ড থেকে আগত যে কারো জন্য কোয়ারিন্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে মূলত রোগটির প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর উদ্দেশ্যে।
প্রতিদিন লাখো মানুষ চীন থেকে হংকংয়ে ভ্রমণ করে। যদিও সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহ ধরে হংকং নিজেদের বেশ কিছু সীমান্ত পয়েন্ট বন্ধ করে দেয়ার পর এই সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
চলতি সপ্তাহে সম্পূর্ণভাবে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার দাবিতে ধর্মঘট করে হাজার হাজার চিকিৎসাকর্মী।
হংকংয়ের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার চীনের মূল ভূ-খণ্ড থেকে ১১ হাজার পর্যটক প্রবেশ করেছে। এক দিন আগে এই সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৭২৬ জন জন।
চীনের মূল ভূ-খণ্ডে অবস্থা কেমন?
করোনাভাইরাস সম্পর্কে যে চিকিৎসক হুঁশিয়ার করার চেষ্টা করেছিলেন তার মৃত্যুতে চীন জুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও শোক ছড়িয়ে পড়েছে।
ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল উবেই প্রদেশের উহানে রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার সময় ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার পর মারা যান লি ওয়েনলিয়াং।
গত ডিসেম্বরে তিনি সহ-চিকিৎসকদের সতর্ক করে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন যে, তিনি মনে করছেন এই ভাইরাসটি সার্স- যা আরেকটি করোনাভাইরাস- জাতীয় একটি ভাইরাস।
কিন্তু তাকে পুলিশ এ ধরণের “ভুল মন্তব্য না করার” নির্দেশ দিয়েছিল এবং তার বিরুদ্ধে “গুজব ছড়ানোর” তদন্তও হয়েছিল।
চীনের দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা জানিয়েছে, তারা “ডা. লি সম্পর্কিত বিষয়ে” তদন্ত করবে।
ছবির কপিরাইটREUTERS
Image caption
শুক্রবার মারা যাওয়া চীনের চিকিৎসক ডা. লি ওয়েনলিয়াংকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়েছে হংকংয়েও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি বছর গুলোতে এমন কোন ঘটনার উল্লেখ নেই যা চীনের সরকারের প্রতি অনলাইনে এতো বেশি বিষাদ, ক্ষোভ এবং অবিশ্বাস উস্কে দিয়েছে।
ডা. লি’র মৃত্যুর খবর চীনের সামাজিক মাধ্যমে শীর্ষ ট্রেন্ডিং টপিকে পরিণত হয়েছে, যা প্রায় এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন দর্শক দেখেছে।
চীনের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের তীব্রতাকে কমিয়ে দেখানো এবং প্রাথমিক অবস্থায় এটিকে গোপন করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
সরকার স্বীকার করেছে যে ভাইরাসের প্রতি পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে তাদের “ত্রুটি ও ঘাটতি” ছিল যাতে এ পর্যন্ত চীনের মূল ভূ-খণ্ডেই ৬৩৬ মারা গেছে এবং ৩১,১৯৮ জন আক্রান্ত হয়েছে।
করোনাভাইরাস সম্পর্কে সর্বশেষ কী জানা যায়?
•প্রমোদ তরীর কোম্পানি রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ক্রুজ জানিয়েছে যে, তারা চীন, হংকং কিংবা ম্যাকাউয়ের পাসপোর্টধারীদের জাহাজে উঠায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কোম্পানিটি তাদের জাহাজ অ্যান্থেম অব দ্যা সিস নিউ জার্সি থেকে ছাড়তে বিলম্ব করেছে। কারণ এর আগে জাহাজটির চার জন অতিথিকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর তাদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরীক্ষা করা হয়। কোম্পানিটি জানায়, শনিবার এই পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যাবে।