অভাবে লোকলজ্জা : গোপনে খাদ্য সহায়তা এসপি জেরিনের

ওমর ফারুক, নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক সচিত্র মৈত্রী

বান্দরবান : ‘অভাবে স্বভাব নষ্ট’- বহুল প্রচলিত এই বাগধারাটার বিপরীতেও অনেক মানুষের জীবন চলে। যারা অভাবী বলেই সমাজে স্বীকৃত, তারা চাইলেই হাত পাততে পারে। আর দাতারা এদের দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। কিন্তু যিনি প্রকৃত অর্থে অভাবি না হয়েও পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে চরম কষ্টে দিনযাপন করছেন তার কি হবে? সমাজে এমন মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। ব্যাকরণের ভাষায় আমরা এদের নিম্ন মধ্যবিত্ত বলি। যারা অভাবে কষ্ট পেলেও হাত পাততে লজ্জাবোধ করেন। মূলত হাত পাতা তাদের স্বভাব নয়। করোনা ভাইরাসের প্রকোপে এমন অভাবি মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বান্দরবান পার্বত্য জেলার পুলিশ সুপার জেরিন আখতার।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘এসপি বান্দরবান’ নামীয় একটি ফেসবুক আইডি থেকে আজ বেলা তিনটায় এই পোস্টটি দেয়া হয়। পোস্টটিতে বলা হয়, চলমান পরিস্থিতিতে যাদের ঘরে খাবার নেই, লোক লজ্জা কিংবা ছবিতে ফ্রেম বন্দি হওয়ার ভয়ে সামনে আসছেন না, চেয়ে নিতে ও পারছেন না, ডাউন পরিস্থিতিতে আয় রোজগার করতে পারছেন না, জনপ্রতিনিধি বা দানশীল ব্যক্তির নিকট থেকে সহযোগিতা গ্রহন করতে পারছেন না – এ রকম কেউ থাকলে নিম্ন লিখিত হটলাইন নাম্বার সমূহে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করছি।

প্রিয় বান্দরবানবাসী বলে পোস্টটিতে সম্বোধন করা হয়। সহযোগিতা নেয়ার জন্য এই পোস্টে ৮টি যোগাযোগের নাম্বার দেয়া হয়েছে। বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, রুমা, থানচি থানা্সহ পুলিশ কন্ট্রোল রুমের যোগাযোগের নাম্বার এই পোস্টে উল্লেখ আছে।

এই পোস্টে আরো বলা হয়, কথা দিচ্ছি ছবিতো দুরের কথা আপনার পরিবারও জানবে না। যে সকল ব্যাগে বর্তমান খাদ্যসামগ্রী বিতরণ হচ্ছে সে রকম ব্যাগেও দিবো না। আপনার পরিবার মনে করবে বাজার করে আসলেন। ঘরে থাকুন, সস্থ থাকুন।

পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেশ সাড়া ফেলে। কমেন্টে দেখা যায় ভালো লাগার প্রকাশ। এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার জেরিন জেরিন আখতার বিপিএম দৈনিক সচিত্র মৈত্রীকে বলেন, যে সকল মানুষ লোকলজ্জার ভয়ে সরকারি কিংবা অন্যান্য ত্রাণ নিতে পারছেন না, তারা নির্ভয়ে আমাদের হটলাইনে যোগাযোগ করুক। আমরা তাদের সহযোগিতা ঘরে পৌঁছে দিব। প্রতিটি দুর্যোগে এই শ্রেণীর মানুষ সীমাহীন কষ্টে ভোগেন। তাদের কষ্ট লাঘব করার জন্য সাহায্যের হাত প্রসারিত করাও কঠিন। কারণ তাদের সহজে শণাক্ত করা যায় না। তাদের কষ্ট লাঘব করতে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

তিনি আরো বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে এই কাজ শুরু করেছি। আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি যদি আমাদের সাথে শরীক হতে চান, আমাদের দরজা তার জন্যও উন্মুক্ত। দাতা চাইলে তার পরিচয় আমরা গোপন রাখবো।

প্রসঙ্গত,  খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে ২৪ ঘণ্টা এই হটলাইন নাম্বারগুলো চালু থাকবে।

 

মৈত্রী/ এএ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *