বিসিএস সদস্যদের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকের ‘উদ্যম’ সল্যিউশন

ঢাকা : বিসিএস সদস্য এবং উদ্যোক্তাদের যাবতীয় ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান এবং জামানতবিহীন ১ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন দেয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

শনিবার (২৪ অক্টোবর) তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিসিএস সদস্যদের স্মল, মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস (এসএমই) সুবিধা প্রদানের জন্য ওয়েবিনারে বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান কার্যনির্বাহী সেলিম আর.এফ. হোসাইনের উপস্থিতিতে আর্থিক সঙ্কট মোকাবেলা এবং লোন সুবিধাসহ ‘উদ্যম’ ফিনেন্সিয়াল সল্যিউশনের যাত্রা শুরু হয়। কাজী ইমদাদুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, এমপি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি প্রথম থেকেই কাজ করে আসছে। ব্র্যাক ব্যাংক বিসিএস সদস্যদের অর্থায়নে যে সুবিধা প্রদান করছেন তা প্রশংসনীয়। দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে আমি আরো বেশি আনন্দিত। তরুণদের আইডল প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দূরদর্শী নির্দেশনায় তথ্যপ্রযুক্তি খাত দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার আমদানিকারক হওয়ার চেয়ে উৎপাদনকারী হওয়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ স্লোগানে ব্র্যাক ব্যাংক উদ্যোক্তাদেরও সহজ শর্তে অর্থায়ন করবেন বলেই আমি আশা করি। বিসিএস সদস্যদেরও ব্যাংকের এই সহযোগিতার কথা মাথায় রেখে ঠিক সময়ে লোন পরিশোধ করে ব্যাংকিং খাতকেও উৎসাহিত করা উচিৎ।

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বিসিএস মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ব্র্যাক ব্যাংকের সঙ্গে বিসিএস এর সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার ফলে দুপক্ষই উপকৃত হবে। করোনাকালীন দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে প্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের তারল্য সঙ্কট সমাধানে ব্র্যাক ব্যাংকের জামানতবিহীন লোন বিসিএস সদস্যদের ব্যবসা পরিচালনায় আশির্বাদ স্বরুপ। এছাড়া এলিফ্যান্ট রোডে সান্ধ্যকালীন ব্যাংকিং, বুথ সুবিধা এবং কো- ব্যান্ডেড ডেবিট কার্ড সদস্যদের ব্র্যাক ব্যাংকে লেনদেন করতে আগ্রহী করে তুলবে। আমরা আশা করছি, ব্র্যাক ব্যাংক বিসিএস সদস্যদের সঙ্গে একসাথে ব্যাংকিং সেবাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

 

‘বিসিএস-ব্র্যাক ব্যাংক পার্টনারশিপ’ সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করে ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব এসএমই ব্যাংকিং সায়েদ আব্দুল মোমেন বলেন, ব্র্যাক ব্যাংক বরাবরের মতো ক্ষুদ্র এবং মাঝারি উদ্যোক্তাদের গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এর সাথে এখন আমরা আইসিটি উদ্যোক্তাদেরও যুক্ত করেছি। বিসিএস এর সঙ্গে এই সমঝোতা চুক্তির ফলে ব্র্যাক ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার পাশাপাশি জামানতবিহীন লোন, এক্সপোর্ট রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ), স্ট্যান্ডবাই লেটার অব ক্রেডিট (এসবিএলসি)সহ বেশ কিছু আকর্ষণীয় সুবিধা বিসিএস সদস্যরা উপভোগ করতে পারবেন। ব্যাংকিং এবং ঋণ সুবিধা দিতে ব্র্যাক ব্যাংকের এলিফেন্ট রোড শাখাসহ প্রধান প্রধান শাখাগুলোতে মিলবে সান্ধ্যাকালীন ব্যাংকিং সেবা। বিসিএসের শাখা অফিস অবিস্থত ৭টি জেলাতেই থাকবে ডেডিকেটেড এসএমই হেল্পলাইন। মিলবে ফ্রি ডেবিট কার্ড ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং সল্যুশন। চালু হবে কো-ব্র্যান্ডেড ডেবিট কার্ড।

এসবিকে টেক ভেঞ্চারের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া বশির কবীর বলেন, এসএমই লোন সুবিধা প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের জন্য তারল্য সঙ্কট মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যাদের আগের ঋণ নেয়ার অভিজ্ঞতা নেই তাদের ক্ষেত্রে তাদের বাৎসরিক লেনদেনের উপর ভিত্তি করে সহজ শর্তে লোন দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিৎ। এসএমই লোনের ফলে আইসিটি ব্যবসায়ীরা দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখতে পারবে।

ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান কার্যনির্বাহী সেলিম আর.এফ. হোসাইন বলেন, ‘আস্থা অবিচল’ স্লোগানে ব্র্যাক ব্যাংক প্রথম থেকেই ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করে আসছে। আমাদের প্রতি আস্থা রাখার জন্য আমরা বিসিএসকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বর্তমানে সাড়ে তিন লাখ এসএমই গ্রাহকদের সঙ্গে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। করোনাকালীন সময়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি প্রতিয়মান হয়েছে। বেড়েছে হালনাগাদ প্রযুক্তির ব্যবহার। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিসিএস এর সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমরা চাই বিসিএস এর সব শাখার সদস্যরা আমাদের ব্যাংকিং সেবার অন্তর্ভূক্ত হোক। ইতোমধ্যে ৪৭ শতাংশ ব্যবসা আমরা এসএমই থেকে পাচ্ছি। সরকারের দূরদর্শিতায় আমরা সহজ সুদের হারে লোন দিতে পারছি। ক্ষুদ্র এবং মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য আমাদের এই সেবা চলমান থাকবে।

‘বিসিএস-ব্র্যাক ব্যাংক পার্টনারশিপ’ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর। তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী সংকটময় সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের পাশে ব্র্যাক ব্যাংকের এগিয়ে আসার উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন এবং এই খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ফিন্যান্সিয়াল সুবিধা প্রদান করা গেলে তা উভয় পক্ষের জন্য কল্যাণকর। তিন মাসের মতো তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যবসা ছিল না বললেই চলে। ব্যবসায়ীদের অবস্থাও নাজুক ছিল। আমাদের বেশিরভাগ উদ্যোক্তার বয়স ৩৫ বছরের নিচে। তাই এই সময়ে তারুণ্যের উদ্যোমে তাদের হাত ধরে সফলতা আসবেই। আইসিটি খাতে নিত্যনতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক ভাইয়ের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ স্লোগানকে বাস্তবায়ন করতেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমাদের মধ্যে থেকে ২৮ জন উদ্যোক্তা প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনের কাজ শুরু করেছেন।

ব্র্যাক ব্যাংকের সাথে এই চুক্তির কারণে উদ্যোক্তারা ভরসা পাবেন উল্লেখ করে বিসিএস সভাপতি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

মৈত্রী/ এএ

শেয়ার করুন: