অচল গাড়িতে পথের ধারে প্রতিবন্ধী স্ত্রীকে নিয়ে ভূমিহীন মনছুরের সংসার
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: মানসিক ভারসাম্যহীন প্রতিবন্ধী স্ত্রীকে নিয়ে অচল প্রায় একটি অটোরিকশার মতন গাড়িতে পথের ধারে রাত্রি যাপন করেন ভূমিহীন মনছুর আলী। মনছুর আলীর বাড়ি কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের দেওয়ানের খামার গ্রামে।
বছর কয়েক আগে ধারদেনা করে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকায় তৈরি করেছিলেন অটোরিকশার আদলে তিন চাকার এক গাড়ি। চালকের আসনের পাশে ভারসাম্যহীন স্ত্রীকে বসিয়ে সেই গাড়িতে যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে সংসার চালানোর চেষ্টা করেন তিনি। সময়ের পরিবর্তনে গাড়িটি আজ অচল প্রায়। যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের পথ পাড়ি দিতে না পারলেও অচল গাড়িটি ঝড়-বৃষ্টি আর শীতের রাতে মনছুর-মরিয়ম দম্পতির একমাত্র আশ্রয়স্থল। গাড়ির তিনদিক আর উপরের অংশ পলিথিন কাগজ, কাঠ আর জং ধরা টিন দিয়ে ঘেরা। সামন দিকে ঝুলে আছে সস্তা দামের সামান্য কিছু খেলনা, বিস্কুট আর চানাচুর। প্রথম দেখায় মনে হবে একটি ভ্রাম্যমান দোকান। ভালো করে না দেখলে ভুলই ভাঙবে না। জরাজীর্ণ এই গাড়ির ভিতরে বসবাস করেন মনছুর আলী ও তার প্রতিবন্ধী স্ত্রী মরিয়ম আক্তার।
মনছুর আলীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তাঁর কোনো জায়গা-জমি নেই এমনকি ঘর-বাড়িও নেই। আগে তিন চাকার অটো রিকশার মতো একটি গাড়ি চালাতেন। স্ত্রী মরিয়ম আক্তার মানসিক ভারসাম্যহীন। একাএকা থাকতে পারেন না। তাই গাড়ির চালকের আসনের পাশে স্ত্রীকে বসিয়ে যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে আয়-রোজগারের চেষ্টা করেন। মানসিক ভারসাম্যহীন স্ত্রীর কারণে গাড়িতে যাত্রীরা তেমন উঠতে চাইত না। রোজগারের আশায় গাড়িতে করে বিস্কুট চানাচুর নিয়ে পথে পথে ঘুরে ফেরি করে বিক্রি করা শুরু করেন। আর রাত্রি নেমে এলে গৃহহীন মনছুর স্ত্রী সহ পথের ধারে গাড়িতেই রাত কাটান। জাতীয় পরিচয় পত্র সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সরকারি কোনো সহায়তাও পাননি তিনি। একমাত্র সম্বল অচল গাড়িতে দেয়া দোকানটাই। দোকানেও তেমন বেচা-বিক্রি হয় না। প্রতিবন্ধী স্ত্রীর কান্নাকাটি শুনে পথচারীরা সহায়তার হাত বাড়ালে খাবার জোটে। না হলে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটে মনছুর ও তার স্ত্রীর। মানসিক ভারসাম্যহীন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মরিয়ম আক্তারের জাতীয় পরিচয় পত্রটি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার। তার একটি প্রতিবন্ধী কার্ড আছে। তবে পরিচয় পত্র জটিলতার কারনে তারও প্রতিবন্ধী ভাতা পেতে বিলম্ব হচ্ছে।
মনছুর আলী জানান, সরকার অথবা দেশের দানশীল বিত্তবান ব্যক্তিরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই ও গাড়িটি মেরামতের ব্যবস্থা করে দিলে দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে পরে বাঁচতে পারতাম।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা জামাল হোসেন জানান, মনছুর আলীর স্ত্রী যাতে দ্রুত প্রতিবন্ধী ভাতা পায় সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ঘর প্রদানের জন্য মনছুর আলীর নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
গত কয়েক মাস যাবত উপজেলা চত্বরের রাস্তার পাশে গাড়িতেই রাত্রিযাপন করতে দেখা যাচ্ছে মনছুর-মরিয়ম দম্পতিকে।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
মৈত্রী/এফকেএ/এএ