লামায় পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং

মো. নুরুল করিম আরমান, লামা প্রতিনিধি

বান্দরবান : টানা চার দিনের বর্ষণের ফলে বান্দরবানের লামা উপজেলায় পাহাড়গুলোর উপরিভাগের মাটি নরম হয়ে ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এর ফলে যেকোন মূহুর্তে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটে প্রাণহানি ঘটতে পারে, এমন আতঙ্কে দিন পার করছেন সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকার বিভিন্ন পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশে বসবাসরত হাজারো মানুষ। গেল বছরগুলোর বর্ষা মৌসুমে প্রবল বর্ষণের ফলে ব্যাপক হারে পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে বিধায় এ বছর যেন এর পূণরাবৃত্তি না ঘটতে পারে, সেজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে আগাম প্রস্তুতি। এর অংশ হিসেবে প্রশাসনের নির্দেশে মাইকিং এর মাধ্যমে পাহাড়ে অবস্থানরত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে সরে যেতে তাগাদা দিচ্ছে তথ্য অফিস।

তবে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হলেও, কিছু পরিবার নিরাপদে কিংবা আত্বীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও বেশিরভাগই সরে যাচ্ছেনা। লামা পৌরসভা এলাকা. লামা সদর, গজালিয়া, রূপসীপাড়া, সরই, আজিজনগর, ফাঁসিয়াখালী ও ফাইতং ইউনিয়নে সাড়ে ৪ হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাস করছে বলে জানান স্থানীয়রা।

এদিকে বর্ষণের কারণে উপজেলার পাহাড়ি ঝিরি, খাল ও মাতামুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকার মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকিতে আতংকে আছেন ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীরা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শনিবার পর্যন্ত টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকলেও কোন দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দীন কোম্পানী ও রুপসীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছাচিংপ্রু মার্মা জানান, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে মাইকিং ও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের মাধ্যমে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার জন্য তাগাদা দেয়া হয়েছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমেও সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয় নিতে পারবেন বলেও জানান তারা। একই কথা জানালেন ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ও লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেনও।

এদিকে পৌরসভা এলাকায় যারা পাহাড়ে কিংবা সমতলে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য ও সতর্ক থাকতে রেড় ক্রিসেন্ট সদস্যদের মাধম্যে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তাগাদা দেওয়ার পাশাপাশি সব ধরণে দুর্যোগ মোকাবেলায় পৌসরভা প্রস্তুত আছে বলে জানান পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ হোসেন বাদশা। পাহাড়ে চূড়া ও পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারী পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরে যেতে ও সতর্ক অবস্থায় থাকতে শুক্রবার থেকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করা হচ্ছে বলে জানান, সহকারী তথ্য অফিসার খন্দকার তৌহিদ।

মাইকিংয়ের মাধ্যমে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণদের নিরাপদে সরে যেতে ও সতর্ক থাকতে বলার সত্যতা নিশ্চিত করে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ে ঝুঁকিপুর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেও তাগাদা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে খেলা রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যাতে দূর্যোগকালীণ সময়ে মানুষ সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন।

মৈত্রী/এফকেএ/এএ

শেয়ার করুন: