স্থানীয়দের জীবনে আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে ডিজিটাল সেন্টার: পলক

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক

কক্সবাজার : ডিজিটাল উদ্ভাবনের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনশীলতা, ভূমি-ভিত্তিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য নিরাপত্তা, গ্রামীণ কৃষকদের আয় এবং গ্রামীণ পরিবারের জীবন-জীবিকার উন্নয়নে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এলক্ষ্যে স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত সবজি উৎপাদন ও বিক্রির কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এর ডিজিটাল ভিলেজ সেন্টারের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করতে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের তুলাতলী ডিজিটাল ভিলেজ সেন্টার পরিদর্শন করেছেন তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, এমপি। ডিজিটাল তুলাতলী ভিলেজ কাম আগ্রিগেশন সেন্টার পরিদর্শন শেষে এটুআই ও এফএও কর্তৃক শুক্রবার আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় অংশ নেন তিনি। এ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজার জনাব আনীর চৌধুরী এবং এফএও বাংলাদেশ-এর ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ জনাব এশোনভ বাখোদুর উপস্থিত ছিলেন।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহে্‌মেদ পলক এমপি বলেন, কৃষি প্রযুক্তি আধুনিকায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী কৃষি অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে গ্রামগুলোকে উন্নত করতে সরকার এটুআই এবং ‘আমার গ্রাম আমার শহর’-এর মতো মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটুআই-এর ডিজিটাল সেন্টার এবং এফএও এর ডিজিটাল ভিলেজ সেন্টার-এর সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী ইকোসিস্টেম গঠন করে প্রান্তিক মানুষ এবং কৃষকদের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। প্রান্তিক ও গ্রামীণ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এটুআই-এর একশপ এবং একপে এর অবদান এর উল্লেখ করে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে সাড়ে ৮ হাজার ডিজিটাল সেন্টার থেকে প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগণ ৬১ কোটিরও বেশি সেবা গ্রহণ করেছেন। ডিজিটাল ভিলেজ সেন্টার কৃষক ও কৃষি পণ্য উৎপাদকের সাথে বাজারকে যুক্ত করবে। এতে দূর-দুরান্তের বাজারে পণ্য আনা-নেওয়ায় কৃষক এবং বিক্রেতাদের যে পরিমাণে অর্থ এবং সময় ব্যয় হতো তার অনেক সাশ্রয় হবে। এতে কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য পাবেন। এছাড়া, ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে প্রত্যন্ত গ্রামের জনগণ ইন্টারনেট এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই চাকুরি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, স্বাস্থ্য ও আর্থিক সেবা সহজেই পাবেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজার জনাব আনীর চৌধুরী বলেন, ইউনিয়ন পর্যায় থেকেই ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এখন গ্রামীণ পর্যায়ের জীবনমান উন্নয়নে প্রান্তিক জনগণের কাছে সরকারের বিভিন্ন সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য আমাদেরকে ডিজিটাল ভিলেজ সেন্টারগুলোকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। এলক্ষ্যে এফএও-এর মতো বেসরকারি সংস্থাগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে কাজ করতে পারে।

কৃষি খাতের টেকসই উন্নয়ন জোরদার করার পাশাপাশি সরবরাহ ও চাহিদার সমন্বয়ে কৃষি উৎপাদনশীলতা বাড়াতে তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে এফএও বাংলাদেশ-এর ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ জনাব এশোনভ বাখোদুর বলেন, স্যাটেলাইট ইমেজ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগডাটা, ব্লকচেইন প্রযুক্তি, আইওটি, রোবোটিক্স, ক্লাউড কম্পিউটিং এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিখাত সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। যা বৈরি আবহাওয়া, মাটির আর্দ্রতা পর্যবেক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য বিষয়ে স্থানীয় কৃষকদের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র কৃষকদের ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং আর্থিক সেবায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য ডিজিটাল ভিলেজ সেন্টার ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়নে কাজ করছে এফএও। এফএও-এর ডিজিটাল ভিলেজ সেন্টার গ্রামীণ কৃষকদের উৎপাদন বাড়ানো এবং এসব উৎপাদিত পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রির মাধ্যমে ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং বৈষম্যের মোকাবেলা করতে সহায়তা করবে।

উল্লেখ্য, বরিশাল, রংপুর ও কক্সবাজারে মোট ৬০টি ডিজিটাল ভিলেজ সেন্টারের মাধ্যমে কৃষিপণ্য উৎপাদন থেকে বিতরণ পর্যন্ত সকল পর্যায়ে সহায়তা প্রদান করছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মো. নাসিম আহমেদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কক্সবাজার এর উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) জনাব আশিষ রঞ্জন নাথ, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব ইমরান হোসাইন সজীব, এটুআই-এর হেড অব ই-কমার্স জনাব রেজওয়ানুল হক জামি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কৃষক এবং কৃষি উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্টরা ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মৈত্রী/এফকেএ/এএ

শেয়ার করুন: