সীমান্তে মিয়ানমার বাহিনীর গোলাগুলি: আতংকে শ্রমিক ও স্থানীয়রা
রশিদ আহামদ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
বান্দরবান : মিয়ানমার সীমান্তে শতশত শ্রমিক আতংকে সড়কের কাজ কাজ বন্ধ রেখে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। তারা দু’দফা কাজ বন্ধ রাখে। প্রথম দফা গত ২৫ দিন আগে আর দ্বিতীয় দফায় বুধবার থেকে কাজ বন্ধ করে দেন। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে মূখ না খুললেও একাধিক শ্রমিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এ প্রতিবেদককে।
শ্রমিক সিরাজুল, রফিক, শহীদুল্লাহ ও লাবে তংচঙ্গা বলেন, তারা দীর্ঘ দিন এ সড়কে কাজ করছেন। মাসের পর মাস কাজ করলেও হঠাৎ বর্মী বাহিনী তথা মিয়ানমার বাহিনী ভারী অস্ত্রের গোলাগুলি ও মর্টারশেলের গুলির আওয়াজ তাদেরকে আতংকিত করে। হেলিকপ্টার ঘুরে তাদের মাথার উপর। গোলাও ছুঁড়ে এ হেলিকপ্টার থেকে। তারা মনে করেন, যে কোন সময় গুলি বা মর্টার শেল এসে তারা হতাহত হতে পারে। এ কারণে তারা দীর্ঘ ২০/২৫ দিন আগে তারা মিয়ানমার সীমান্ত সড়কের কাজ বন্ধ রেখে নিরাপদে চলে এসেছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ের তুমরু এলাকার একাধিক শ্রমিক এ প্রতিবেদককে জানান, বুধবার ( ৩১ আগষ্ট) সীমান্ত রাস্তা শ্রমিকদের কে ফিরে যেতে বলেন তাদের কতৃপক্ষ। আর তারাও ভয়ে কাতর। দৈব্যক্রমে কোন-বারুদ তাদের গায়ে পড়ে তা হলে বড় বিপদ। তাই তারাও ভেবেছেন কাজ বন্ধ রেখে নিরাপদে চলে আসা। তাই ফিরে এসেছেন নিরাপদে। গোলাগুলি বন্ধ হলে আবারো কাজে ফিরবেন তারা।
অপর একটি সূত্র আরো জানান, ঘুমধুমের তুমরু, রেজু আমতলী, বাইশফাঁড়ি, তুইঙ্গাঝিরি, গর্জনবুনিয়া ও রেজু পাড়া সহ ঘুমধুমেন ১৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দীর্ঘ ১২ দিন ধরে মিয়ানমার বাহিনী তাদের বিদ্রোহী আরকান আর্মিদের দমনে গোলাবর্ষণ করছে। হেলিকপ্টার নিয়েও এ গোলা বর্ষণ করে শেষে দিকে। একই সাথে মর্টারশেল ও নিক্ষেপ করে তারা। যার সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ টি অধিক হতে পারে। এর মধ্যে ৩ টি মর্টারশেল উত্তর তুমরু গ্রামের মসজিদের আঙ্গিনা ও বসতবাড়িতে পড়ে। তারা আরো জানান, সীমান্তের এ পয়েন্টে হেলিকপ্টার থেকে গোলা বর্ষণের সাথে বিদ্রোহীদের আস্তানা শনাক্তে ড্রোন ব্যবহার করছে মিয়ানমার বাহিনী। শনাক্তের পর সে দেশের বিদ্রোহী আরকান বাহিনীর ঘাঁটি ধ্বংস করতে পারে। কিন্তু আস্তানার সন্ধান না পেয়ে তারা পুরো ১৬ কিলোমিটার এলাকায় গোলা বর্ষণ করতে থাকে আর মর্টারশেল নিক্ষেপ করে যাচ্ছে মিয়ানমারের সরকারী বাহিনী। যা অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে মিয়ানমার।
নাইক্ষ্যংছড়ির রেজু গর্জনবুনিয়া সীমান্তে চেয়ারম্যান বাগানে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার থেকে গোলা এসে পড়েছে মিয়ানমার থেকে গোলাবর্ষনের আওয়াজ সবর্ত্র তোলপাড় সৃষ্টি হলে প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। রাষ্ট্রিয়ভাবে প্রতিবাদ করে। যার কারণে তারা ভাবছিলো মিয়ানমার বাহিনী গোলাগুলি বন্ধ করে দিবে। কিন্তু মিয়ানমার বাহিনী তা কর্ণপাত না করে সারাদিন সীমান্তে মর্টার শেল নিক্ষেপ করে।
বাগান মালিক স্থানীয় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ বলেন, মিয়ানমারের একটি হেলিকপ্টার কয়েক দফা তার বাগান ও আশপাশে টহল দিয়ে দিচ্ছেন এবং কিছুক্ষণ পর পর গোলাবর্ষণ করে যারা কারণে এলাকাবাসী আতংকিত হয়ে ছুড়াছুড়ি করে নিরাপদ স্থানে চলে আসেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন, যেন এ ধরণের ঘটনা আর না ঘটে কিন্তু এর পর ও সীমান্তের রেজু গর্জনবুনিয়া পয়েন্ট সহ বিভিন্ন পয়েন্ট গোলাগুলির ঘটনা ঘটানোর কারণে স্থানীয়দের মাঝে নতুন করে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বিজিবি কতৃপক্ষের কাছে বক্তব্য নিতে বারবার চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়নি। শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর);সকালেও মিয়ানমার বাহিনী দফা দফা মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে গোলাগুলি করে দীর্ঘ ১ ঘন্টা।
ঘুমধুম ইউপি মেম্বার আবুল কালাম জানান, গোলাগুলির শব্দে সীমান্ত এলাকার সকল কাজকর্ম বন্ধ। কারণ শ্রমিকরা কাজ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তারা রিক্স মনে করেছে। কেননা কখন এসে তাদের হতাহত করে এ ভয়ে। আর মালিক পক্ষও রিক্স নিচ্ছে না।এর আগে ও গোলাগুলির শব্দে ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলার এলাকায় বসবাসরতদের মাঝে আতংক বেড়ে যাওয়া মানুষ রাতে অন্যত্র আশ্রয় নেন।
তিনি নিশ্চিত করেছেন,বৃহস্পতিবার সারা দিন ৩৯ নম্বর ও ৪০ নম্বর পিলার এলাকা সহ ঘুমধুম সীমান্তের সর্বত্র মিয়ানমার বাহিনী সীমান্ত ঘেষা আরকান বাহিনীর উপর হামলা চালায়। তবে তিনি হতাহতের কোন সংবাদ জানাতে পারে নি।
তিনি আরো বলেন, এদিকে ৩ সেপ্টেম্বর ভোর থেকে মায়ানমার সরকারের বাহিনী আবারও এলোপাতাড়ি গুলি করে হেলিকপ্টার থেকে। পাশাপাশি জংগী বিমান ও টহল দিতে দেখা যায়। এনিয়ে আবারও সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গ্রুপ এর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়।
মৈত্রী/এফকেএ/এএ