বান্দরবান জেলা পরিষদের অনুদান বিতরণ অনুষ্ঠানে পার্বত্য উপদেষ্টা
আর্ত সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় হবে অর্থ বরাদ্ধের ৪০ শতাংশ
আলাউদ্দিন আলিফ, দৈ.স.মৈ: পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন,টেন্ডারের সংস্কৃতি থেকে বের করে পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড এবং জেলা পরিষদগুলোকে অর্থ ব্যয় পরিকল্পনা পরিবর্তন করে আর্ত সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রোগ্রামে ৪০ শতাংশ, শিক্ষায় ২০, প্রকৌশলে ২০ এবং স্বাস্থ্য ও অন্যান্যতে ২০ শতাংশ অর্থ ব্যয় পরিকল্পনা করা হয়েছে। সদস্যরা ভুক্তভোগীদের সমস্যা সমাধানে এই বাজেট পরিকল্পনা মাথায় রেখে কাজ করবেন বলে আমি আশাবাদী।
২০ জুলাই রবিবার বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে জেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষক ও নারীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ফলদ ও বনজ চারা, গবাদি পশু, সেলাই মেশিন ও গর্ভবতী/ প্রসূতি মহিলা ও নবজাতক শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষে অনুদান বিতরণের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন,৪ লাখ ৯ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ১ লাখ ১২ হাজার মানুষ অতীব দরিদ্র যা মোট জনসংখ্যার ২৮ থেকে ৩০ শতাংশ। খাগড়াছড়িতে ১ লাখ ৮ হাজার এবং রাঙ্গামাটিতে ৯০ হাজার। জনসংখ্যা হিসেবে বান্দরবান সবচেয়ে পিছিয়ে। এই অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে সরকারের বিশেষ নজর রয়েছে। আপনারা আমাকে পরিকল্পনা দেন। কীভাবে সরকার থেকে অর্থ সংগ্রহ করবো সেই দায়িত্ব আমার। গত অর্থবছরের হিসেব নিকেশ অনুসারে এবার আমাদের বাজেটে ১৩০ কোটি টাকা কম বরাদ্ধ প্রদান করা হয়েছিল। অনেক দেন দরবার করে আমরা ১০০ কোটি টাকা পেয়েছি আরো কিছু টাকা আমাদের পাওয়ার কথা রয়েছে। সরকারের কারণে আমাদের বাজেট কমছে না, অর্থ পরিকল্পনার বরাদ্ধের টাকা পরিপূর্ণভাবে ব্যয় করতে না পারার কারণে কমছে। উন্নয়ন বোর্ডের টাকা ফেরত দেয়ার কারণে আজ আমরা এই প্রোগ্রাম করতে পেরেছি। জেলা পরিষদ চাইলে আমরা ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত দিতে পারতাম কিন্তু চেয়েছে মাত্র ৬ কোটি টাকা। আপনারা নিবেন না কেন? পরিকল্পনা করেন এবং আমাদের থেকে নেন।
১৫ কোটি টাকা দিতে চেয়ে না দিতে পারার আক্ষেপ প্রকাশ করে পার্বত্য উপদেষ্টা বলেন, চলতি বছরের মে মাসে আমরা উন্নয়ন বোর্ড থেকে ৫৮ কোটি টাকা ফেরত পেয়েছি। এই টাকা থেকে ক্যাটাগরি করে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনারা কত টাকা নিবেন? তারপরেও আমি বলেছিলাম আপনারা ১৫ কোটি টাকা নেন। আপনারা নিতে পারেন নাই। প্রকল্প করে আপনাদের নিতে অসুবিধা কোথায়?
জেলা পরিষদের সদস্যদের আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, আজকে আপনারা ২১০০ জনকে অনুদান বিতরণ করছেন। এটা ৪২০০ হলে কী অসুবিধা ছিল? ১০ কোটি টাকা নিতেন। অনুগ্রহ করে আপনারা চেয়ারম্যান মহোদয়কে সহযোগিতা করুন। আপনারা দাবি দাওয়া তুলে ধরুন। চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে অবগত করবেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বাজেটের টাকা ফেরত দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে উপদেষ্টা বলেন, উন্নয়ন বোর্ড কফি কাজু বাদাম প্রকল্পে ২১ কোটি টাকা, তুলা উন্নয়ন প্রকল্পে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকাসহ প্রায় ৮৩ কোটি টাকা অর্থবছরের বরাদ্ধ থেকে ফেরত দিয়েছে। এই টাকাগুলো এখানে যারা অনুদান নিতে এসেছেন তাদের জন্য ছিল। মঞ্চে উপবিষ্টরা পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারে নি বলে যাদের অভাব ছিল তারা বঞ্চিত হলো। অনুগ্রহ করে এই ধরণের কাজ আপনারা করবেন না।
বান্দরবান নিয়ে কটুক্তির জবাবে দৈনিক সচিত্র মৈত্রীর প্রধান সংবাদ ‘বান্দরবান হবে নাগরিক পার্টির শক্তিশাল ঘাঁটি’ উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আপনাদের উপহারতো আপনারা পেয়ে গেছেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের উপস্থিতি পার্বত্য চুক্তি নিয়ে সরকারের কাজ করার একটি দৃষ্টান্ত। ২৭ বছরে যা বাস্তবায়ন হয়নি সেটা এক বছরেই আমরা করে ফেলবো এমনটা আশা করবেন না। শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে এটাই আসল কথা।
কৃষি বিভাগকে সংশ্লিষ্ট করে চারা রোপণ থেকে শুরু করে পরিচর্যাসহ যাবতীয় ব্যাপারে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়ে সুপ্রদীপ বলেন, একটি পাতা ঝড়ে গেলে তা কি কারণে ঝড়েছে তা জানতে কৃষি কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেন। তারা আপনাদের সহযোগিতা করতে সবসময় প্রস্তুত রয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকায় শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বর্তমান সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ভিত্তি হিসেবে অভিহিত করেন।
সভাপতির বক্তব্যে বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই বলেন, উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে পার্বত্য এলাকায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হচ্ছে। প্রান্তিক জনগণের কাছে আগের চেয়ে অধিক সেবা পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি, পুলিশ সুপার শহীদুল্লাহ কাওছার, পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, জেলা পরিষদের সদস্য আবুল কালাম, লাল জারলম বম, বান্দরবান প্রেসক্লাব সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু, সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং উপকারভোগী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বান্দরবানের ৪৮২ জন দরিদ্র কৃষক ও নারীদের মাঝে প্রয়োজনীয় উপকরণ বিতরণ করেন। ফলদ ও বনজ চারা, গবাদি পশু, সেলাই মেশিন এবং প্রসূতি নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নগদ অনুদান প্রদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
মৈত্রী/এএ