স্মার্টফোনের ডায়ালপ্যাডের ডিজাইন যে কারণে বদলে গেল
বিএনএ, ঢাকা : অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন তাদের ফোনে ডায়াল প্যাড পরিবর্তনের কথা জানিয়ে। বেশিরভাগই জানিয়েছেন নতুন প্যাড বিরক্ত লাগছে, আগেরটাই ভালো ছিল। তবে পরিবর্তনের কারণে সুবিধাগুলো জানলে তারা অবাক হবেন।
এন্ড্রয়েড সেটে গুলল সর্বাধুনিক ‘মেটেরিয়াল থ্রি এক্সপ্রেসিভ’ ডিজাইনের মাধ্যমে পুরো ইন্টারফেসে এ পরিবর্তন এনেছে। দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর পর এবার ভার্সন ১৮৬–এর মাধ্যমে নতুন নকশাটি উন্মুক্ত করা হয়েছে বিশ্বের সব ব্যবহারকারীর জন্য।
আগে প্রিয় নম্বর (ফেভারিটস) এবং সাম্প্রতিক কল (রিসেন্টস)-এর জন্য আলাদা পৃষ্ঠা ছিল। কিন্তু এখন সেগুলোকে একত্র করে আনা হয়েছে এক নতুন ‘হোম পেজে’।
এই পৃষ্ঠার একেবারে ওপরে থাকবে আপনার স্টার দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ নম্বরগুলো।
এগুলো থাকবে একটি স্লাইডার বা ক্যারোসেল আকারে। ফলে আঙুলের হালকা স্পর্শেই এক কন্টাক্ট থেকে আরেকটিতে চলে যেতে পারবেন।
এর নিচে থাকবে কলের তালিকা। প্রতিটি কল বা কথোপকথন এখন রাখা হয়েছে কার্ডের মতো আলাদা বাক্সে। যা দেখতে আকর্ষণীয় এবং খুঁজে পাওয়াও সহজ।
এভাবে হোমে প্রিয় যোগাযোগ ও কল হিস্ট্রি দুটোই একসাথে থাকায় ব্যবহারকারীরা আরও দ্রুত প্রয়োজনীয় নম্বরে পৌঁছাতে পারবেন।
নতুন নকশার কীপ্যাড
ফোন নম্বর ডায়াল করার কীপ্যাড এখন নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। আগের মতো ভাসমান কল বাটন (ফ্লোটিং অ্যাকশন বাটন) আর থাকবে না। এর পরিবর্তে, অ্যাপের মধ্যবর্তী পাতায় সরাসরি থাকবে কীপ্যাড।
নাম্বার লেখার প্যানেল বা শিট এখন আরও গোলাকার ও আধুনিক আকারে তৈরি হয়েছে। ভয়েস মেইল অংশে বড় কোনো পরিবর্তন না এলেও এর তালিকার ধরনে এনেছে নতুন ছোঁয়া।
কন্টাক্ট নম্বর খোঁজা আরও সহজ
এখন কন্টাক্ট নম্বর বা যোগাযোগের তথ্য খুঁজে পাওয়ার পদ্ধতিতেও এসেছে নতুনত্ব।
আগে যেখানে কন্টাক্টের জন্য আলাদা ট্যাব ছিল, এখন সেটি সার্চ ফিল্ড থেকে ড্রয়ার মেনু আকারে আনা হয়েছে।
এই ড্রয়ার থেকেই সহজে পাবেন সেটিংস, কল হিস্টরি মুছার অপশন, সহায়তা ও প্রতিক্রিয়া এবং কন্টাক্ট তালিকা।
ফলে এক ক্লিকেই গুরুত্বপূর্ণ সব অপশনে পৌঁছানো যাবে।
ইনকামিং কল স্ক্রিনে নতুন ফিচার
এখন থেকে ফোনে কল এলে গ্রহণ বা বাতিল করার জন্য ব্যবহারকারীরা বেছে নিতে পারবেন দুটি নতুন পদ্ধতি—
১. আড়াআড়ি সোয়াইপ (আঙুল সরিয়ে নেওয়া)
২. এক ট্যাপেই গ্রহণ বা বাতিল
এই সুবিধাটি চালু বা বন্ধ করা যাবে নতুন “ইনকামিং কলের” মেনু থেকে।
ফলে, পকেট থেকে ফোন বের করার সময় ভুল করে কল কেটে যাওয়া বা রিসিভ হয়ে যাওয়া—এই সাধারণ সমস্যাটি অনেকটাই কমে যাবে।
কল চলাকালীন অভিজ্ঞতা আরও উন্নত
কলের সময়কার স্ক্রিনেও এসেছে বড়সড় পরিবর্তন। এখন থেকে কল কেটে দেওয়া, মিউট, স্পিকার চালু করা—সব বাটনই ডিম্বাকার (পিল শেপ) করা হয়েছে।
যেকোনো বাটন নির্বাচন করলে সেটি গোলাকার আয়তক্ষেত্রে রূপ নেয়। কল কেটে দেওয়ার বাটনটি আগের চেয়ে অনেক বড় এবং চোখে পড়ার মতো করা হয়েছে।
যদিও দুই সিম ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন সিম থেকে কল হচ্ছে তা বোঝা আগের মতো সহজ নয়, এ নিয়ে কিছু ব্যবহারকারীর অসন্তোষ রয়েছে।
পুরো ইকোসিস্টেমে একীভূত নকশা
গুগল ফোনের এই নতুন মেটেরিয়াল থ্রি এক্সপ্রেসিভ নকশা শুধু ফোন অ্যাপেই সীমাবদ্ধ নয়।
একই ডিজাইন ইতিমধ্যেই গুগল কন্টাক্টস এবং গুগল মেসেজেস অ্যাপেও চালু হয়েছে। এর ফলে, পুরো গুগল ইকোসিস্টেমেই থাকবে একই ধরনের চেহারা ও অভিজ্ঞতা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই নতুন নকশা নিয়ে ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। অনেকে নতুন বাটনের ডিজাইন এবং এক ট্যাপেই কল রিসিভের সুবিধাকে বেশ প্রশংসা করেছেন।
তবে কন্টাক্টস অপশনটি আলাদা ট্যাব থেকে ড্রয়ারে নিয়ে যাওয়ায় কিছু ব্যবহারকারীর কাছে সেটি অস্বস্তিকর মনে হচ্ছে।
এছাড়া, অনেকেই হালকা থিম বা উজ্জ্বল ব্যাকগ্রাউন্ড চাইছেন। কিন্তু গুগল এখনো ডিফল্ট হিসেবে গাঢ় মোড বা ডার্ক থিমকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে।
গুগল ফোন অ্যাপের এই নতুন আপডেট শুধুই নকশার পরিবর্তন নয়, বরং ব্যবহারযোগ্যতা, দ্রুততা এবং সুবিধা—সবকিছুর সমন্বয়ে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে।
যারা এখনো আপডেট পাননি, তারা গুগল প্লে স্টোর থেকে গুগল ফোন অ্যাপের ভার্সন ১৮৬ ডাউনলোড করে দেখতে পারেন নতুন অভিজ্ঞতা।