গ্লোবাল এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২০: বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের নতুন আবির্ভাব

বেটার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এবং বিবিএফ গ্লোবাল এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ওয়েবিনার “গ্লোবাল এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২০”-এর পর্দা নামলো সম্প্রতি।

রোববার আয়োজিত এই ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম প্রমুখসহ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ।

বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের সামনে বৈশ্বিক বিনিয়োগের সুযোগকে আরো প্রসারিত করার এই সময়োপযোগী আয়োজনটির সভাপতিত্ব করেন বেটার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর মাসুদ এ. খান।

শীর্ষস্থানীয় সরকারী কর্মকর্তারা ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গও এ আলোচনায় অংশ নেন। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবার জন্য কোন কোন ধরণের কাঠামোগত পরিবর্তন আনা যায়, সে বিষয়ে তারা নিজেদের মতামত ও পরামর্শ জানিয়েছেন।

বিডা-এর এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান জনাব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশ আর সেই তলাবিহীন ঝুড়ি নেই।” শিল্পোদ্যোগকে উৎসাহিত করতে বিডা দেশের তৃণমূল পর্যায়ে যে উদ্যোগগুলো গ্রহণ করেছে এবং তার ফলে দেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা যে কত বেড়েছে তা আলোচনা করতে গিয়েই তিনি এমন মন্তব্য করেন।

যেহেতু বাংলাদেশ ক্রমেই তৈরি পোশাক শিল্প ছাড়াও বাণিজ্যের অন্যান্য খাতে রপ্তানি বাড়াবার চেষ্টা করছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই এটি অনুমেয় যে বিশ্ববাজারের দৃষ্টি আকর্ষণে আমাদের সময় ও আন্তরিকতা দু’টোই প্রয়োজন।

“সস্তায় শ্রমবাজার খুঁজতে এখন আর বাংলাদেশে আসলে চলবে না”, আলোচনায় এমনটাই অভিমত জানান ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জনাব শামস মাহমুদ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা এখন যেকোনো ধরণের ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠা করতে পারি এবং রিজিওনাল মার্কেটে দুর্দান্ত প্রতিযোগিতা চালিয়ে যেতে পারি।”

ওয়েবিনারে প্যানেলএক্সপি লিমিটেড এর লিড কনসালটেন্ট আসিফ জাহান বলেন, “এই মহামারীর কারণে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাপ্লাই চেইনের জন্য একটি বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেছে। পিআর এবং ব্র্যান্ডিং টেকনিকগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে বেটার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এবং সরকারী এজেন্সিগুলোর সহযোগিতায় আমরা বিভিন্ন আমেরিকান মাল্টিন্যাশনাল অরগানাইজেশনের সাথে তাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন ম্যাটেরিয়েলের ম্যানুফ্যাকচারিং পার্টনার হিসেবে কাজ করতে পারবো।”

নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করতে গিয়ে এফবিসিসিআই-এর সহ-সভাপতি জনাব সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশে এখন যেমন দক্ষ শ্রমশক্তি রয়েছে, ঠিক তেমনি বিভিন্ন শিল্পখাতে উদ্যোক্তাদের সংখ্যাও বেড়েছে। কিছু সীমাবদ্ধতা তো আছেই কিন্তু দুঃখজনক হলো, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো আমাদের ভালো দিকগুলো না দেখিয়ে শুধু সমস্যাগুলি নিয়েই ঘাঁটাঘাঁটি করে।”

“জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক মনোভাব দেখে আমি সত্যিই অভিভূত”, বললেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি। “প্রবাসী বাঙালিরাই বিদেশে আমাদের প্রতিনিধি এবং তারা যদি দেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের ব্যাপারে অবদান রাখতে চান, তবে আমার মন্ত্রণালয় প্রয়োজনে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা তাদের পাশে থাকবে।”

আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে বেটার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া পার্টনার, বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সরকারি সংস্থার সাথে সরাসরি কাজ করতে আগ্রহী।

আলোচনায় পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, এমপি বলেন, “আমাদের একটি কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে যেন পরবর্তীতে তার ফলাফল পরিমাপ ও বিশ্লেষণ করা যায়।”

পাশাপাশি, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর ডঃ আতিউর রহমান মনে করেন, কৃষকদের অবদানে দেশের যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে এবং তার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গত এক দশকে বাংলাদেশের সূচকের যে বৃদ্ধি ঘটেছে, সেটিকেও তুলে ধরতে হবে।

 

গুরুত্বপূর্ণ এই সামিটে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউ.এস বাংলাদেশ গ্লোবাল চেম্বার অফ কমার্স এর প্রধান জনাব আজিজ আহমেদ, বিবিএফ গ্লোবাল ইউএসএ এর প্রধান সমন্বয়ক জনাব রফিক খান, বিবিএফ গ্লোবাল ইউএসএ এর উপদেষ্টা জনাব সাজ্জাদ রশিদ, বিবিএফ গ্লোবাল ইউএসএ এর সমন্বয়ক জনাব দেলোয়ার খান, জনাব আরিফুর রহমান, বিবিএফ ইটালির প্রধান সমন্বয়ক জনাব জাকারিয়া কাজী, বিবিএফ মালয়েশিয়ার প্রধান সমন্বয়ক জনাব মাহবুব আলম শাহ, বিবিএফ জার্মানির প্রধান সমন্বয়ক জনাব আব্বাস চৌধুরী, বিবিএফ কাতার এর প্রধান সমন্বয়ক জনাব আশরাফ আজাদ, বিবিএফ ইউকে এর প্রধান সমন্বয়ক জনাব মঈন কাদরী, সাফিনা রহমান এবং পারভিন সুলতানা।

বিশ্বব্যাপী বেটার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের শক্তিশালী নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানো এবং এই লক্ষ্যের সাথে প্রবাসী বাঙালিদেরকে আরো সম্পৃক্ত করতে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ নেয়ার ব্যাপারে আলোচনায় সকল বক্তাই জোর দিয়েছেন।

বেটার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর মাসুদ এ. খান তাদের সহযোগী ও শুভাকাঙ্ক্ষী- বিবিএফ গ্লোবাল, চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ ও প্যানেলএক্সপি’কে তাদের অসামান্য অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে আয়োজনটির ইতি টানেন।

শেয়ার করুন: