বিসিএস এর আয়োজনে স্মৃতিচারণ ও দোয়া অনুষ্ঠিত

ঢাকা : বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) এর প্রাক্তন সভাপতি সাজ্জাদ হোসেনের স্মরণে বিসিএস এর আয়োজনে স্মৃতিচারণ ও দোয়া ১৩ অক্টোবর (মঙ্গলবার) রাত ৮টায় জুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিসিএস এর প্রাক্তন সভাপতি এবং তথ্যপ্রযুক্তিবিদ আব্দুল্লাহ এইচ কাফীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই স্মরণ সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিসিএস এর প্রাক্তন সভাপতি ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর, বিসিএস এর প্রাক্তন সভাপতি এস.এম কামাল, আব্দুল্লাহ এইচ কাফী, মো. সবুর খান, এস.এম ইকবাল, মোহাম্মদ ফয়েজুল্লাহ খান, মো. মইনুল ইসলাম, প্রাক্তন মহাসচিব মুনিম হাসান রানা, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আফতাব উল ইসলামসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং আইসল্যান্ড থেকে যোগ দিয়েছেন প্রয়াত সাজ্জাদ হোসেন এর পুত্র রনি হোসেন (রন)।

নব্বই এর দশকে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অন্যতম পথিকৃৎ বিসিএস এর প্রাক্তন সভাপতি সাজ্জাদ হোসেনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন,আশির দশকের শেষ দিকে আমরা বাংলাদেশ কম্পিউটার অ্যাসোসিয়েশন নামে আমাদের কার্যক্রম শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাংলায় নামকরণের জন্য আমরা বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি নামে যাত্রা শুরু করি। সাজ্জাদ ভাই আমাদের কঠিন কাজগুলোকে সহজ করে দিতেন। তাঁর নেতৃত্বগুণ অসাধারণ। তিনি দলের সদস্যদের মতামতকে গুরুত্ব দিতেন। তাঁর একান্ত প্রচেষ্টায় আমরা প্রথম কম্পিউটার মেলার সফল আয়োজন সম্পন্ন করতে পারি। কর্মক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন কর্মবীর। দেশের তথ্যপ্রযুক্তিখাতে তার অবদান ভুলবার নয়। আমি কৃতজ্ঞ চিত্তে তাঁর অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

বিসিএস এর ১৯৯৬ পরবর্তী দ্বিতীয় নির্বাচিত সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বলেন, ৯৭ সালে আমি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রথম কম্পিউটার বিষয়ক প্রোগ্রাম করি। বাংলাদেশে প্রথম কম্পিউটার নিয়ে আসেন হানিফ উদ্দিন মিয়া। সাজ্জাদ ভাই আমাকে হানিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন। বিসিএস বিভিন্ন সময় দেশে তথ্যপ্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য সম্মেলনের আয়োজন করে। সেসময় এই খাতে অবদান রাখা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সম্মানিত করা হয়। আমি চাই, সাজ্জাদ ভাইকে মরণোত্তর সংবর্ধনা দেয়া হোক। এছাড়াও বিসিএস এর প্রাক্তন সভাপতি, মহাসচিব এবং পরিচালকদের কাজগুলোকে উপস্থাপন করে একটি ডিজিটাল সুভ্যেনির করা হোক। এতে নতুন প্রজন্মরা দেশের তথ্যপ্রযুক্তিখাতকে সমৃদ্ধ করতে যাদের অবদান অনস্বীকার্য তাঁদের সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করতে সক্ষম হবে।

বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর বলেন, আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম তখন আমি টিকেট কেটে প্রথম কম্পিউটার মেলায় প্রবেশ করেছিলাম। তখন সাজ্জাদ ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল না। পরবর্তীতে বিসিএস এ এসে সাজ্জাদ ভাইয়ের কার্যক্রম আমাকে অনুপ্রাণিত করে। আজকের স্মরণসভায় বিসিএস এর প্রাক্তন নেতৃবৃন্দকে পেয়ে আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ‍কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সাজ্জাদ ভাই ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সেই সময়ের দূরদর্শী একজন বীর। তৎকালীন সময়ে বিজিএমইএ এর পাশাপাশি কম্পিউটার সমিতিকে প্রতিষ্ঠিত করার যে চ্যালেঞ্জ তিনি গ্রহণ করেছিলেন তার সুফল এখন দৃশ্যমান। এখনকার প্রজন্মদের সাজ্জাদ ভাইদের কাছে অনেক কিছু শেখার আছে। আমরা বিসিএস থেকে প্রাক্তন কার্যনির্বাহী কমিটিগুলোর গৌরবময় কর্মপ্রয়াস নিয়ে একটি সুভ্যেনিরের কাজ শুরু করেছি। আশা করছি শিগগিরই এই ডিজিটাল সুভ্যেনির তৈরির কাজ সম্পন্ন করবো।

বিসিএস এর প্রাক্তন সভাপতি এস.এম কামাল বলেন, সাজ্জাদের সাথে আমার বন্ধুত্ব অনেক পুরানো। ৬১ সালে আমরা নটরডেম কলেজে একসঙ্গে পড়তাম। সে অসম্ভব মেধাবী একজন শিক্ষার্থী ছিল। ১৪ বছর বয়স পূর্ণ না হওয়াতে প্রথম বছর এসএসসি পরীক্ষা দিতে না পেরেও পরের বছর সে বোর্ডে মেধা তালিকায় সপ্তম এবং এইচএসসি পরীক্ষায় ১১তম স্থান অধিকার করেন। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বিসিএস এ আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। তাঁকে হারিয়ে আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি একজন অভিভাবককে হারালো। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি নর্থ বেঙ্গল প্রিন্টিং মিলে চাকরি করেন। পরবর্তীতে তিনি আইবিএম এ জয়েন করেন। পারিবারিক জীবনে তিনি তাঁর স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতেন। প্রতিদিন তিনি বালিশের নিচে একটি করে স্ত্রীর জন্য চিঠি লিখে রেখে আসতেন।

প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আফতাব উল ইসলাম বলেন, সাজ্জাদ হোসেনরা বারবার জন্ম নেন না। তিনি ক্ষণজন্মা এবং প্রতিভাবান ছিলেন। এরচেয়েও যে বিষয়টি আরো বেশি মুগ্ধ করার মতো ছিল, তা হলো তাঁর সততা। আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে সাজ্জাদ হোসেনের অবদান সারা জীবন মনে রাখবে।

স্মৃতিচারণ সভায় প্রাক্তন সভাপতি মো. সবুর খান বলেন, ২০০২ সালে আমি যখন বিসিএস এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলাম, তখন সাজ্জাদ ভাই আমার আমন্ত্রণে বিসিএস আয়োজিত প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। আমাদের অগ্রজদের কাছে আমরা সব সময় দিক নির্দেশনা পেয়েছি। এটাই বিসিএস এর সৌন্দর্য্য। সাজ্জাদ ভাইয়ের নেতৃত্ব প্রশংসনীয়। আমরা সাজ্জাদ ভাইয়ের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।

বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ১৯৮৪ সালে আমার প্রথম কম্পিউটারের সাথে পরিচয় হয়। ১৯৮৯ এ প্রথম চাকরিতে জয়েন করি। তখন কাফি ভাই আমার বস ছিলেন। সাজ্জাদ ভাইয়ের সাথে কাজ করার সুযোগ আমার হয়নি। ২০০৬ সালে সাজ্জাদ ভাই আইবিএম এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ছিলেন। তাঁর মেধাতে দেশের তথ্যপ্রযুক্তিখাত সমৃদ্ধ হয়েছিল। আমরা সাজ্জাদ ভাইয়ের কর্মজীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবো। তিনি বাংলাদেশের প্রযুক্তি ব্যবসায় খাতের দিকপাল। কম্পিউটার আন্দোলনে তিনি অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেন।

সভার শেষে দোয়া পরিচালনা করেন ম্যাক সিস্টেম সল্যিউশন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর হোসেন। স্মৃতিচারণ ও দোয়া অনুষ্ঠানে বিসিএস সহসভাপতি মো. জাবেদুর রহমান শাহীন, মহাসচিব মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মো. মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন, পরিচালক মো. রাশেদ আলী ভূঁঞাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন: