লামায় শ্যালককে মামলা দিয়ে হয়রানির করছেন ভগ্নিপতি

লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি

বান্দরবান : লামা উপজেলায় জমি দখলে নিতে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ তুলে হামলা ও আদালতে মামলা করে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কুমারী এলাকার বাসিন্দা আমির হামজার ছেলে শাহাদাত কবির ভগ্নিপতি রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন। শুধু তাই নয়, নানা কুপরামর্শ দিয়ে শ্বশুর আমির হামজার জমি বিক্রি করাতে বাধ্য করে সমুদয় টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেন রুহুল আমিন। শাহাদাত কবির ও রুহুল আমিন সম্পর্কে শ্যালক দুলাভাই। ষড়যন্ত্র ও জমি রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অসহায় শাহাদাত কবির ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা।

অভিযোগে জানা যায়, বৃদ্ধ আমির হামজার যথাক্রমে শাহাদাত কবির, আহমদ কবির ও নুরুল কবির নামের তিন ছেলেসহ ১০ সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর বোন রাজিয়া বেগমকে শাহাদাত কবিরের নামীয় জায়গায় ঘর বেঁধে থাকতে দেয়া হয়। কিন্তু রুহুল আমিন শুরু থেকে আমির হামজার পরিবারের সদস্যদের ভুল বুঝিয়ে সাজানো সংসারে ফাটল ধরিয়ে দেন। শুধু তাই নয়, নানা কুপরামর্শ দিয়ে আমির হামজার নামীয় ফাঁসিয়াখালী মৌজার ৪২০নং হোল্ডিং এর ৩ একর জমি বিক্রি করাতে বাধ্য করে; পরে বিক্রিত জায়গার সমুদয় টাকা আমির হামজার কাছ থেকে রুহুল আমিন কৌশলে হাতিয়ে নেন। পরবর্তীতে রাজিয়া বেগমকে দিয়ে তার শ্যালক শাহাদাত কবিরের নামীয় ও ভোগদখলীয় ফাঁসিয়াখালী মৌজার আর/১৬১নং হোল্ডিংয়ের ৫.০০ (পাঁচ) একর জমি দখলে নিতে শুরু করেন নতুন নতুন পরিকল্পনা। গোপনে শাহাদাত কবিরের জমি কাগজে নামের শেষে গং বসিয়ে বোন রাজিয়া বেগম সম্পত্তির ভাগ পাবেন বলে অযৌক্তিক দাবী তুলেন। পরে শাহাদাত কবির তার জমাবন্দিতে গং সংশোধনের জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আবেদন করলে সেখানেও আপত্তি দেয় রাজিয়া বেগম ও তার স্বামী রুহুল আমিন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে তার শুনানি চলমান থাকা অবস্থায় শাহাদাত কবিরের জমি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে দুলাভাই রুহুল আমিনগং। বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে বেশ কয়েকবার হামলাও চালায় শাহাদাত কবির ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর। ২০১৭ সালে মুরগির খামার গড়ার কথা বলে শশুর আমির হামজার কাছ থেকে স্ত্রী রাজিয়া বেগমকে ব্যবহার করে ৬০ শতক জায়গা নেন রাজিয়া বেগম। যাহার জমির চৌহদ্দি হিসেবে দেখানো হয়েছে শাহাদাত কবিরের ভোগদখলীয় আর/১৬১নং হোল্ডিংয়ের জায়গা। পরে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ওই জায়গা নিজের স্ত্রী রাজিয়া বেগমের নামে বায়না নামা করে নেন রুহুল আমিন। বিষয়টি জানতে পেরে শ্বশুর আমির হামজা ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মেয়ে ও জামাতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এরপর আমির হামজা বান্দরবান জেলা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতেও ২০১৮ সাালের ২৩ জুলাই বায়না নামা দলিল বাতিলের জন্য আরেকটি মামলা করেন। এ মামলায় আসামী করা হয় মেয়ে রাজিয়া বেগম, জামাতা রুহুল আমিন ও উপজেলার ভূমি রেজিষ্ট্রেশন অফিসারকেও। বয়স ১০৪ এ পৌঁছার কারণে শারীরিককভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন আমির হামজা। তিন ছেলে নুরুল কবির, শাহাদাত কবির ও আহমদ কবিরের সাথে সমন্বয় করে জমি জমা সংক্রান্ত মামলা মোকদ্দমা ও সব কিছু দেখ-ভালো করার জন্য বিশেষ আমোক্তার নামা মূলে ছোট ছেলে আহমদ কবিরকে ক্ষমতা অর্পন করেন আমির হামজা। সে থেকে ও এর আগে থেকেও তিন ছেলেই আমির হামজার ভরণ পোষনসহ সব কিছু দেখভাল করে আসছেন। বিশেষ আমোক্তার নামার শর্ত থেকে সরে গিয়ে সম্প্রতি আমির হামজা জামাতা রুহুল আমিনের কুপরামর্শে ছেলে নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে ৪-৫টি মামলা করেন।

এদিকে তিন ছেলের সাথে কোন ধরণের সমন্বয় না করে রুহুল আমিনের কথামত গত ৬ ফেব্রুয়ারী ২টি মামলা প্রত্যাহার করে নেন আমির হামজা। গত ২০ ফেব্রুয়ারী আমির হামজাকে পরিকল্পিতভাবে বাহিরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়ে রাজিয়া বেগম তার বাবার অসুস্থতার জন্য ডাক্তারের কাছে নেয়া হয়েছে জানান। ওইদিন রাতে আমির হামজা বাড়িতে ফিরে আসলে অসুস্থতার খবর পেয়ে শাহাদাত কবিরের স্ত্রী আয়েশা ছিদ্দিকা, নাতনী শাহিনা বেগম ও আসমাউল হোসনা রিফা দেখতে যান। কথা বলার এক পর্যায়ে জানতে পারেন যে, চলমান মামলা প্রত্যাহারের জন্য রুহুল আমিন শশুর আমির হামজাকে বান্দরবান নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২১ ফেব্রুয়ারী পূনরায় আমির হামজাকে টমটম যোগে কোথায় যেন নিয়ে যাওয়ার সময় শাহাদাত কবিরের ছেলে শওকত ইসলাম দেখতে পায়। এ সময় দাদাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে কোন জবাব না দিয়ে উল্টো রুহুল আমিন, তার স্ত্রী রাজিয়া বেগম ও মেয়ে নাইমা জান্নাত ঝগড়া শুরু করে দেয়। পরে রুহুল আমিন এ ঘটনাকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে কুপরামর্শ দিয়ে আমির হাজমাকে বাদী করে দুই ছেলে, নাতি ও নাতনির বিরুদ্ধে গত ২২ ফেব্রুয়ারী উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করায়।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে রুহুল আমিন ও তার মেয়ে নাঈমা জান্নাত বলেন, আমরা মামলা দিয়ে কাউকে হয়রানি করছিনা। মামলা করেছেন তাদের বাবা আমির হামজা। এতে আমাদের কোন হাত নেই।

এ বিষয়ে আমির হামজার প্রতিবেশী আলী আহমদ ও মো. সুলতানসহ অনেকে বলেন, রুহুল আমিন শ্যালক শাহাদাত কবিরের জমি ভোগদখল নিতেই মূলত প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে আসছেন। এর অংশ হিসেবে শাহাদাত কবির ও শ্বশুরের জমি অবৈধভাবে দখলে নিতে মিথ্যা অভিযোগ তুলে একের এক মামলা দিয়ে হয়রানি করে যাচ্ছেন।

এদিকে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবু ওমর জানান, বোন রাজিয়া বেগমকে বিয়ে করার পর শ্যালক শাহাদাত কবির তার জায়গার উপর ভগ্নিপতি রুহুল আমিনকে থাকতে দেন। কিন্তু রুহুল আমিন সুকৌশলে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে শাহাদাত কবিরের জায়গাসহ শশুরের নামীয় আরো ৬০ শতক জাযগা স্ত্রী রাজিয়া বেগমের নামে গোপনে বায়না নামা করে নেন। প্রতিবাদ করার কারণে শাহাদাত কবিরের বিরুদ্ধে আমির হামজাকে বাদী করে মামলাও করান রুহুল আমিন। মূলত এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। গত ২১ ফেব্রুয়ারী শাহাদাত কবির ও রুহুল আমিন গংদের মধ্যে মারামারির ঘটনা সত্য নয় বলেও জানান এ জনপ্রতিনিধি।

মৈত্রী/এফকেএ/এএ

শেয়ার করুন: