ভূরুঙ্গামারীতে ইজিপিপি প্রকল্পে স্বজন প্রীতির অভিযোগ

ভূরুঙ্গামারী, প্রতিনিধি

কুড়িগ্রাম : জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় হতদরিদ্রের জন্য আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচী ইজিপিপি প্রকল্পে (১ম ও ২য় পর্যায়) অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ২০২১-২০২২ অর্থবছরে হতদরিদ্রের জন্য আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচি ইজিপিপি (১ম ও ২য় পর্যায়) পিআইও অফিস ভূরুঙ্গামারি কর্তৃক প্রদত্ত তালিকা অনুযায়ী ০৬ নং জয়মনিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের উপকার ভোগীদের নামের তালিকায় কাজ না করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবি ও গৃহস্থালী লোকের নাম উল্লেখ করা প্রসঙ্গ বিষয়ে লাভলু রহমান গং অভিযোগ করেন এবং ৬ নং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। মানববন্ধনের পরে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ৯ মার্চ খবরটি প্রকাশিত হয়।

অভিযোগে উঠে আসে অসহায় ও দুস্থ সাধারণ নিরীহ মানুষগুলোর নাম বাদ দিয়ে জয়মনিরহাট ইউনিয়ন শাখার রাজনৈতিক বৃন্দের পদ-পদবী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবী, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য সহ কতিপয় মেম্বারগনের নিজের নাম, স্বামী, স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ, ভাতিজা, ভাই, মা ও বাবার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যা সাধারণ মানুষের মাঝে সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রকল্প নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছে।

সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের মাটি কাঁটার নামের তালিকার কয়েক জনের সাথে কথা হলে তাদের ভিতরে ১৬৭ নং ক্রমিকের নাজমুলকে ফোনে না পেলে তার বাবাকে ফোন করা হলে ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ফোন ধরে বলেন, এটা আমার ছেলের নাম-আমার ছেলে মাটি কেটেছে। আর কেটেছে কিনা চেয়ারম্যানের কাছে শুনেন। ইউনিয়নের মহিলা সদস্য ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের আলো মনি যার ক্রমিক নং ৭৫ এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে তার স্বামী ফোন ধরে বলেন, উনি ঘুমাইছে।আর মাটি কাঁটার বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন হ্যাঁ মাটি কেটেছে তবে কয়দিন কেটেছে জানি না।

তালিকায় ২৩৯ নং একাব্বর আলী (জয়মনিরহাট টেকনিক্যাল কলেজে কর্মরত) তাকে ফোন করা হলে সে জানায় সে বলেন মাটি কাটছি কিনা চেয়ারম্যান জানে, গণমাধ্যম কর্মীকে বলেন এবং উস্কানীমূলক ভাবে বলেন আপনাদের নিজের বাড়িতে মাটি কাটা লাগবে কিনা সেটা বলেন, তাহলে মাটি কেটে দিয়ে আসি। ক্রমিক নং ৬১, মেম্বারের ছেলে মফিজুলকে ফোন দেওয়া হলে সে রাগ হয়ে বলে মাটিকাটি কিনা সেটা গিয়ে গণমাধ্যম কর্মীকে দেখতে বলে। ক্রমিক নং ২৫১ এর কামরুজ্জামান ভূমি অফিসে কর্মরত, তাকে ফোন করা হলে সে বলে হ্যাঁ আমার নাম আছে।

অভিযোগে আরো যাদের নাম আছে তাদের মধ্যে কয়েক জনের নাম তুলে ধরা হলো ৭ নং ওয়ার্ডের লাইলি খাতুন ক্রমিক নং ১৭৫ মেম্বারের স্ত্রী,৩ নং ওয়ার্ডের রাজিয়া খাতুন ক্রমিক নং ৭৯ মেম্বারের স্ত্রী।৩ নং ওয়ার্ডের মেহেরুন নেছা ক্রমিক নং ৬৭ মেম্বার স্ত্রী, ৪ নং ওয়ার্ডের রাশেদ মেনন ৯২ ক্রমিক নাম্বার ৪,৫,৬ মহিলা সদস্যের ছোটো ভাই,৫ নং ওয়ার্ডের মোস্তাফিজুর রহমান ক্রমিক নং ১১৬,১ নং ওয়ার্ডের নাজমুল ক্রমিক নং ৮ মেম্বারের ছেলে,৯ নং ওয়ার্ড হামিদুল ২৩৬ ক্রমিক নং ও ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বারের স্বামী,৩ নং ওয়ার্ডের মালেকা খাতুন ক্রমিক নং ৭৪ মেম্বারের স্ত্রী,২ নং ওয়ার্ডের ক্রমিক নং ৪১ আব্দুস সাত্তার ব্যাবসায়ী,২ নং ওয়ার্ডের ক্রমিক নং ৯০ নাছির উদ্দীন রাজনৈতিক,২ নং ওয়ার্ড ক্রমিক নং ৫২ রাব্বি তালুকদার রাজনৈতিক।

উপরোক্ত বিষয়ে জানার জন্য ৬ নং জয়মনিরহাট ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদকে না পেয়ে তাকে একাধিকবার ফোন দিলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার শাহিনুর আলম বলেন, এগুলো তালিকায় ছিলো তারপর আমাদের দৃষ্টিগোচরে আসলে তখন তাদেরকে তালিকা থেকে কর্তন করা হয়েছে। আর এ ব্যাপরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি দেখছেন।

অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় সরকার, কুড়িগ্রামের সহকারী পরিচালক রাসেল দিও এর কাছে জানতে চাইলে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাকে অবগত করেছেন। আনিত অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে রিপোর্ট দাখিলের জন্য ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর কাছে ৬ জুলাই একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহি অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন, এ সংক্রান্ত একটা পেপার ১৮ জুলাই আসছে ওটা আমি একজন অফিসারকে দায়িত্ব দিয়েছি।

মৈত্রী/এফকেএ/এএ

শেয়ার করুন: