আমার অফিসেও অগ্নি নিরাপত্তা নাই: মেয়র আতিক
শরীফুজ্জামান,
নিজের অফিসেও যে অগ্নিনিরাপত্তা নেই সেটা অকপটে স্বীকার করলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল হক। তবে এখন আরও বেশি সতর্ক হয়ে রাজধানীর সব ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা জোরদার করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। উত্তর সিটি করপোরেশন সেই কাজ শুরু করেছে বলেও জানান মেয়র।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত ‘অগ্নিঝুঁকিতে রাজধানী: সিটি করপোরেশনের ভূমিকা ও নাগরিকদের করণীয়’ শীর্ষক এক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর গুলশানে ঢাকা ক্লাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত যেসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ আছে সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যে ভবনে অফিস করি সেখানে দেখলাম সাইরেন বলে কিছুই নেই, এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা স্বীকার করতে হবে।’
মেয়র বলেন, ‘আমরা দেখেছি সাংবাদিকরা যেখানে কাজ করেন সেখানকার অনেক ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের সময় এসেছে যে যার দায়িত্ব আছে সেটা পালন করা। আমি আমার অফিসের সংশ্লিষ্টদের সে ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছি। তাৎক্ষণিকভাবে সাইরেন্স, ফায়ার অ্যালার্ম, ফায়ার হাইড্রেন, স্মোক ডিটেক্টরসহ যা প্রয়োজন সবকিছু লাগাতে বলেছি।’
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিকরা যেখানে চাকরি করেন সব মালিককে অনুরোধ করবো সে ভবনগুলো নিরাপদ করার জন্য। এটা সবার করতে হবে।’
নগরবাসীর উদ্দেশে মেয়র বলেন, ‘বিল্ডিংয়ে যারা থাকবেন আর কালক্ষেপণ না করে আপনারা জেনে নিন কী করতে হবে। আমাদের সিটি করপোরেশনের ওয়েবসাইটে আমরা দিয়ে দিচ্ছি কী করতে হবে। দেখুন কী করা প্রয়োজন। যার যার দায়িত্ব পালন করুন।’
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘ভবন নিরাপত্তা ও অগ্নিনিরাপত্তা সম্পর্কে অভিযোগ জানাতে নগরবাসীর জন্য অভিযোগ বক্স ও ফোন নম্বর চালু করা হবে। এছাড়া একটা নগর অ্যাপও তৈরি করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে যে কেউ ভবনের ত্রুটিসহ বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরতে পারবে। সেখানে অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন করা হবে। এর ফলে আমরা সমস্যা জানতে পারবো। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নিতে পারবো।’
মেয়র বলেন, ‘ জনগণের সামনে কোনো শক্তিই বড় শক্তি নয়। জনগন পাশে থাকলে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারবো।’
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডগুলো বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘আমরা একটা নাজুক সময় পার করছি। আমরা যে দৃশ্য দেখলাম তা খুবই নাজুক। সেই দৃশ্য কতটা অসহায় তা সবাই দেখেছে। আমরা অনেককে বাঁচাতে পারিনি। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। অবস্থার উত্তরণে আমাদেরকে অনেক কিছু করতে হবে। আমরা এই দৃশ্য আর দেখতে চাই না।’
আগুনের মতো ঘটনা মোকাবেলায় আগে থেকেই প্রস্তুতি রাখতে হবে জানিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক বহুতল ভবনের সিঁড়িগুলোকে রান্নাঘর ও স্টোররুম করে রাখা হয়েছে। ইমার্জেন্সি ডোরে চিহ্ন আছে কি না সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ভবনে আগুন লাগলে মানুষ কোনদিক দিয়ে বের হবে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আটকে রাখা সিঁডিগুলোকে শিগগিরই খালি করে দিতে হবে। আপনাদের ব্যবসার জন্য আমাদের কোনো মানুষ যেন মারা না যায়। এটা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।’
আতিকুল বলেন, ‘ভবনগুলোতে ফায়ার ড্রিল করতে হবে। প্রয়োজনে সিটি করপোরেশন ট্রেনিং দেবে। ভবনের সিকিউরিটি গার্ডদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, ফায়ার পোশাক পরাতে হবে। আমরা সবাই মিলে বাঁচতে চাই।’
ভবন মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি আপনার বিল্ডিংয়ের দায়িত্ব নিন। আপনার গাফিলতির জন্য একটি জীবন ও পরিবার নিশ্চিহ্ন হতে পারে। আপনার গাফিলতির জন্য আমাদের দেশের ইমেজ নষ্ট হতে যাচ্ছে। আপনাদের লিফটগুলোকে চেকিংয়ের মাধ্যমে নিয়ে আসুন। লিফটে মানুষ আটকে যাচ্ছে।’
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি প্রতিটি ভবনে কমপ্ল্যায়েন্স করেই ছাড়বো।’ কমপ্লায়েন্স হলো বিল্ডিং সেফটি, ফায়ার সেফটি, ইলেট্রনিক সেফটি ঠিক থাকা। এজন্য সবার সহোযোগিতা চান মেয়র। বলেন, আগামী শনিবার থেকেই আমাদের টিম মাঠে নামবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘রাজউকের চেয়ারম্যান জনগণের ভোটে আসেননি। রাজউক চেয়ারম্যানকে অনেকে তো চিনেও না। সিটি করপোরেশনের মেয়র জনগণের ভোটে। তবে দায়দায়িত্ব সবারই আছে। তাই বলবো সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আসতে হবে।’
মেয়র বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতা অনেক দিনের। সমন্বয়ের অভাব আছে। এলজিইডি, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে আমারা কাজ করবো।’
এক প্রশ্নের জবাবে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা এ মার্কেটটি স্থানান্তর করতে চাই। এর জন্য মহাখালী, গাবতলী ও যাত্রাবাড়ী এ তিনটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে সুবিধা হয়। কারওয়ান বাজারসহ পাঁচটি এমন মার্কেট রয়েছে যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মশিউর রহমান খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডুরার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লাইজুল ইসলামসহ সংগঠনটির নেতারা।