আওয়ামী লীগ দেশের জনগণের আস্থার মর্যাদা রাখবে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে জনগণের প্রদত্ত আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ধৈর্য এবং সংযমের সঙ্গে চলার আহবান জানিয়েছেন। আজ সন্ধ্যায় গণভবনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোর দিয়ে বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণ আওযামী লীগের প্রতি যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছেন তার মর্যাদা রক্ষা করা হবে।’ আর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতি মর্যাদা দেখিয়ে অত্যন্ত ধৈর্য ও সংযমের সাথে চলতে আওযামী লীগের নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার দেশে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে বলেই মানুষ ব্যাপকহারে নৌকায় ভোট দিয়েছে যার ফলে চতুর্থবারের মতো এবং টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন সম্ভব হয়েছে।
জনগণের দেয়া ভোটের মর্যাদা রক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার পাশাপাশি সময়োপযোগী নতুন প্রকল্প গ্রহণের ওপরও জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চলছে এগুলো শেষ করতে হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন উন্নয়ন কাজ শুরু করতে হবে।’ এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে চলেন এবং তাঁর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। কারণ তাঁর কাজের প্রেরণাই হচ্ছেন তার পিতা বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নেতৃবৃন্দের নেতিবাচক মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ৭৫-এর পর জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখলকে উচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করে। আর তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি সে কারণেই অবৈধ হয়ে যায়। সে কারণে জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাকে স্বীকৃতি দেয়নি। এদেশে কারচুপির নির্বাচন এবং শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের গোড়াপত্তনকারি হিসেবে জিয়াউর রহমানের নাম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমানই ভোট কারচুপির রাজনীতি শুরু করে এবং মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়।
নির্বাচনে বিএনপি’র ভরাডুবির নেপথ্যে দলটির নেতৃত্বের শূণ্যতাকে অন্যতম একটি কারণ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এবং তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার বৃত্তান্ত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘একজন এতিমের টাকা আত্মস্যাৎ করে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে, আরেকজন ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, মানি লন্ডারিং মামলা, হত্যা খুন ও দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী।’
নির্বাচনে বিএনপি’র পরাজয়ের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তাদের মনোনয়ন বাণিজ্যের সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত করে বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মনোনয়ন নিলামে দেয়।’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপে নির্বাচনের আগাম ফল আঁচ করতে পেরেই বিএনপি নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণার চাইতে নির্বাচনকে বানচাল এবং প্রশ্নবিদ্ধ করার চক্রান্ত শুরু করে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে জরিপ করে বিএনপি নেতৃবৃন্দ বুঝতে পারেন যে নির্বাচনে তারা জিতবেন না। আর সেজন্যই তারা নির্বাচনের নামে নাটক করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেন।’
প্রধানমন্ত্রী দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুর খুনী, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী এবং দুর্নীতিবাজদের সাজা প্রদানের বিষয়টিও প্রসংগক্রমে আলোচনায় নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী, ৭৫ এর খুনি এবং জেল হত্যাকারীদের বিচার করা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদেরও সাজা দেয়া হয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশ কলুষমুক্ত হয়েছে।’ বিএনপি-জামায়াত জোটের দু:শাসনের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তারা দেশের স্বাধীনতাতেই বিশ্বাস করে না, যে কারণে বাংলাদেশের উন্নতি ও এগিয়ে যাওয়া তাদের ভাল লাগেনা। বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকলে তারা সহ্য করতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁর সরকারের দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘তার সরকার বাংলাদেশকে আরও উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেবে যাতে দেশের একজন লোকও কোন রকমের দুঃখ কষ্টে না থাকে।’ ‘দেশের সাধারণ মানুষের জীবনকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি,’ যোগ করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া আসন থেকে তাঁকে পুনরায় নির্বাচিত করায় সেখানকার জনগণের কাছে তার কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য উপস্থিত নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানান।
এরআগে টুঙ্গীপাড়া এবং কোটালীপাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের বিপুল বিজয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।