পদ্মা সেতুতে যুক্ত হলো আরও একটি স্প্যান
মুন্সীগন্জ, লিগ্যালভয়েস টোয়েন্টিফোর ডটকম : পদ্মা সেতুতে যুক্ত হলো আরও একটি স্প্যান।
বুধবার ১০টায় জাজিরা প্রান্তে ৩৬ ও ৩৭ নম্বর খুঁটির ওপর ধূসর রঙের F-6 নামের এই স্প্যান বসানো হয়। এই নিয়ে জজিরা অংশে সেতুটি দৃশ্যমান হলো ৯০০ মিটার। আর মাওয়া প্রান্তে আগেই দৃশ্যমান রয়েছে ১৫০ মিটার।
বুধবার ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও তিন হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটি বসিয়ে দেয়া হয়। এর আগে সেতুর ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর ৫টি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে জাজিরা প্রান্তে পৌনে ১ কিলোমিটার কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। বুধবার F-6 স্প্যানটি বসানোর পরে সেতুটির ঐ অংশে প্রায় ১ কিলোমিটার দৃশ্যমান হলো। এছাড়া মাওয়া প্রান্তের ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটি প্রস্তুত না থাকায় এই স্প্যানটি (সুপার স্ট্রাকচার) F-১ আপাততঃ সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর রাখা হয়েছে। ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটি প্রস্তুত হলে F-১ স্প্যানটি সরিয়ে বসিয়ে দেওয়া হবে।
এর আগে নাব্য সঙ্কট মোকাবেলার পর মাওয়া কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে একটি ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজ স্প্যানটি নিয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় রওনা হয়। কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে বিকেল পৌনে ৫টায় জাজিরা প্রান্তে ¯প্যানটি (সুপার স্ট্রাকচার) পৌছায়। তিন হাজার ৬শ’ টন ধারণ ক্ষমতার ক্রেন ‘তিয়ান ই’ স্প্যানটিকে পাজা করে নিয়ে যায়।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, ¯প্যানটি কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে বসানোর উপযোগী করে বেশ কিছুদিন ধরে ইয়ার্ডের জেটির কাছেই রাখা ছিল। কিন্তু নাব্য সঙ্কটের কারণে এটি নেয়া সম্ভব হচ্চিল না। কারণ স্প্যান বহনকারী ৩৬শ’ টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেনটি চলাচলে পানি যে গভীরতা প্রয়োজন সেতুর চ্যানেলে তা ছিল না। এ কারণে অনবরত ড্রেজিং করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হয়।
মূল সেতুর মোট খুঁটি (পিয়ার) ৪২টি। এর মধ্যে ২০টি দৃশ্যমান রয়েছে। যার ১৬টির কাজ পুরোপুরি স¤পন্ন হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই দৃশ্যমান হচ্ছে আরও ১১টি খুঁটি। ৬,৭,৮, ৩১ ও ৩২ নম্বর এই পাচঁটি খুঁটিতেই পাইল বসেছে ৩টির বেশী। ৮, ৩১ ও ৩২ নম্বর খুঁটিতে খাঁজকাটা (ট্যাম) পাইল বসানোর কাজ চলমান আছে। আর ২৮ জানুয়ারি থেকে ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটিতে আরও ৪টি করে খাঁজকাটা পাইল বসানো শুরু হচ্ছে। বাকি ছয়টি অর্থ্যাৎ ১০, ১১, ২৬, ২৭, ২৯ ও ৩০ খুঁটিতেও খাঁজকাটা পাইল বসবে। তাই সেতুর মূল ভিতের কাজ এখন শেষ পর্যায়ের চলে আসছে। এতে সেতু চালু হওয়ার কাজও এগিয়ে যাচ্ছে।
নদীতে ৪০টি খুঁটির মোট ২৬২টি পাইলের মধ্যে ১৯২টি পাইলের কাজ স¤পন্ন হয়েছে। ১৪টি পাইলের বটম সেকশনের কাজ হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই এগুলোর টম সেকশন হবে।
এছাড়া ১৭টি ¯প্যান প্রস্তুত রয়েছে। প্রস্তুত করা হচ্ছে আরও ১৮টি স্প্যান। সম্পূর্ণ হওয়া এই ৩৫টি স্প্যানের মধ্যে প্রকল্প এলাকায় পৌছেছে ১৯টি স্প্যান। বাকী ১৬টি স্প্যান চীন থেকে আসার অপেক্ষায় রয়েছে।
সেতুর নিচ তলায় চলবে ট্রেন। তাই নিচতলায় ট্রেন চলাচলের জন্য স্লাভ বসানো হচ্ছে। জাজিরা প্রান্তের বসিয়ে দেয়া স্প্যান এ পর্যন্ত ১২৮টি রেলওয়ে স্লাভ বসানো হয়েছে। রেল লাইনের জন্য ২ হাজার ৯৫৯টি স্লাভের মধ্যে এরই মধ্যে ১৩০৫টি স্লাভ তৈরি হয়েছে। রেলওয়ে স্লাভগুলো তৈরি হচ্ছে মাওয়া প্রান্তের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে। আর ২২ মিটার দীর্ঘ রোডওয়ে স্লাভ প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৯১৭টি। মাওয়া ও জাজিরা দু’পাড়েই এই রোডওয়ে স্লাভ তৈরি হয়েছে এ পর্যন্ত ২৮০টি। এই মাসেই রোডওয়ে স্লাভ বসানোর কথা রয়েছে।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। আর দু’পারে ভয়াডাক্ট (সংযোগ সেতু) রয়েছে আরও প্রায় ৩ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুটি হচ্ছে ৯ দশমিক ৮২ কিলোমিটার। সংযোগে সেতুও তরতর করে উঠে যাচ্ছে। পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।