সংসদ সচিবালয় বাড়ছে চাকরির সুযোগ
পার্লামেন্ট রিপোর্টার, লিগ্যালভয়েস নিউজ : চাকরি পাওয়ার সুযোগ বাড়ছে জাতীয় সংসদ সচিবালয় । এ জন্য সৃষ্টি হচ্ছে নতুন পদ। প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এবং সংসদের মেডিকেল সেন্টারের জন্য চিকিৎসকের পদ বাড়ানো হচ্ছে। ফলে সেখানে কর্মরতদের পদোন্নতির সুযোগও বাড়ছে।
সংসদ সচিবালয়ের নিয়োগবিধি সংশোধন ও পদ সৃজন সংক্রান্ত গঠিত কমিটির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, সংসদ সচিবালয় কমিশনের ২৯তম বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরের মে মাসে অতিরিক্ত সচিবকে (মানবসম্পদ) আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তিনটি বৈঠক করে এসব সিদ্ধান্ত নেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদের সিনিয়র সহকারী সচিব (মানবসম্পদ-১) ফারজানা জামান বলেন আইন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তা উপস্থিতে পদন্নোতি নিয়োগ সংক্রান্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত হয়েছে।
কমিটি প্রশাসনিক কর্মকর্তার (১০ম গ্রেড) ১৫টি পদ সৃষ্টির সুপারিশ করেছে। এছাড়া সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস (ষষ্ঠ গ্রেড) এর দুটি নতুন পদ, ব্যক্তিগত কর্মকর্তার (১০ম গ্রেড) ১০টি পদ এবং সংসদ সচিবালয় মেডিকেল সেন্টারে বিভিন্ন গ্রেডের ১১টি পদ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সংসদ সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তার মোট মঞ্জুরীকৃত পদ ৬৫টি। সাতটি শাখায় প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ না থাকায় দাফতরিক কাজে বিঘ্ন ঘটছে। পাশাপাশি আটটি শাখায় কাজের পরিধি আগের চেয়ে বেড়েছে। সংসদের প্রশিক্ষণ শাখা, মেইনটেন্যান্স শাখা-১ ও ২, এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার শাখা, উপ-পরিচালক (টেকনিক্যাল) শাখা, প্রটোকল শাখা ও মেডিকেল সেন্টারে প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ নেই।
এছাড়া কমন সার্ভিস ও সমন্বয় শাখা (এ শাখায় দুটি এ.ও পদ সৃজন প্রয়োজন), প্রশাসন শাখা, পরিবহন শাখা, মানবসম্পদ শাখা-১ ও ২, কমিটি শাখা-২ এবং আইপিএ শাখা-১ এর কার্যপরিধি বেড়েছে। এ জন্য এসব শাখায় একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।
জানা যায়, প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিদ্যমান মঞ্জুরীকৃত পদ রয়েছে ৬৫টি। নতুন ১৫টি পদ সৃজন করা হলে মোট পদ হবে ৮০টি। বর্তমানে পদোন্নতির মাধ্যমে কর্মরত রয়েছেন ৫৫ জন এবং সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে কর্মরত সাতজন। ১৫টি নতুন পদ সৃজন করা হলে বিদ্যমান নিয়োগবিধি অনুযায়ী ৮০টি পদের মধ্যে পদোন্নতি ও সরাসরি হিসেবে ১৩টি পদে পদোন্নতি এবং দুটি পদে সরাসরি নিয়োগ কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে।
বিদ্যমান নিয়োগ বিধিমালায় ৬৫ শতাংশ অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হতে ২০ শতাংশ সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদ হতে এবং ১৫ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণযোগ্য।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগ দিলে সরকারের বছরে সম্ভাব্য ব্যয় হবে ৫৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস
সংসদ সচিবালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস (নবম গ্রেড)-এর পদ রয়েছে পাঁচটি। বিদ্যমান নিয়োগবিধি অনুযায়ী একটি সরাসরি এবং চারটি পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণযোগ্য। সংসদ সচিবালয়ের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস সংসদ ভবন ও ভিআইপিদের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন যেমন- আইপিইউ, সিপিএ কনফারেন্স ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের স্পিকার, এমপি, মন্ত্রী, ভিভিআইপি এ দেশে আসেন এবং তাদের নিরাপত্তা প্রদানসহ অন্যান্য নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
সংসদ ভবনের নিরাপত্তা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সে মোতাবেক নিরাপত্তার নিমিত্তে সার্জেন্ট অ্যাট আর্মসের অধীনে বর্তমানে তৃতীয় শ্রেণির ২৪১টি এবং দ্বিতীয় শ্রেণির ১৫টি পদ রয়েছে। অন্যদিকে ২৫৬ জনবলের তদারকির জন্য প্রথম শ্রেণির পদ রয়েছে সার্জেন্ট অ্যাট আর্মসসহ মাত্র আটটি।
সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস অধিশাখার অধীনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ২৫৬ জনবলের তদারকি এবং সংসদের নিরাপত্তার স্বার্থে এ সচিবালয়ে ষষ্ঠ গ্রেডের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জেন্ট অ্যাট আর্মসের দুটি পদ সৃজনের সুপারিশ করা হয়েছে। সংসদ থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে সশস্ত্র বাহিনীর সমমর্যাদা সম্পন্ন কোনো কর্মকর্তাকে প্রেষণে বদলির মাধ্যমে এ নিয়োগ দেয়া যেতে পারে বলে কমিটি সুপারিশ করেছে।
পদ দুটি সৃজনের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য আর্থিক ব্যয় বৃদ্ধি পাবে (গ্রেড-৬, ৩৫৫০০-৬৭০১০/- টাকা) বছরে প্রায় ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ৮০০ টাকা।
ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসংসদে ব্যক্তিগত কর্মকর্তার (১০ম গ্রেড) মোট মঞ্জুরীকৃত পদ ৩০টি। সেখানে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ এবং তাদের একান্ত সচিব (প্রিভিলেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী একান্ত সচিবগণ উপ-সচিব পদমর্যাদার), পরিচালক (আইন অধিশাখা), পরিচালক (আইটি অধিশাখা) এবং ডেপুটি সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস (একজন বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার/স্কোয়াড্রন লিডার এবং একজন পুলিশ সুপার) দুটিসহ মোট ১০টি পদ নেই। ওই ১০টি পদ সৃজনের সুপারিশ করেছে কমিটি।
এসব পদ সৃজন করলে বছরে সম্ভাব্য আর্থিক ব্যয় বাড়বে প্রায় ৩৮ লাখ ২৪ টাকা।
সংসদের মেডিকেল সেন্টারে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি চিকিৎসকের পদ সৃজনের সুপারিশ করেছে কমিটি। এ শাখায় জুনিয়র কনসালটেন্ট/সহকারী অধ্যাপক (এন্ডোক্রাইনোলজি) একটি, জুনিয়র কনসালটেন্ট/সহকারী অধ্যাপক (শিশু) একটি, ডেন্টাল সার্জন একটি, সিনিয়র টেকনোলজিস্ট (ফিজিওথেরাপি) দুটি, সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি) একটি, সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) একটি, সিনিয়র স্টাফ নার্স তিনটি, সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) একটি ও সিনিয়র ফার্মাসিস্ট একটি পদ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কমিটি।
যে পদে পদোন্নতির হার বাড়ানোর সুপারিশ, সহকারী পরিচালক (রিপোর্টিং) : পদোন্নতির সুযোগ এবং কাজের গতি বাড়াতে সংসদের নিয়োগ বিধিমালার তফসিল ক্রমিক-৬৩, ৬৪ ও ৭১-এ উল্লেখিত নবম গ্রেডের সহকারী পরিচালক (গণসংযোগ), সহকারী পরিচালক (রিপোর্টিং) এবং কমিটি অফিসার পদে পদোন্নতির বিদ্যমান ৩০ শতাংশ এবং ৩৪ শতাংশ হারের পরিবর্তে শতকরা ৭০ শতাংশ করার সুপারিশ করছে কমিটি।
অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর : জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কাজের গতি বৃদ্ধির জন্য এবং পদোন্নতির হার বৃদ্ধির জন্য অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির হার বিদ্যমান ৬৫ শতাংশ থেকে পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে ৭০ শতাংশ এবং সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
পদোন্নতি বাড়ানোর যৌক্তিকতা হিসেবে কমিটি অন্যান্য পদের সঙ্গে বৈষম্য তুলে ধরে দীর্ঘদিন একই পদে কর্মরত থাকায় তাদের কর্মস্পৃহা ও কর্মোদ্দম স্বল্পতা পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালে এক আদেশের মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ক্যাটালগার পদ ১২ হতে গ্রেড-১১ তে উন্নীত করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংসদের ক্যাটালগার পদের গ্রেড-১৪ হতে গ্রেড-১১ তে উন্নীতের সুপারিশ করে কমিটি।
এছাড়া ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সংসদের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৯৪ এর তফসিল ক্রমিক ১৩৯-এ পিপিসি অপারেটর (গ্রেড-১৬) পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিদ্যমান অন্যান্য পদের সঙ্গে অফিস সহায়ক-কাম চাবিরক্ষক পদটি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে- বলে উল্লেখ করে কমিটি।