বাঁধ নির্মাণ করে কামারখালী রক্ষা করতে চান লিলি
`আমার গ্রামের পাশেই মধুমতি নদী। এই নদীতে বিলীন হয়েছে আমার দাদার বাড়ি। সালামতপুর গ্রামের পাশে মধুমতি নদী এখনো ভয়ংকর। নদী ভাঙ্গন রোধে ফরিদপুরের মানুষের জন্য একটি বেড়িবাঁধ করতে চাই’। নিজের গ্রামের উন্নয়নে এই অভিমত সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়ন প্রার্থী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মমতাজ হোসাইন লিলি।
তিনি বলেন, সারাদেশে রাস্তা ঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও ফরিদপুরের কামারখালির অবস্থা শোচনীয়। কামারখালি থেকে সালামতপুর পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ভালো কোন রাস্তা নেই। কোন রোগী অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য ভ্যানও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এই অঞ্চলে নদী ভাঙ্গন নিয়ে কার্যক্রম তেমন একটি হয়নি বললেই চলে। এই অঞ্চলের মানুষের একটি বেড়িবাঁধ প্রাণেলর দাবি। ছোটকাল থেকেই দেখে এসেছি এই নদী কত মানুষকে নিঃস্ব করেছে। এখনো বর্ষাকালে আতঙ্কে থাকে এলাকার জনগণ। তাদের এই দুর্দশা থেকে মুক্তি দিতে আমি কাজ করতে চাই।’
পারিবারিকভাবে অ্যাডভোকেট লিলি মমতাজ আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পরিবার পরোক্ষভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছে। তার বড় ভাই মোহাম্মদ মুসা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী সেক্টর-২ এর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামী লীগ পরিবারকে ছোটকাল থেকেই প্রত্যক্ষভাবে কাছে পেয়েছেন। শ্বশুড় বাড়িও ছিল আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ সমর্থক। তাই বিয়ের পরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আরো বেড়েছে বলে উল্লেখ করেন লিলি।
ইডেন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদান করেন। ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ শাখার পক্ষে অনেক মিটিং, মিছিল এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন। কর্মজীবনে তিনি ঢাকা জজ কোর্টে বরাবরই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলে কাজ করে গেছেন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়েও তিনি দলের পক্ষে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি সুপ্রিম কোর্টে অসহায় মানুষদের পাশে থেকে আইনী সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও লিলি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সক্রিয় সদস্য এবং আইন সহায়তা ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য। তিনি বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর প্যানেল লইয়ার।
বর্তমানে লিলি মমতাজ নারী সংগঠন ‘মানবী’ এর অঙ্গ সংগঠন ‘অপরাজিতা’র সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এছাড়াও ন্যায় ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগঠন ‘আলোর মঞ্চ’ এর সক্রিয় সদস্য হিসেবে তিনি কাজ করছেন।
ব্যবসায়িক জীবনে ২০০৪ সালে বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিডব্লিউসিসিআই) এর সদস্য ছিলেন। তিনি সোনারগাঁও স্টুডিও এর প্রোপাইটর ছিলেন। সে হিসেবে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর দুই মেয়াদে সদস্যও ছিলেন। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক অ্যাসোসিয়েশন এর সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাজধানীতে বেড়ে উঠলেও লিলির পরিবারের সঙ্গে ফরিদপুরের মানুষের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। যেকোন বিপদে ফরিদপুরের মানুষ নির্দ্বিধায় লিলি এবং তার পরিবারের কাছে ছুটে আসে। তিনি নিয়মিত এলাকায় আর্থিক সাহায্য, সামাজিক কার্যক্রম এবং মানুষের খোঁজ খবর রাখেন। এছাড়াও ঢাকা জজ কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে নিজ এলাকার মানুষদের আইনি সহায়তা দিতে তিনি সচেষ্ট। অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে তিনি আনন্দ পান।
রাজনৈতিক এবং কর্মজীবনের পাশাপাশি অ্যাডভোকেট লিলি একজন পর্যটকও বটে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং ভারতসহ বিভিন্ন দেশ তিনি ভ্রমণ করেছেন। ভ্রমণকালীন সময়ে তিনি সে দেশের সংস্কৃতি, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, অর্থনীতিক উন্নয়ন, শাসন ব্যবস্থা এবং সরকারের নীতি নির্ধারণী বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রতিনিয়ত জ্ঞান অর্জন করেছেন। এই অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি নিজের এলাকার উন্নয়নের ব্যাপারে উৎসাহ এবং আগ্রহ পেয়েছেন।
সংসদ সদস্য হতে কেন উদ্বুদ্ধ হয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট লিলি মমতাজ বলেন, একজন এম.পি তার অধিনস্থ এলাকায় জনগণের প্রতিনিধি। জনগণের উপকার, সুশাসন, নাগরিক জীবনের মান উন্নয়নের জন্য তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। একজন এম.পির স্বদিচ্ছায় তার এলাকার উন্নয়ন তরান্বিত হয়। এলাকার মানুষ এম.পির কথাকে মূল্যায়ন করে। ফরিদপুরের মানুষের আশাকে পূরণ করা এবং সে এলাকার মানুষের সুখ দুঃখে ঘনিষ্ট সঙ্গী হয়ে থাকার জন্য আমি এম.পি হিসেবে কাজ করতে চাই।
সংসদ সদস্য হয়ে এলাকার উন্নয়নে কিভাবে ভূমিকা রাখতে চান? তিনি বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ ফরিদপুর এলাকার অহংকার। এখানেই রয়েছে তাঁর স্মরণে নির্মিত গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। নদী ভাঙ্গনে এই জাদুঘরের আসে পাশের এলাকা অনেক আগেই বিলীন হয়ে গেছে। নদী বিস্তৃত হয়ে ধেয়ে আসছে জাদুঘরের দিকে। সঠিক সময়ে নদী ভাঙ্গন ঠেকানো না গেলে এই জাদুঘরকে রক্ষা করা যাবে না। তাই সালামতপুরসহ কামারখালিকে রক্ষা করার জন্য আমি রাস্তা-ঘাট এবং বেড়ি বাঁধ নির্মাণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে চাই। এই এলাকার মানুষজন যেন স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারে এবং তাদের নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে একজন সাংসদ হিসেবে আমি সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে।
যদি মনোনয়ন না পান, সেক্ষেত্রে কি করবেন? লিলি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে যুগোপযোগী বলে মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। তিনি যোগ্য প্রার্থীকে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দেবেন বলে আমার বিশ্বাস। এই পদে যাকেই মনোনীত করা হোক, তিনি ফরিদপুরের মানুষের জন্য কাজ করবেন বলে আমি আশা প্রকাশ করি। প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে মনোনীত প্রার্থীকে পরামর্শ এবং পাশে থেকে সহযোগিতা করতে আমার কোন দ্বিধা নেই। আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। তাঁর দেখানো পথেই আমার এগিয়ে চলা। তাই হিংসা বা অভিমান নয়, ভালোবেসে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ফরিদপুরকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে আমি সবসময় সচেষ্ট থাকবো।
দেশের জন্য কাজ করতে আগ্রহী হয়েই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন অ্যাডভোকেট মমতাজ হোসাইন লিলি। প্রতিবার ফরিদপুরের মধুখালি বা অন্যান্য এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও কামারখালি বা সালামতপুর থেকে কেউ এই আসনের জন্য নির্বাচিত হননি। ফরিদপুরের মানুষের একান্ত ইচ্ছেতেই তিনি মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই কন্যা সন্তানের জননী। দুই মেয়ে বৃত্তি নিয়ে বিদেশে পড়াশোনা করছেন। বড় মেয়ে সুমাইয়া হোসেইন বৃষ্টি কানাডায় ফিন্যান্সে স্নাতক এবং ছোট মেয়ে জারকা হোসেন শ্রাবণী যুক্তরাষ্ট্রে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছে।