সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিপাত
নিজস্ব প্রতিবেক, লিগ্যালভয়েস ডেস্ক : কতিপয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কর্মস্থলে গড়হাজিরার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে সেই চিত্রটি আবারো সামনে এসেছে। আর গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্মস্থলে অনুপস্থিত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তা শুধু চিকিৎসকদের জন্য নয়; ‘ফাঁকিবাজ’ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এক কঠোর বার্তা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, কর্মস্থলে অনুপস্থিতির বিষয়টি অবশ্যই অন্যায় এবং অগ্রহণযোগ্য- যা গণকর্মচারী শৃঙ্খলা (নিয়মিত উপস্থিতি) অধ্যাদেশ ১৯৮২ (খ) সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ ও (গ) সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ ১৯৭৯-এর পরিপন্থী। দুদক যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছে সেগুলো সমাধানে এখন কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে বলেছেন, যেসব চিকিৎসক জেলা হাসপাতালে রোগী দেখতে চাইবেন না, তাদের ওএসডি করে নতুন ডাক্তার নিয়োগ করতে হবে। নার্সরা যদি সেবা দিতে না চান, তাহলে তাদের চাকরি ছেড়ে দিতে বলেছেন। সম্প্রতি কাজের রোস্টার পর্যালোচনা করে অভিযান চালিয়ে দুদক ঢাকাসহ ৮ জেলার ১১ হাসপাতালে অধিকাংশ চিকিৎসককে অনুপস্থিত পেয়েছে। এর মধ্যে খোদ রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় ৪০ শতাংশ এবং উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ৬২ শতাংশ চিকিৎসকের অনুপস্থিতি দেখা গেছে। এরপর গতকাল চট্টগ্রামের কয়েকটি বিদ্যালয়ে আকস্মিক পরিদর্শনে যান দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। সে সময় তিনি অধিকাংশ শিক্ষককে অনুপস্থিত পেয়েছেন।
দুর্নীতি সম্পর্কে নাড়া দিতেই দুদকের এসব অভিযান বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজুদ্দিন খান। তিনি বলেন, দুদকের এই অভিযানে দুর্নীতি বন্ধ হবে না। এর জন্য সরকারের জোরালো কমিটমেন্ট থাকা দরকার। সরকারকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। যাতে জনগণের মনে আস্থা আসে।
সম্প্রতি হাসপাতাল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুদক যে অভিযান চালিয়েছে তা সংস্থাটি করতে পারে বলে মনে করেন মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, তবে দুদকের আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। সংস্থাটির সেদিকে আরো মনোযোগ দেয়া উচিত। কাজে ফাঁকি অবশ্যই দুর্নীতি। ওএসডি করে রাখলে সরকারের লোকসান। কেননা কাজ না করেও তারা বেতন পাবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেন তিনি।
দুদকের অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান লিগ্যালভয়েস টোয়েন্টিফোররে বলেন, দুদক ভালো কাজ করছে। যে খাতগুলো ধরে দুদক অভিযান চালাচ্ছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। অনুপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি দুদকেরও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।
তবে পুলিশিং করে বা শাস্তি দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে না বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনার কথা আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি। চিকিৎসকরা কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না এ অভিযোগও দীর্ঘদিনের। কিন্তু এ সমস্যা কেন হচ্ছে এবং এ জন্য কারা দায়ী সে বিষয়ে আমরা হাত দিচ্ছি না। ডাক্তার পদায়ন করলেই হবে না। সেখানে অনান্য লজিস্টিক সাপোর্ট রয়েছে কিনা সে বিষয়টিও দেখতে হবে। কর্মস্থলে উপস্থিতি দেখা দুদকের কাজ নয়। এর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় রয়েছে। তারাই বিষয়টি দেখতে পারে। তবে দুদক আমাদের দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করে দিয়েছে। এখন এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে।
সাথে সাথে তথ্যপাচার ও অভিযুক্তদের সাথে গোপনে যোগাযোগের দায়ে দুদক কর্মকর্তা বরখাস্তের বিষয় সুশান প্রতিষ্ঠায় সাফল্যবয়ে নিয়ে আসবে বলে অনেক বিঙ্গজনরা মনে করেন।