যমুনা ব্যাংকের এমডি গ্রেফতার
তলবে হাজির না হওয়ায় যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুল আলমকে ফের তলব করেছে হাই কোর্ট। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি উপস্থিত না হলে তাকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করতে মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এক গ্রাহকের রাখা এমটিডিআরের অর্থ (মাসিক মুনাফা নেওয়ার স্থায়ী সঞ্চয়) দিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ না মানায় গত ২২ জানুয়ারি যমুনা ব্যাংকের এমডিকে তলব করেছিল হাই কোর্ট।
আদেশে ২৯ জানুয়ারি তাকে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। গতকাল আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন সাবেক বিচারপতি ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন, যমুনা ব্যাংকের এমডির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হাবিবুল ইসলাম ভূঁইয়া, আর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শামীম খালেদ আহমেদ। পরে আলতাফ হোসেন বলেন, ‘যমুনা ব্যাংকের এমডির আজ (গতকাল) ব্যক্তিগত হাজিরার তারিখ ছিল। কিন্তু তিনি আইননজীবী পাঠিয়ে বলেছেন, তিনি দেশের বাইরে। তিনি দেশের বাইরে চলে গেছেন এবং এই গ্রাউন্ডে সময়ও চেয়েছেন। ’ আলতাফ বলেন, ‘আমরা এতে আপত্তি জানিয়ে বলেছি, এটা চালাকি করে করেছে। তিনি দেশের বাইরে গেছেন কিনা আমরা জানি না। কারণ তার ভ্রমণ সংক্রান্ত কোনো ডকুমেন্ট আদালতে সাবমিট করা হয়নি। কোর্ট কন্ডিশনাল অর্ডার দিয়েছে, আগামী মাসের ১২ তারিখে তাকে হাজির হতে হবে।
তা না হলে মতিঝিল থানার ওসি তাকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে আসবেন, ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে। ’ ওইদিন যমুনা ব্যাংকের এমডির বিরুদ্ধে আদলত অবমাননার রুলেরও শুনানি হবে বলে জানান এই আইনজীবী। তিনি আরও বলেন, ‘আদালত এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপরও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়ার পরেও যমুনা ব্যাংক টাকা দিচ্ছে না বলে আদালতকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী। ’ তালেবুর নূর নামের এক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ২০০৫ সালে যমুনা ব্যাংকের নওয়াবপুর শাখায় ৫১ লাখ টাকার একটি মাসিক মুনাফা নেওয়ার স্থায়ী সঞ্চয় (এমটিডিআর) হিসাব খোলেন ৫ বছরের জন্য। এই তালেবুর নূরের সঙ্গে এআইএম হাসানুল মুজিব নামের আরেক ব্যক্তি যৌথভাবে ২০০৬ সালে তুরস্ক থেকে দুই হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করেন। কিন্তু ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় তালেবুর নুর দেনাদার হন। এ কারণে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে যমুনা ব্যাংকের ওই এমটিডিআরের ৫১ লাখ টাকার মালিকানা তিনি হাসানুল মুজিবকে দেন। ২০১১ সালে হাসানুল মুজিব টাকা তুলতে যমুনা ব্যাংকের নওয়াবপুর শাখায় আবেদন করেন। কিন্তু ব্যাংক টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেন হাসানুল মুজিব। বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত শেষে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়। সেখানে বলা হয়, মূল মালিককে হাজির করতে হবে অথবা বিষয়টি যমুনা ব্যাংক নিষ্পত্তি করবে। এরপর টাকার জন্য হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন হাসানুল মুজিব। শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২ ডিসেম্বর রায় দেয় হাই কোর্ট। রায়ে ৩০ দিনের মধ্যে রিট আবেদনকারীকে টাকা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে যমুনা ব্যাংক। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত হাই কোর্টের রায় স্থগিত না করে আবেদনটি খারিজ করে দেয়। এ অবস্থায় টাকা চেয়ে যমুনা ব্যাংকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান হাসানুল মুজিব। তারপরও টাকা না পেয়ে গত বছরের ২৪ জানুয়ারি হাই কোর্টে আদালত অবমাননার আবেদন করেন তিনি। আবেদন গ্রহণ করে আদালত অবমাননার রুল জারি করে হাই কোর্ট। তারপরও না পেয়ে হাই কোর্টে আদালত অবমাননার মামলায় যমুনা ব্যাংকের এমডিকে তলবের আবেদন করেন হাসানুল মুজিব। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২২ জানুয়ারি যমুনা ব্যাংকের এমডিকে তলব করে ২৯ জানুয়ারি হাজির হতে বলে উচ্চ আদালত।