রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমারের উপর চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মিয়ানমারের বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে দেশটির সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রাখতে ভিয়েতনামসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারকে অবশ্যই এখান থেকে তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে হবে। তাদের প্রত্যাবর্তনে আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহায়তা চাই।
ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী জুয়্যান কুউক দেজং আজ সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে এ আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে। কিন্তু এই চুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে অন্যত্র স্থানান্তরে একটি দ্বীপের উন্নয়ন করছে। তবে তাদেরকে অবশ্যই তাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে।
ভিয়েতনামের উপমন্ত্রী ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, এটি এক বিশাল মানিবক কাজ।
তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটা বড় বোঝা।
এ প্রসঙ্গে সফররত মন্ত্রী বলেন, ভিয়েতনাম রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের সঙ্গে সংহতির অংশ হিসেবে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার অনুদান দেবে।
প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার জন্য উভয় দেশের দীর্ঘ সংগ্রামের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আমাদের ছাত্রজীবনে স্বাধীনতার জন্য ভিয়েতনামের সংগ্রাম দেখেছি এবং আপনাদের লড়াই-সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে যুবকদের একটি প্রতিনিধিদল ভিয়েতনাম সফর করে। আমার ভাই ওই প্রতিনিধিদলে ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ এবং ব্যবসা বাণিজ্য জোরদারের বিষয় বাংলাদেশ গুরুত্ব দিচ্ছে।
তিনি দু’দেশের মধ্যে কৃষিখাতে সহযোগিতা সম্প্রসারণে বিপুল সম্ভাবনার ওপর জোর দেন। কৃষিখাতে ভিয়েতনামের ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে, এখাতের আরো উন্নয়নে আমরা এই অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারি।
ভিয়েতনামের উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা জোরদার হলে উভয় দেশের পর্যটন খাতের উন্নয়ন ঘটবে।
বৈঠকের শুরুতে দেজং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেন।
তিনি শেখ হাসিনাকে বলেন, পুনরায় আপনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় আমাদের সরকার ও জনগণ অত্যন্ত খুশী।
বাংলাদেশকে ভিয়েতনামের চিরাচরিত বন্ধু উল্লেখ করে উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, দু’দেশের মধ্যে প্রচুর মিল রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের জন্য দু’দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভিয়েতনাম সফরের আমন্ত্রণ পৌঁছে দেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান এসময় উপস্থিত ছিলেন।
পরে একই স্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল পাইলট সায়েদ বিন হামদান আল-নাহিয়ান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং নৌবাহিনী প্রধান উভয়ই দুই দেশের নৌবাহিনীর মধ্যে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধিও ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ইউএই নেভিতে জনশক্তি সংকট রয়েছে উল্লেখ করে সায়েদ বিন হামদান আল-নাহিয়ান বলেন, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ খাতের উন্নয়নে তার দেশের আগ্রহের কথা জানান।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ খাতের উন্নয়ন ঘটেছে।
এ সময় নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এএমএমএম আওরঙ্গজেব চৌধুরী ,সশ¯্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল মাহফুজুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, ইউএইতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ঢাকায় নিযুক্ত ইউএই রাষ্ট্রদূত এসময় উপস্থিত ছিলেন।