টেংরাগিরি অদূরে ছাড়পত্র ছাড়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র টিআইবির উদ্বেগ
আইসোটেক ও চায়না পাওয়ার এর যৌথ উদ্যোগে বরগুনা জেলার তালতলি উপজেলার নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নে সংরক্ষিত বনাঞ্চল টেংরাগিরি থেকে মাত্র ৪ কি.মি. দূরে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই অনিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিবেশ এবং জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ৩০৭ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পাশাপাশি প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ, জমির মালিকদের নির্যাতন, প্রাপ্য পাওনা না দেয়াসহ সব ধরনের হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
আজ এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে কোর্টে মামলা দায়ের করা হলে আদালত থেকে নালিশী জমির দখল বিষয়ে উভয় পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতায় কোম্পানীর পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্পের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবিতে ভুক্তভোগীরা আদালতে মামলা দায়ের করায় তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, এলাকা ছাড়ার ভয়-ভীতি এমনকি অভিযোগ তদন্ত কমিটির সামনে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগীদের রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে অতিসত্ত্বর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’’
ড. জামান আরো বলেন, “পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৭ এর ৭(৪) ধারা অনুযায়ী, ‘লাল’ শ্রেণীভুক্ত যেকোনো শিল্প স্থাপনে নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও সুখ্যাতি সম্পন্ন বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যথাযথভাবে পূর্ণ পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) সম্পন্ন না করে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ‘পরিবেশ ছাড়পত্র’ ছাড়াই দেশের দ্বিতীয় সুন্দরবন হিসেবে পরিচিত সংরক্ষিত টেংরাগিরি বনের সন্নিকটে এই কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত সাংবিধানিক ও আইনি বাধ্যবাধকতাকে সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হলে স্থানীয় জীব বৈচিত্র বিশেষ করে বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম ধ্বংস করবে।”
চলমান পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাদের একদিকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, ও অন্যদিকে স্থানীয় পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সহায়তায় নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, প্রকল্প এলাকায় সরকারের খাস সম্পত্তি হিসেবে বন বিভাগের শ্রেণীভুক্ত থাকা সত্ত্বেও ১৯৬৮/১৯৬৯ সালের ভুয়া কাগজ দিয়ে এক শ্রেণীর দালাল নিজেদের নামে করে কোম্পানির কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্য থেকে অনেক কম মূল্যে জমি বিক্রি করছে। তাছাড়া সরকারি খাস জমি ভূমিহীনদের মধ্যে ৯৯ বছরের জন্য ইজারা প্রদান করার পরও সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সেই জমিতে প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে।
ড. জামান স্থানীয় নাগরিকদের ওপর চলমান হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধের পাশাপাশি সংবিধান এবং আইন লঙ্ঘন করে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা বরগুনা সহ উপকূলীয় জনগণের জীবন, জীবিকা ও জীববৈচিত্র্যকে আরো ঝুঁকিতে ফেলা আত্মঘাতি এ উদ্যোগ অবিলম্বে বাতিলে আশু পদক্ষেপের আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, টিআইবি গত ৭ মে ২০১৮ সরকারের নিকট এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিল।