পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সুপ্রিম কোর্টের ভৎর্সনা
পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে তিরস্কার করলেন সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার এক আদেশে সর্বোচ্চ আদালত এই বাহিনী ও সংস্থাগুলোকে বাক্স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে এবং নিজেদের রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে বলেছেন।
সুপ্রিম কোর্ট এমন একটি দেশের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে এ নির্দেশ দিলেন, যে দেশটিকে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় অর্ধেক সময়ই শাসন করেছে তারা। দেশটিতে ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত ব্লাসফেমি–বিরোধী একটি বিক্ষোভে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভূমিকার সমালোচনা করে দেওয়া এক রায়ে অস্বাভাবিক রকমের এই কঠোর নিন্দা জানালেন সর্বোচ্চ আদালত। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা ওই বিক্ষোভে রাজধানী ইসলামাবাদ অচল হয়ে পড়েছিল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীর কোনো সদস্য যদি কোনো ধরনের রাজনীতিকে আশ্রয়–প্রশ্রয় দেন বা গণমাধ্যমকে ব্যবহারের চেষ্টা করেন, তবে তিনি সশস্ত্র বাহিনীর শুদ্ধতা ও পেশাদারিত্বকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবেন।
পাকিস্তানের সংবিধান সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়াকে জোরালোভাবে নিষিদ্ধ করেছে উল্লেখ করে রায়ে সরকার এবং সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানদের প্রতি কেউ সংবিধান সমুন্নত রাখার ওই শপথ ভঙ্গ করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালের ওই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছিল তখনকার স্বল্পপরিচিত ইসলামপন্থী দল তেহরিক–ই–লাবায়েক পাকিস্তান (টিএলপি)। বিক্ষোভ সহিংস রূপ ধারণ করলে সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় এক চুক্তি হয়। তাতে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
ওই বিক্ষোভ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, দৃশ্যত কিছু সেনাসদস্য বিক্ষোভকারীদের মধ্যে নগদ অর্থ বিলি করছেন। এতে এই ধারণা আরও জোরালো হয় যে, বিক্ষোভকারীদের সমর্থন জোগাচ্ছে সেনাবাহিনী। এই বাহিনী তখন চাইছিল তৎকালীন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে।
রায়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সতর্ক করে বাক্স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টির ব্যাপারেও সমালোচনা করা হয়। সর্বোচ্চ আদালত বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা তাদের দেওয়া ক্ষমতার বাইরে অবশ্যই যেতে পারবে না। তারা বাক্ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করতে পারবে না। গত সেপ্টেম্বরে ‘দ্য কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস’ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী সন্তর্পণে হলেও কার্যকরভাবে প্রতিবেদন তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করছে।