ওষুধ ও খাবারের অভাবে মারা যাচ্ছে ভেনিজুয়েলার শিশুরা
ভেনিজুয়েলার রাজনৈতিক সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। নিকোলাস মাদুরোর নেতৃত্বাধীন সরকার ও বিরোধী হুয়ান গুয়াইদোর অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে দেশটিতে খাদ্য ও ওষুধের সংকট তীব্র হচ্ছে। শিশুরোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। গত এক সপ্তাহ অনন্ত ১৪ শিশু মারা গেছে। খাদ্য ও পানি দূষণে আক্রান্ত হয়ে এই শিশুদের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির হাসপাতালের বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা।
ভেনিজুয়েলার উপকূলীয় শহর বার্সেলোনার লুসি রাজেটি হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা আল জাজিরাকে জানিয়েছে, দূষিত খাদ্য ও পানির কারণে অসুস্থ শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত ওষুধের সরবরাহ না থাকায় সঠিক চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না।
হাসপাতালের একজন কর্মী জোস প্লেনস বলেন, শিশুদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সুঁচ অথবা সিরাম নেই।
রাজধানী কারাকাস থেকে ৩০০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত হাসপাতালটির শিশু ওয়ার্ডে আল জাজিরার সাংবাদিককে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কারণ তারা বিশ্বকে দেখাতে চান যে শিশুদের বাঁচানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই এই হাসপাতালে।
এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক শিশুরা মা বলেন, আমার মেয়ের ডায়রিয়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় সময় তার হার্টঅ্যাটাক হতো। তার চিকিৎসা করার মতো কিছুই নেই আমার। কিন্তু এই হাসপাতালে এসেও কিছু পাচ্ছি না। আমি চাই এই সরকার পদত্যাগ করুক। তারা আমাদের ধ্বংস করে ফেলছে।
শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া রোগের প্রাদুর্ভাবে গেল সপ্তাহ দুই মাস বয়সী সন্তানকে হারিয়েছেন ম্যারিলিয়া ম্যারিনো। কিন্তু সন্তানের মরদেহ এখনো হাসপাতালে রাখা আছে। কারণ তার কাফনের কাপড় কেনার মতো অর্থও তার কাছে নেই।
তিনি বলেন, এই হাসপাতালে কিছুই নেই। তাদের কোন ওষুধ নেই, কোন খাবার নেই। এর ফলে আমার ছেলেটা মারা গেল।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওষুধ-খাবার এবং অন্যান্য সরঞ্জামের স্বল্পতার কথা জানালেও ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো দেশটিতে কোন মানবিক সংকট নেই বলে দাবি করছেন। সম্প্রতি তিনি দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।
মাদুরো জানিয়েছেন, সামাজিক নিরাপত্তায় সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে তার দেশ সবকিছুই করবে। স্বাস্থ্যসেবায় যেসব ওষুধ প্রয়োজন হবে সেগুলো দেশেই উৎপাদন করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার এাণ সহায়তা নিয়ে ভেনিজুয়েলায় যাওয়া মার্কিন বহর আটকে দিয়েছে মাদুরো। কলস্বিয়ার কুকুতা সীমান্ত দিয়ে মানবিক সহায়তা নিয়ে দেশটিতে প্রবেশ করছিল মার্কিন এাণবহর। কিন্তু মাদুরো তাদেরকে প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি দাবি করেন, তার দেশ ভিক্ষুক নয়। মানবিক সাহায্যকে ভেনিজুয়েলাকে ছোট করার মার্কিন অপকৌশল হিসেবে আখ্যা দেন মাদুরো।
অন্যদিকে ভেনিজুয়েলার স্ব-ঘোষিত অর্ন্তবর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হুয়ান গুয়াইদো জানিয়েছেন, জীবন বাঁচাতে দেশটিতে জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
সেনা সমর্থিত মাদুরো সরকারের বিরোধীরা এখন কলম্বিয়ার কুকুতা থেকে মার্কিন সাহায্যকে দেশটিতে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করছেন। মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য এখনো সীমান্ত ব্যবহার করে কলম্বিয়া যাচ্ছেন ভেনিজুয়েলার হাজার হাজার লোক।
প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ কলম্বিয়ার কুকুতা শহরে যাচ্ছেন। তারা ওষুধ ও খাবার কিনে আবার ভেনিজুয়েলায় ফিরে আসছে। তবে তাদের মধ্যে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার লোক অভিবাসী হয়ে বিভিন্নভাবে থেকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে কলম্বিয়ার অভিবাসী কর্তৃপক্ষ। আবার অনেকে পার্শ্ববর্তী দেশ পেরু ও ইকুইডরের মতো দেশগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন।
চলমান শরনার্থী সংকট মোকাবিলায় ভেনিজুলেয়ার প্রতিবেশি দেশগুলোর জন্য ৭৩৮ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে জাতিসংঘ। কিন্তু জাতিসংঘ বলছে, এই সাহায্যের আবেদনে এখন পর্যন্ত ৫ মিলিয়ন ডলার তারা সংগ্রহ করতে পেরেছে।
ভেনিজুয়েলার আর্থিক সংকটের জের ধরে তৈরি বিক্ষোভের মধ্যে নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন গুয়াইদো। তার ঘোষণার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে স্বীকৃতি দেন এবং অন্যদের স্বীকৃতি দিতে আহ্বান জানান। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৪০টি দেশের সমর্থন পেয়েছেন গুয়াইদো।
এদিকে ভেনিজুয়েলা অবস্থিত ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকো দূতাবাসের ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার গুয়াইদোর প্রতি আনুগত্য জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। পরে দূতাবাসগুলো এটিকে হ্যাকারদের কাজ বলে দাবি করে। তারা মাদুরোর প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য ধরে রাখবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। রাশিয়া, চীন, তুরস্ক, কিউবা ও ইরান মাদুরোর পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।