আইফোনের দাম দেশভেদে কমাতে পারে অ্যাপল
অ্যাপলের আয়ের বড় অংশ আসে আইফোন বিক্রি থেকে। গত ডিসেম্বরে শেষ হওয়া প্রান্তিকে বিশ্বের এ শীর্ষ ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন বিক্রি কমার কারণে মার্কিন টেক জায়ান্টটির আয়েও টান পড়েছে। বিক্রি কমার জন্য ডলারের বিপরীতে বিদেশী মুদ্রার অবমূল্যায়ন, বিশ্বের বৃহত্তম স্মার্টফোন বাজার চীনের অর্থনীতিতে মন্থরগতি এবং তীব্র প্রতিযোগিতার পাশাপাশি আইফোনের চড়ামূল্যকেও দায়ী করা হয়। এ অবস্থায় স্মার্টফোন বাজারে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে অ্যাপল চীনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারে আইফোনের দাম কমাতে পারে বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
গত জানুয়ারিতে অ্যাপল জানায়, ২৯ ডিসেম্বর শেষ হওয়া চলতি ২০১৯ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে আইফোন বিক্রি থেকে প্রতিষ্ঠানটির আয় ১৫ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১৯৮ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। এক বছর আগে একই প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি আইফোন বিক্রি থেকে ৬ হাজার ১১০ কোটি ডলার আয় করেছিল।
কারো কারো মতে, মূলত বৃহত্তর চীন ও অন্যান্য উদীয়মান বাজারে আইফোন বিক্রি কমার কারণে অ্যাপলের আয়ে এ পতন ঘটেছে। এসব দেশে স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে ডলারের বিনিময় মূল্য বাড়ায় আইফোন আরো ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। এই যেমন দ্রুত দরপতন ঠেকাতে পিপলস ব্যাংক অব চায়নার নানা প্রচেষ্টার পরও ২০১৮ সালে ডলারের বিপরীতে চীনের ইউয়ান ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বিনিময় মূল্য হারিয়েছে।
আইডিসি এশিয়া-প্যাসিফিকের সিনিয়র রিসার্চ ম্যানেজার কিরণজিত কৌর বলেন, স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে গত বছর বেশ কয়েকটি দেশে আইফোনের বিক্রিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে, বিশেষ করে এশিয়ার চীন, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায়। এমনকি মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকাতেও আইফোন বেশ ব্যয়বহুল পণ্য।
তিনি বলেন, আগে অ্যাপলের নীতি ছিল, মুদ্রা অবমূল্যায়নের ধকল গ্রাহকদের ওপর ছেড়ে দেয়া, যেখানে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বর্ধিত মূল্য কমিয়ে আনত। আমি মনে করি যেসব বাজারে মুদ্রার দর ওঠানামার কারণে আইফোনের দাম প্রভাবিত হয়, সেসব বাজারে মূল্য সমন্বয় খুব ভালো পদক্ষেপ।
কৌর বলেন, আমি চাই আইফোনের দাম যেন বাজার প্রতিযোগীদের দামের সমান হয়। অন্য ব্র্যান্ডের চেয়ে সামান্য বেশি হলেও আইফোন নাগালের মধ্যে থাকবে, যা পণ্যটির বিক্রি বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।
গত মাসের শুরুর দিকে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম কুক আইফোন বিক্রির কমার জন্য চীনা অর্থনীতির মন্থরগতিকে দায়ী করেন। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, কুক বিশ্বের বৃহত্তম স্মার্টফোন বাজারে কৌশলগত ভুল এবং চীনা অ্যান্ড্রয়েড নির্মাতাদের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতার প্রভাব ঢাকতে এমনটি বলে থাকতে পারেন। তারা জানান, আইফোনের সর্বশেষ মডেলের বেশির ভাগ আইফোনের দাম ১ হাজার ডলারের বেশি। অথচ চীনা নির্মাতাদের হ্যান্ডসেটের অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ কম দামে বিক্রি হয়।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের মতে, বিক্রি কমার পরও গত প্রান্তিকে স্যামসাংকে সরিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম স্মার্টফোন ভেন্ডর হয়ে উঠেছে অ্যাপল। চীনা নির্মাতা হুয়াওয়ে, অপো ও শাওমি শীর্ষ পাঁচ ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে।
ওই সময়ে কুক আরো বলেন, অবস্থার উন্নতির ঘটনার জন্য আমরা একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং কাজের গতি বাড়াচ্ছি। এ ধরনের অবস্থায় নিশ্চল হয়ে পড়া বা সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নতি ঘটার জন্য অপেক্ষা করা আমাদের জিনে নেই।