২৪ ফেব্রুয়ারি আসছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘শাটল ট্রেন’
১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। আয়তনের দিক থেকে দেশের অন্যতম সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে প্রায় ২৩ হাজার শিক্ষার্থী ও সহস্রাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে এই বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিল।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে ২১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অর্ন্তভূক্ত রয়েছে। চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। এখানে রয়েছে চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক উল্লেখযোগ্য প্রাক্তণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন নোবেল বিজয়ী, বিজ্ঞানী ও একাধিক একুশে পদক বিজয়ী রয়েছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে নিজস্ব ট্রেন ব্যবস্থা। দুইটি শাটল ট্রেন প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার শিক্ষার্থীর যাতায়াত করে।
১৯৮১ সাল থেকে পথচলা শুরু করে এখনো শিক্ষার্থীদের নিত্যসঙ্গী হিসেবে চলমান এই শাটল ট্রেন। শাটল ট্রেন যেন একটি মঞ্চ। আর এই মঞ্চের শিল্পী হলেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন আসা যাওয়ার সময় বগির দেয়ালে ‘ড্রাম’ চাপরিয়ে উচ্চস্বরে গান গেয়ে সারা বগি মাতিয়ে রাখা। এ বগিতেই গান গাইতে গাইতে শিল্পী হয়ে উঠেছেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে আজ দেশের অন্যতম তারকাশিল্পী হলেন নকীব খান, পার্থ বড়ুয়া, এসআই টুটুলসহ আরো অনেকেই। শুধু গান নয় এই ট্রেনকে ঘিরে গড়ে ওঠেছে হাজারো গল্পকথা অনেক প্রেম কাহিনী। শাটল ট্রেন আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় একসূত্রে গাঁথা। এই শাটল ট্রেনকে কেন্দ্র করেই রচিত হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাসি-কান্না বা প্রেম-ভালোবাসা আর আনন্দ-বেদনার মহাকাব্য। এই মহাকাব্যের কিছু সময়, কিছু ঘটনা আর অনুভূতি নিয়ে নির্মিত হয়েছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘শাটল ট্রেন’। এক বছর ধরে নির্মাণকাজ শেষে রূপালী পর্দায় আসছে শাটল ট্রেন চলচ্চিত্র।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনকে উপজিব্য করে প্রথম বারের মত নির্মিত হয়েছে পূর্নদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘শাটল ট্রেন’। এ চলচ্চিত্রটিতে থাকছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য, প্রেম-ভালবাসা, বিচ্ছেদ ও শিক্ষঙ্গনের নানান বৈচিত্র চলচ্চিত্রটিতে মোট আটটি মৌলিক গান রয়েছে। গানগুলোর কথা সুর এবং কণ্ঠ দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা এতে অভিনয়ও করছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬তম ব্যাচের ছাত্রী মোহসেনা ঝর্ণার ‘বহে সমান্তরাল’ গল্প অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে এই চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের পরিচালনা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ৩৪তম ব্যাচের সাবেক ছাত্র ও চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রদীপ ঘোষ এবং প্রধান সহকারী পরিচালক হিসেবে আছেন নির্মাতা রিফাত মোস্তফা।
আগামী ২৪-২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টা ৫টা এবং সন্ধ্যা ৭টায় এই চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে ঢাকার শাহবাগের সুফিয়া কামাল গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশববিদ্যালয়ে সাত দিনের উৎসবের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ চলচ্চিত্রেটি নির্মিত হয়েছে গণ-অর্থায়ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের গণ-অর্থায়নে এ চলচ্চিত্র দেশের প্রথম কোন বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। সবাইকে আমন্ত্রণ এ চলচ্চিত্রটি উপভোগ করার।