ডায়াবেটিস রোগীদের ৪০ ভাগই কিডনি রোগী
উন্নত অনেকে দেশে ক্যাডাভারিক প্রক্রিয়ায় বা মুত ব্যক্তির দেহ থেকে কিডনি নিয়ে ৭০-৮০ ভাগ কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়। অথচ বাংলাদেশের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আইনে এতে কোন বাঁধা না থাকলেও এতো বছরেও তা সম্ভব হয়নি। এদেশে শতভাগ কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয় জীবিত নিকটাত্বীয়ের দেহ থেকে কিডনি বিযুক্ত করে। ফলে ডোনার সংকটে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে ৪০ হাজার কিডনি বিকল রোগী। আশার কথা, এবার তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এই মুহূর্তে মৃতব্যক্তির কিডনি সংযোজন বিষয়ে অভিজ্ঞ কোরিয়ান ট্রান্সপ্লান্ট টিম বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিএসএমএমইউ, বারডেম হাসপাতাল, সিএমএইচ, নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালসহ বিভিন্ন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) কোন মূমুর্ষু রোগীর ব্রেইন ডেইথ ঘোষণা হলে এবং রোগীর নিকটাত্বীয়ের সম্মতি পেলে তারা প্রথমবারের মতো দেশে ক্যাডাভারিক কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট শুরু করবেন। আর এটা সম্ভব হলে তা হবে কিডনি বিকল রোগীদের বেঁচে থেকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করার মতো একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
শনিবার রাজধানীর মিরপুরে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইন্সটিটিটে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তারা এসব তথ্য দেন। সম্মেলনটির যৌথ আয়োজক কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট, রয়্যাল লন্ডল হসপিটাল, কোরিয়ার আনাম ইউনিভার্সিটি, ভাইটালিঙ্ক কোরিয়া, আমেরিকা ওয়াইনি স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব নেফ্রোলজি (আইএসএন)।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন—ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুল মালিক। বিশেষ অতিথি থেকে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কিডনি ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এম এ ওয়াহাব, মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম মুহিবুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিনি ফেরদৌস রশিদ প্রমুখ। এতে দেশ-বিদেশের প্রায় চারশ’র অধিক কিডনি ও ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অংশ নেন।
কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীদের ৪০ ভাগ আক্রান্ত হচ্ছে কিডনি রোগে। নিরব ঘাতক এই ডায়াবেটিস কিডনির ক্ষতি করছে কোন উপসর্গ ছাড়াই। অনেকের কিডনি পরিপূর্ণ বিকল হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যাপক হাড়ে বাড়ছে কিডনি রোগী। অথচ উন্নত বিশ্ব ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও কিডনি রোগের উন্নতমানের চিকিত্সা ব্যবস্থা চালু থাকলেও আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি।’
জাতীয় অধ্যাপক ব্রি. (অব.) আব্দুল মালেক বলেন, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়া, পুষ্টিকর ও সুষম খাবার পরিমিত গ্রহণ, নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করলে সুস্থ থাকা যায়। এ জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট সব মহলকে একযোগে কাজ করতে হবে। এতে রোগ ব্যাধি হ্রাস পাবে, মানুষ সুস্থ থাকবেন।
রবিবার একই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে দেশে প্রথমবারের মতো কিডনি রোগীদের পুষ্টিব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্বতন্ত্র কর্মশালা। এতে দেশের পুষ্টিবিদগণ অংশ নেবেন। আয়োজকরা জানান, কিডনি নিউট্রিশনিস্ট বিদেশে আলাদা থাকলেও বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশী ক্রনিক কিডনি রোগী এবং ডায়ালাইসিস রোগীদের পুষ্টিব্যবস্থাপনা বিষয়ে এই সেমিনারের আয়োজন। এছাড়াও অনুষ্ঠিত হবে ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগ, গর্ভকালীন কিডনি রোগ বিষয়ে আলাদা কর্মশালা।