মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা, লিগ্যাল ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার পরও মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নেয়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, তারা যেহেতু তাদের নাগরিক সেহেতু মিয়ানমারের উচিত রোহিঙ্গাদের দায়-দায়িত্ব নেয়া এবং তাদের দেশের ফিরতে দেয়া।
শেখ হাসিনা ১৯ ফেব্রুয়ারি খালিজ টাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছি এবং তারা তাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে। দুঃখজনকভাবে তা হয়নি। আমরা এটি বাস্তবায়ন করতে পারিনি।’


বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে গত বছর স্বাক্ষরিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি বাস্তবায়নে ধীরগতি প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু দুঃখজনকভাবে মিয়ানমার সরকার তাদের ফিরিয়ে নেয়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এদের কেউ কেউ ফিরে যেতে আস্থা পাচ্ছে না। কিন্তু আমি মনে করি, এসব লোক ফিরে যাওয়ার আস্থা খুঁজে পায় এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা মিয়ানমার সরকারের দায়িত্ব।’


২০১৭ সালের আগস্টে বুদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ট মিয়ানমার থেকে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সহিংসতা ও জাতিগত নিধন এড়াতে পালিয়ে নদী পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বারবার একথার পুনরাবৃত্তি করেছে যে, দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হওয়া সত্ত্বেও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদপূর্ণ প্রত্যাবাসনের অনুকূল নয়।
মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে তারা চেষ্টা করছে। এতে সন্দেহ নেই। তাদের যে কারণেই হোক, আমি জানিনা এতে কেন ভাল ফল পাওয়া যাচ্ছে না।’
বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বিশাল বোঝা হওয়া সত্ত্বেও ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে উদার মানবিকতা প্রদর্শনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা পাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি আশাবাদী যে, ‘এমন একদিন আসবে যেদিন মিয়ানমার উপলব্ধি করবে যে এটি সঠিক পথ নয়। তারা তাদের নাগরিক এবং তাদের অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে নেয়া উচিত’।


শেখ হাসিনা এ অভিযোগ নাকচ করে দেন যে, অনিরাপদ অবস্থা সত্ত্বেও তার দেশ তড়িঘড়ি করে তার দেশ শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে চায়।
তিনি বলেন, ‘এটি সত্য নয়। কিন্তু শরণার্থী শিবিরে মানুষ কতদিন থাকতে পারে? যারা এটি বলছে- তারা কখনো শরণার্থী শিবিরে যায়নি। এবং সম্ভবত, তাদের শরণার্থীর জীবন যাপন করতে হয়নি। কিন্তু আমি বুঝতে পারি।’


১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাঁর নিজেকে ও তাঁর বোনকে শরণার্থীর জীবন যাপন করতে হওয়ার দুঃসহ স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘শরণার্থী হওয়া ও গৃহহীন হয়ে বসবাসের দুঃখকষ্ট আমরা বুঝতে পারি। সুতরাং আমি বুঝতে পারি যে, এসব লোকের তাদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। তাদের আরো উন্নত জীবনযাপন করা উচিত।’

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *