বঙ্গবন্ধু উপাধির পাচঁ দশক
ঢাকা, লিগ্যাল ডেস্ক: বাঙালি জাতির জন্যে ২৩ ফেব্রুয়ারি এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৬৯ সালের এ দিনে বাংলাদেশের জনগণ শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়েছিলেন। পরে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালিরা তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে স্বাধীনতা অর্জন করে।
১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব কারাগার থেকে মুক্তি পান। তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে বন্দী ছিলেন। তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়ন (ডিইউসিএসইউ)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদ কারমুক্ত শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে আয়োজিত জনসমাবেশে বাংলার জনগণের পক্ষে বঙ্গবন্ধু উপাধি ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতাও ঘোষণা করা হয়।
১৯৬৮-৬৯ মেয়াদে ডিইউসিএসইউ’র ভিপি’র দায়িত্ব পালন করা তোফায়েল আহমেদ বাসস’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ঐতিহাসিক ১১-দফা আন্দোলনের ভিত্তিতে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান জেল থেকে মুক্ত করি। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২৩ ফেব্রুয়ারি জাতির পক্ষে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধ’ু উপাধি প্রদান করে।’
আওয়ামী লীগের প্রবীণ এ নেতা সেদিনের কথা স্মরণ করে বলেন, ডিইউসিএসইউ’র ভিপি হিসেবে আমি সমাবেশে সভাপতিত্ব করি। আমি বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশ্যে ভাষণ দেই। তখন আমি বলি, আমরা মহান এই নেতাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিচ্ছি যে নেতা তাঁর যৌবনের পুরোটা সময় পাকিস্তানি জেলে কাটিয়েছেন এবং হাসিমুখে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত ছিলেন।
এরপর থেকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই বাঙালি ‘বঙ্গবন্ধ’ু উপাধিতে পরিচিত হয়ে আসছেন। ‘বঙ্গবন্ধু’ বাংলায় যার অর্থ জনগণের বন্ধু।
তুখোড় রাজনীতিবিদ ও সাংসদ তোফায়েল ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে বলেন, ১৯৬৯ সালের ১৭ জানুয়ারি আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত করি। এ গণঅভ্যূত্থানকালে আসাদ, মতিউর, মকবুল রুস্তম এবং ক্যান্টনমেন্টে সার্জেন্ট জহুরুল হক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক শামসুজ্জোহা মৃত্যুকে বরণ করে নেন। এসব আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে আমরা বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্ত করতে সক্ষম হই।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আমরা বিজয় লাভ করি। একই সঙ্গে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি।
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তাঁর যৌবনের অধিকাংশ সময়, ১৩ বছর জনগণের মুক্তির জন্য পাকিস্তান জেলে কাটিয়েছেন। আর কোনও নেতা জনগণের জন্যে এত ত্যাগ স্বীকার করেননি।’
তিনি বলেন, আমি গর্বের সঙ্গে বলছি আমরা আমাদের দুটি শ্লোগানকেই বাস্তবায়িত করতে পেরেছি। একটি বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্ত এবং অন্যটি মাতৃভূমি বাংলাদেশকে স্বাধীন করা। ২২ ফেব্রুয়ারি আমরা আমাদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করি যিনি একইসঙ্গে জাতির জনকে পরিণত হন। অন্যদিকে ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা দেশকে স্বাধীন করি।
চলবে..