পিলখানায় হত্যাযজ্ঞের মামলায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ শিগগিরই
জিল্লুর রহমান
ঢাকা, লিগ্যাল ডেস্ক : রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে সংঘটিত বিদ্রোহে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় হত্যা মামলায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার সমন্বয়ে গঠিত একটি বৃহত্তর বেঞ্চ বিচারিক আদালতের রায়ের বিষয়ে আনা আপিলের ওপর ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায়ের সংক্ষিপ্ত সার ঘোষণা করেছিল।
এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি শিগগিরই প্রকাশ পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি এটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল। হাইকোট বিভাগের বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতি সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর বেঞ্চে মামলাটির শুনানি ও নিস্পত্তি হয়। তিনি বলেন, এটি অনেক বড় মামলা। বেঞ্চের জেষ্ঠ্য বিচারপতি মামলায় ১১ হাজার ৪১২ পৃষ্ঠার রায় ইতোমধ্যে প্রস্তুত করেছেন। বেঞ্চের অপর বিচারপতিদের মতামতের পরপরই তা চূড়ান্ত করে প্রকাশ করা হতে পারে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার বিডিআর সদর দফতরে ৫৭ জন সেনা সদস্যসহ ৭৪ জনকে বর্বরোচিত ও নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আনা হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জন বিডিআর সদস্যকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় দেয় বিচারিক আদালত। ওই রায়ের ডেথ রেফারেন্স এবং আপিলের ওপর হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন। এর মধ্যে ১ জন মারা গেছেন। বাকি ১২ জনের মধ্যে ৮ জনের সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও অন্য চারজনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১৫২ জনের বিষয় ছাড়াও বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। বাকি ১৪ জনের মধ্যে দু’জন আগেই মারা গেছেন। আর অন্য ১২ জন খালাস পেয়েছেন।
বিচারিক আদালতে খালাসপ্রাপ্ত ৬৯ জনের সাজা চেয়ে ফৌজদারি আপিল করেছিলেন রাষ্ট্রপক্ষ। তাদের মধ্যে ৩১ জনকে যাবজ্জীবন ও চারজনকে সাতবছর করে কারাদন্ড দিয়েছে হাইকোর্ট। আর অন্য ৩৪ জনের খালাসের রায় বহাল রয়েছে। সব মিলিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড পেয়েছে ১৮৫ জন। বিচারিক আদালত ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়। তাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। বাকি ২৫৩ জনের মধ্যে ১৮২ জনকে ১০ বছর করে, ২ জনকে ১৩ বছর করে, ৮ জনকে ৭ বছর করে এবং ৪ জনকে ৩ বছর করে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। বাকিদের মধ্য থেকে খালাস পেয়েছেন ২৯ জন। ২৮ জন হাইকোর্টে আপিলই করেননি। উল্লেখ্য-আসামি সংখ্যার দিক থেকে এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ওই হত্যাযজ্ঞে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। এই হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দেয়। এ মামলায় আসামি ছিলেন ৮৪৬ জন। সাজা হয় ৫৬৮ জনের। তাঁদের মধ্যে বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ আসামিকে মৃত্যুদন্ড, ১৬০ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড হয়েছিল। খালাস পেয়েছিলেন ২৭৮ জন।
হাইকোর্টে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ নির্দোষ ও গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তাদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। তৎকালীন বিডিআর বাহিনীর কিছু সদস্যের উচ্ছৃঙ্খলতা, হিংশ্রতা ও অমানবিকতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যা অকল্পনীয়। রায়ে এ হত্যাকান্ডের ন্যায়বিচার হবে।
রাজধানীর পুরান ঢাকার উমেষ দত্ত রোডে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ইতিহাসের কলঙ্কজনক এবং সর্ববৃহৎ এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন।
বিচার চলার সময়ে বিডিআরের ডিএডি রহিমসহ চার আসামির মৃত্যু হয়। মামলায় আসামীদের মধ্যে বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা তোরাব আলীরও দন্ড হয়েছে। সাজা ভোগকালীন বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। পওে কারাগারে তোরাব আলীও মৃত্যুবরণ করেন।
রক্তাক্ত ওই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী এ বাহিনীর নাম পুনর্গঠন করা হয়। নাম বদলের পর এ বাহিনী এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হিসেবে পরিচিত।