রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার তার অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজ করছে না : প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা, লিগ্যাল ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গা নাগরিকদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে করা অঙ্গীকার অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে চুক্তি করেছিলাম। কিন্তু মিয়ানমার সরকার এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের জন্য মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বন্ধু সম্মাননা অর্জনকারী ড. পল কনেট ও এলেন কনেট আজ সন্ধ্যায় তাঁর জাতীয় সংসদ ভবনস্থ কার্যালয়ে প্রধানমনাত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রায় ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশ কক্সবাজারে আশ্রয় প্রদান করেছে উল্লেখ কওে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা সংখ্যায় স্থানীয় জনগণকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আশ্রয় প্রদানে নোয়াখালীর ভাসানচর নামে একটি দ্বীপের উন্নয়ন করছে।
তিনি বলেন,‘আমারা সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত করে দ্বীপটির উন্নয়ন করছি যাতে করে রোহিঙ্গারা সেখানে উন্নত পরিবেশ পেতে পারে। আপাতত, ২৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে সেখানে স্থানান্তর করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশের প্রায় এক কোটি শরণার্থী পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল।
’৭৫ সালে জাতির পিতা হত্যাকান্ডের পর তিনি এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকেও শরণার্থী জীবন কাটাতে হয়েছিল বলেও এ সময় স্মরণ করেন তিনি।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক পল কনেট এবং এ্যালেন কনেট বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রদান করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের বিষয়টিও অবহিত করেন।
তাঁরা রোহিঙ্গাদের জন্য শরণার্থী শিবিরে পরিচ্ছন্ন সুপেয় পানি এবং সানিটেশনসহ বিভিন্ন বন্দোবস্তের জন্য বাংলাদেশ সরকারেরও প্রশংসা করেন।
তাঁরা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য আপনার সরকার চমৎকার বন্দোবস্ত করেছে এবং আমরা এতে খুবই অভিভূত হয়েছি।’
পল কনেট এবং মিসেস কনেট বলেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে একটি কনসার্ট আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছেন এবং সেখান থেকে অর্জিত অর্থ ইউএনএইচসিআর-এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের প্রদান করা হবে।
পল কনেট স্মরণ করেন যে, তিনি সর্বপ্রথম ১৯৭১ সালের অক্টোবরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং বাংলাদেশের সবুজ প্রাকৃতিক শোভায় বিমুগ্ধ হন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের জনগণের জন্য তাঁদের ভালবাসা এবং একাত্মতায় গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানের বিষয়ে তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানার তাঁকে বলা একটি কথা উদ্ধৃত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রেহানা বলেছিল (শেখ রেহানা) তুমি যদি ১৬ কোটি লোককে খাওয়াতে পার তাহলে আর ৫ থেকে ৭ লাখ লোককে তাদের দুঃসময়ে খাওয়াতে পারবা। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রয়োজন হলে আমরা একবেলা খাব, আর অন্য বেলার খাবারটা এই বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ভাগ করবো।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, একই মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএম আরিফ-উর-রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।