আসামিদের আইএসের টুপি পাবার বিষয়ে কারো গাফলতি থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে
স্টাফ রিপোর্টার / লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলা মামলার আসামিদের আইএসের টুপি পাবার বিষয়ে কারো গাফলতি থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে তদন্ত করা হবে।
আজ বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে রায় প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মনিরুল ইসলাম বলেন, হলি আর্টিজান হামলার মামলার রায়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা একটা ম্যাসেজ পেলো। ভবিষ্যতে এ ধরণের কর্মকাণ্ড করতে কেউ সাহস পাবে না।
আসামীদের মাথায় আইএসের টুপির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমার জানামতে আইএসের কোনো টুপি নাই। আইএস’র সৃষ্টি থেকে এ যাবৎ পর্যন্ত তাদের কোনো টুপি দেখা যায়নি। তারপরও তাদের কোনো টুপি আছে কিনা, তা বিশ্লেষণ করে দেখা হবে।
পাশাপাশি কারো গাফলতির কারণে আইএসএর লোগোযুক্ত এরকম টুপি আসামিদের কাছে এসেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।
মনিরুল ইসলাম বলেন, এতো স্বল্প সময়ে এমন একটি চাঞ্চল্যকর মামলার রায় ঘোষণার মাধ্যমে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা বিশ্বে বিরল। বহির্বিশ্বে দেখা যায়, এ সকল অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীরা গ্রেফতার না হয়ে নিহত হয়ে যায়।
সিটিটিসি অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রত্যেক অপরাধীকে খুঁজে বের করেছে। এটা ডিএমপি তথা বাংলাদেশ পুলিশের একটি বড় সাফল্য।
তিনি বলেন, জঙ্গিদের হলি আর্টিজানে হামলা ছাড়াও আরো হামলার পরিকল্পনা ছিল। তারা আরো হামলার পরিকল্পনা প্রনয়ণ, বাস্তবায়ন ও প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। কাউন্টার টেররিজম ২০১৬ সালের জুলাইয়ে কল্যাণপুরে জীবিত এক আসামীকে গ্রেপ্তার করে হলি আর্টিজান মামলার ফাউন্ডেশন খুঁজে পায়।
২০১৬ সালের আগস্ট মাসে নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি বিরোধী এক অভিযানে মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী নিহত হন। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক জঙ্গি বিরোধী অভিযানে নব্য জেএমবির নেতৃত্বে আসা অনেকে নিহত হয় এবং অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে রূপনগরের অভিযানে একজন মাস্টার ট্রেইনার নিহত হয়।
হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলা মামলার তদন্তটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তখনো নবাগত এই ইউনিটটি প্রযুক্তিগতভাবে ভালো সক্ষমতা অর্জন করতে পারে নি। শুধুমাত্র দেশপ্রেম, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে এই চাঞ্চল্যকর মামলাটি তদন্ত শুরু করেছিল কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।
বহুল আলোচিত গুলশানে অবস্থিত হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলা মামলায় ৭ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোঁরায় হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জনকে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। ওই বছরেই গঠিত হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।
হলি আর্টিজানে হামলার সাথে জড়িত ২১ জনের মধ্যে সরাসরি জড়িত ৫ জন ঘটনাস্থলে নিহত হন। পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি বিরোধী অভিযানে নিহত হন ৮ জন। ৬ জনকে জীবিত গ্রেপ্তার করা হয় এবং পলাতক ২ জনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়।
বুধবার দুপুরে রায়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণী পড়া শেষ করেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান। রায়ে আট আসামির মধ্যে সাত জনকে ফাঁসি এবং একজনকে খালাস দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ। খালাস পেয়েছেন মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান।