‘শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার সততা, সাহস ও আদর্শের মূর্ত প্রতীক’
লোপা রাকিব / লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি বলেছেন, ‘আমাদের রাজনীতিতে যারা শুদ্ধাচারে অন্যান্য ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার। একজন মানুষ ছোট্ট এক জীবনে কত কিছু করতে পারে তা এই বইয়ের মাধ্যমে উঠে এসেছে।’
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত ‘তীব্র নিল নি:শেষে লাল – শহীদ আহসানউল্লাহ্ মাস্টার’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দীপু মনি বলেন, ‘আহসান উল্লাহ মাস্টার বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষের অধিকার নিয়ে সারাজীবন কাজ করেছেন। তিনি যখন যে কাজ ধরেছেন তা সততার সাথে করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছেন, মানুষের ভালবাসা কুড়িয়েছেন। ২৫ বছর পর গাজীপুরের সংসদীয় আসনটি তিনি আওয়ামী লীগের জন্য উদ্ধার করে বিএনপির ঘাঁটিকে নৌকার ঘাঁটিতে পরিণত করেছেন। এর নেপথ্যের কারণ-মানুষের প্রতি তার ভালবাসা, সততা আর দেশপ্রেম।’
তিনি আরও বলেন, ‘চা বাগানের শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় তিনি কাজ করেছেন। গাজীপুরে ৯টি কারখানা শ্রমিকদের ফিরিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত করেছেন। মানুষের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি সন্ত্রাস, মাদকসহ সব ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি সংগ্রাম করেছেন। শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার সততা, সাহস আদর্শের মূর্ত প্রতীক হিসেবে আছেন, থাকবেন আজীবন।’
শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের সন্তান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো: জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘আমার বাবা সারাজীবন সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার পর লোভনীয় অনেক চাকরির সুযোগ ছেড়ে তিনি শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। মৃত্যর আগ পর্যন্ত তিনি অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি সাধারন মানুষ ও শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় আমৃত্য সংগ্রাম করে গেছেন।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের বাড়িতে হানাদার বাহিনী লুটপাট চালায় এবং নির্যাতন করেন। এক পর্যায়ে তারা আমার বাবাকে ধরে নিয়ে যায়। বাবা সেদিন কৌশলে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা তাকে দিনদুপুরে হত্যা করে। তাকে এমন সময় হত্যা করা হয়, যখন তিনি জুম্মার নামাজের জন্য অযু করে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।’
জাহিদ আহসান বলেন ‘আহসান উল্লাহ মাস্টার জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন কিন্তু কখনও মানুষকে কষ্ট দেননি। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অর্থের প্রতি তার কোন লোভ ছিল না। বাবার আদর্শকে বুকে ধারন করে তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে মানুষের কল্যানে আজীবন নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই।’
অনুষ্ঠানের মূখ্য আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আহসান উল্লাহ মাস্টার একজন জনপ্রিয় শিক্ষক ও নেতা ছিলেন। যিনি একেবারে তৃনমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে উঠে এসেছেন। তিনি যে কত জনপ্রিয় ছিলেন তা বোঝা গেল তাকে হত্যার পর। দলমত নির্বিশেষে এই হত্যার বিচার দাবিতে সেদিন মাঠে নেমেছিলেন। এর অন্যতম কারণ হলো তিনি রাজনীতির মধ্য দিয়ে একটি মানবিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু যেমন লবন ও ভাত অন্যের সাথে ভাগাভাগি করে মানবিক রাজনীতি করে গেছেন। ঠিক আহসান উল্লাহ মাস্টারও সেই আদর্শ ধারন করে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন।’
ড. আখতারুজ্জামন আরও বলেন, ‘বইটির অন্যতম বৈশিষ্ট হলো-এখানে ১২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষাতকার রয়েছে, যারা আহসান উল্লাহ মাস্টারের খুবই ঘনিষ্ট ছিলেন। যা এই বইয়ের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে। গল্পোচ্ছলে লেখা এই বইয়ের মাধ্যমে পাঠক অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’
বইটির সহ-সম্পাদক ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার নিজেকে আত্মত্যাগ করেছেন। ঘাতকের বুলেটে তিনি যখন শহীদ হন তখন দলমত নির্বিশেষে মানুষ উত্তাল তরঙ্গের মত বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।’ এইজন্য এই দিনটি জনজাগরণ দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বইটির সম্পাদক অধ্যাপক মো: রশীদুল হাসান। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আখতারুজ্জামান, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আতাউল্লাহ মন্ডল, সাবেক সংসদ সদস্য ও গাজীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী মোজাম্মেল হক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুখ।