বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালি জাতিকে বিশ্বের এক অনন্য সংবিধান উপহার দিয়ে গেছেন: আইনমন্ত্রী
সাইয়্যদ মো: রবিন
ঢাকা, লিগ্যাল ডেস্ক : জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক তার বিশেষ অতিথির দেওয়া বক্তৃতায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনেরপূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছন ।
তিনি এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলেন, নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যখন যে ধরণের সহযোগিতা চাইবে তা প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সরকার অতীতে যেভাবে দিয়ে এসেছি ভবিষ্যতেও সেভাবে দিতে থাকবো। এরকোন ব্যত্যয় হবে না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে স্বাধীন করার মাত্র দশ মাসের মাথায় বাঙালি জাতিকে বিশ্বের এক অনন্য সংবিধান উপহার দিয়ে গেছেন। যেখানে তিনি সুখী-সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়ীক, ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখা ও বিধি-বিধান সন্নিবেশ করে দিয়েছেন। তাঁর দেওয়া সংবিধানের ৮ অনুচ্ছেদে গণতন্ত্রকে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি বলে ঘোষণা করা হয় এবং ১১ অনুচ্ছেদে প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মূলনীতি ঘোষণা করা হয়।
এছাড়া জাতীয় ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সমূহ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে গঠনের বিধান করে দেন তিনি। এমনকি নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ যাদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন তাদের যোগ্যতা কি হবে তাও সংবিধানের ১২২ অনুচ্ছেদে যুক্ত করা হয়। এছাড়া সংসদের নির্বাচনের জন্য প্রত্যেক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকার জন্য যাতে একটি করে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয় এবং ধর্ম, জাত,বর্ণ ও নারী-পুরুষভেদে যাতে কোন বিশেষ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা না হয় সে কথাও সংবিধানের ১২১ অনুচ্ছেদে সন্নিবেশ করে দেওয়া হয়।
মন্ত্রী বলেন, একটি নির্ভুল ও বিশ্বাসযোগ্য ভোটার তালিকা প্রণয়নের গুরুদায়িত্ব পালন করা নির্বাচন কমিশনের অন্যতম প্রধান কাজ। বর্তমান নির্বাচন কমিশনএই দায়িত্ব অত্যন্ত সুচারুরূপে পালন করছে। বলেন, অবাধ, শুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো একটি বিশ্বাসযোগ্য ভোটার তালিকা।
আনিসুল হক বলেন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত না হওয়ার বড় কারণ ছিল তৎকালীন ভোটার তালিকায় প্রায় সোয়াকোটি ভুতুড়ে ভোটারের অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ।
বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায় এবংবাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ওই ভোটর তালিকা সংশোধন করে তা নির্ভুলকরার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনা অনুযায়ী তৎকালীন নির্বাচন কমিশন ছবিযুক্ত একটিনির্ভুল ও বিশ্বাসযোগ্য ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে। ভোটার তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে এটিছিল যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এ পদক্ষেপকে আরও সুসংহত করার জন্য ভোটার তালিকা প্রণয়ন সংক্রান্ত প্রচলিত আইনের সংশোধন ও আধুনিকীকরণকল্পে নতুন‘‘ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯’’ প্রণয়ন করে। যাতে ভবিষ্যতে আর কেই ভোটার তালিকায় ভুয়া ভোটার যুক্ত করে ভোট কারচুপির ষড়যন্ত্র করতে না পারেন। বস্তুত এই আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের পর থেকে ভোটার তালিকার সঠিকতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আর কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়ার কথা শুনিনি। তার মানে নির্বাচন কমিশন এই আইনের আওতায় সঠিকভাবেই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে আসছে এবং এ বিষয়ে দেশবাসীর আস্থা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান ভোটার তালিকার একটি অসাধারণ বৈশিষ্ট হলো, এতে প্রত্যেক ভোটারের আঙুলের ছাপ ও চোখের এর মত বায়োমেট্রিক ফিচার সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ফলে ভোটারদের নির্ভুলভাবে সনাক্ত করা যাচ্ছে। তাই সরকারি ও বেসরকারি অনেকসংস্থা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের এই ডাটাবেইজ ব্যবহার করছে এবং তার ভিত্তিতে জনসাধারণকে সেবা প্রদান করছে। এর ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ভোটারগণকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করছে। আইন শৃংখলা রক্ষা এবং অপরাধ দমনসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীও এটি ব্যবহার করছে। ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য বিচারিক কাজেও এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই ভোটার তালিকায় নাম অন্তুর্ভুক্তি ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি সকল নাগরিকের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি এমন সকল যোগ্য নাগরিককে ভোটার তালিকাভুক্ত করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানান। আর একজন ব্যক্তিও যাতে একাধিক স্থানেভোটার তালিকাভুক্ত হতে না পারে তাও গুরুত্বের সাথে খেয়াল রাখার অনুরোধ জানান।