জনগণের আস্থার মূল্য দিয়ে উন্নয়নে কাজ করবে সরকার : প্রধানমন্ত্রী
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের দেয়া আস্থা ও বিম্বাসের মূল্য দিয়ে নির্বাচিত সরকার দলমত নির্বিশেষে সবার উন্নয়নের জন্য সরকার কাজ করবে বলে অঙ্গিকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল বিজয় সমাবেশে সভাপতির ভাষণে তিনি এ অঙ্গিকার করেন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে জয়-পরাজয়কে একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি এইটুকুই তাদের বলতে চাই- আওয়ামী লীগ নৌকা মার্কায় ভোট পেয়ে জয় পেয়েছে এটা সত্য। কিন্তু যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে এসেছে, যখন দায়িত্ব পেয়েছি তখন দলমত নির্বিশেষে সকলের জন্য কাজ করে যাব। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি দলমত নির্বিশেষে সকলের জন্যই আমাদের সরকার কাজ করে যাবে।’
আওয়ামী লীগের ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারের পক্ষে জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রায় দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,‘সেই ভোটের সম্মান যেন থাকে আমরা সবসময়ই সেই বিষয়টা মাথায় রেখে সার্বিকভাবে দেশের সুষম উন্নয়ন করে যাব, দেশের জনগণের স্বার্থে।’
তিনি নৌকার বিপুল বিজয়কে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণ রায় বলে উল্লেখ করে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুনরোল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘যে রায় জনগণ দিয়েছে এ রায় হচ্ছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রায়।’
তিনি জনগতের এই প্রতিফলনের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে নির্বাচিত জন প্রতিনিধি যারা,দেশের মানুষের যে আকাঙ্খা,সে আকাঙ্খা আমাদের পূরণ করা কর্তব্য।’
‘বিজয় অর্জনের চাইতে বিজয় ধরে রেখে জনসেবা করা আরো কঠিন কাজ’আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, এই কঠিন কাজ আমরা পেয়েছি। সর্বশক্তি দিয়ে সেই কঠিন দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হবে। সেটাই আমি সকলকে মনে করিয়ে দিতে চাই।’
‘দেশের জনগণ শান্তি এবং উন্নয়নের জন্য নৌকাকে ভোট দিয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ শান্তি এবং উন্নতি চায়। সেইসাথে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিযে যাক সেটাই তাঁরা চায়।
বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত করে গড়ে তোলা তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জনগণের ৩০ ডিসেম্বরের রায় বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত করে গড়ে তোলার পক্ষের রায়। অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রার রায় দিয়েছে জনগণ তাদের ভোটের মধ্যদিয়ে।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সমৃদ্ধি সমাজ প্রতিষ্ঠাই তাঁর লক্ষ্য উল্লেখ করে জনগণের এই রায়কে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার পক্ষের রায় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
৩০ ডিসেম্বরের রায় হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি রায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধী এবং যুদ্ধারপরাধীদের কোন স্থান হবে না। দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিবাদ, মাদকাশক্তদের কোন স্থান হবে না এবং বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠবে।’
সমাবেশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি এবং তোফায়েল আহমেদ এমপি, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, মোহাম্মদ নাসিম এমপি বক্তৃতা করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ্যে সমাবেশে অভিনন্দন পত্র পাঠ করেন।
এছাড়া দলের কেন্দ্রিয় নেতা, মীর্জা আজম এমপি, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আকম মোজাম্মেল হক, মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর এবং দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান এমপি এবং শাহে আলম মুরাদ বক্তৃতা করেন। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সমাবেশটি পরিচালনা করেন।
৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর এটাই প্রথম জনসভা ছিল আওয়ামী লীগের। কাজেই জনতার উপচেপড়া ভিড় কাকরাইল মোড় হয়ে মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের সামনে থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। পল্টন থেকে হাইকোর্ট কদম ফোয়ারা হয়ে দোয়েল চত্বর দিয়ে টিএসসির মোড় এবং সমগ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা নেতাকর্মীদের পদাচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে।