নবগঠিত মন্ত্রিসভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি অধিগ্রহণ আইন-২০১৯’র খসড়া অনুমোদন
ঢাকা : নবগঠিত মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম (ভূমি অধিগ্রহণ) রেগুলেশন (সংশোধন) আইন-২০১৯’র খসড়া অনুমোদন দিয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের ভূমির অধিগ্রহণে সমতলের জনগণের সঙ্গে সমতা বিধানের জন্য যে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়েছিল সেটাকেই আইন আকারে আনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে নবগঠিত মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। পরে বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মন্ত্রি পরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম একথা জানান।
শফিউল আলম বলেন, ভুমি অধিগ্রহণের ক্ষতি পূরণের ব্যাপারে আগে সমতল এবং পাহাড় এদুটির মধ্যে একটা ব্যবধান ছিল। সেখানে পাহাড়ের ভূমি অধিগ্রহণে ১৫ শতাংশ এবং সমতলের ভূমি অধিগ্রহণে ৩শ’ শতাংশ প্রদান করা হত। এই বৈষম্য হ্রাস করার লক্ষ্যেই সরকার গত মেয়াদের শেষ পর্যায়ে উভয়ের জন্যই ৩শ’ শতাংশ ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে এই সংক্রান্ত অধ্যাদেশটি জারি করেছিল। সেটিকেও এখন আইনে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া এদিনের সংসদে আরো ৫টি এজেন্ডা আলোচনায় স্থান পায়।
শফিউল আলম জানান, বৈঠকে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০১৮ কে আইনে পরিণত করার জন্য এর খসড়া অনুমোদন এবং জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ আইন ২০১৮’ এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০১৮কে আগেই মন্ত্রিসভায় পাশ করা হয়েছিল কিন্তু সংসদে উপস্থাপনের আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকায় এটিকে আইনে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ আইন ২০১৮’র খসড়া অনুমোদন সম্পর্কে তিনি বলেন, সমাজকল্যাণ পরিষদ ১৯৫৬ সাল থেকেই চলছে একটি রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে। পরে ১৯৭২ সাল থেকে এটা আবার পুনর্গঠিত হওয়ার পর থেকেই সরকারি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে চলছিল, এখানে কোন আইন ছিল না। সেখানে এটি যে গতানুগতিক ধারায় অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ায় এটি চলছিল তাকেই আইনে রূপ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এর ৭ ধারায় একটি পরিচালনা বোর্ডের কথা বলা হয়েছে। এখানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি বা বোর্ড থাকবে। তিনি সভাপতি হবেন আর মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী থাকলে সহ-সভাপতি এবং সমাজকল্যাণ সচিব সদস্য সচিব হবেন। ৮৪ জন বিশেষায়িত সদস্য থাকবেন, যারমধ্যে ২০ জন হবেন মহিলা। সভাপতি নির্দিষ্ট স্থান এবং তারিখ অনুযায়ী সভা আহবান করতে পারবেন এবং বছরে অন্তত দুটি সভা অনুষ্ঠিত হতে হবে এবং সভায় এক তৃতীয়াংশ সদস্য উপস্থিত থাকলে কোরাম হবে।
শফিউল আলম বলেন, মন্ত্রিসভায় বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) আইনের খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিটাক ও ১৯৬২ সাল থেকে রেজ্যুলেশন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে এ জন্যে আইনের প্রস্তাবটি করা হয়েছে। এই বিটাক আমাদের ক্ষুদ্র এবং মাঝারি যে শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে বা বিটাকের যে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে তাদের কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানটিও এর ৭ ধারা অনুযায়ী একটি পরিচালনা পরিষদ দ্বারা পরিচালিত হবে এবং সচিব শিল্প মন্ত্রণালয় হবেন এর চেয়ারম্যান এবং বিটাক মহাপরিচালক হবেন সদস্য সচিব। ১১ সদস্য বিশিষ্ট এর পরিচালনা পর্ষদ হবে। প্রতি বছর অন্তত দুইটি সভা অনুষ্ঠিত হবে হবে এবং এক তৃতীয়াংশ সদস্য বৈঠকে উপস্থিত থাকলে কোরাম হবে।
পরবর্তী বিষয়টি হলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সুরক্ষা বিধিমালা-২০১৫ এর আলোকে প্রতিবন্ধী বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনার খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আইন বা বিধিমালার আলোকে সেই ব্যাপারে গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। প্রবেশগম্যতা বা অ্যাক্সেসিবিলিটি অর্থাৎ প্রতিবন্ধীরা চলাফেলার ক্ষেত্রে কোন জায়গায় কীভাবে যাবেন সেটা নিয়ে অনেকগুলো বিষয় রাখা আছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রবেশগম্যতা যেমন- ভৌত অবকাঠামো, পরিবহন ও যোগাযোগসহ জনসাধারণের প্রাপ্য সব সুবিধা ও সেবাসমূহে অন্যদের মতো সমসুযোগ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যবহার উপযোগী নিশ্চিত করা। যেমন- বাসে আজকাল প্রতিবন্ধীরা উঠতে গেলে একজন টেনে তুলতে হবে বা ল্যাডার লাগাতে হবে। অন্য দেশে দেখবেন যে বাস বে’র সাথে সেইম লেবেল, হুইল চেয়ার দিয়ে উঠে যেতে পারে। আমাদের আস্তে আস্তে ওই বিষয়গুলোর মধ্যে যেতে হবে, এ বিষয়গুলো এখানে আছে।’
‘অর্থাৎ গণপরিবহন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ব্যবহার উপযোগী করার নির্দেশনা আছে, এটা করতে হবে,’ বলেন তিনি।
আলম বলেন, ‘ভবনগুলোতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড-২০০৬ এর বিধানগুলো কার্যকর করা। যেমন- সব গণস্থাপনা ভবন, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, আদালত, পুলিশ স্টেশন, আইনি সহায়তা কেন্দ্র, রেল স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল, বিমান বন্দর, নৌ ও স্থল বন্দর, দুর্যোগকালীন আশ্রয় কেন্দ্র, সাইক্লোন শেল্টার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, উড়াল সেতু, পরিসেবার স্থান, বিনোদন ও খেলাধুলার স্থানসহ সব জায়গায় এটা (বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন) করা।’
তিনি বলেন, ‘বিমানে আই-চেয়ার, কেবিন চেয়ারের ব্যবস্থা রাখা, দুর্যোগকালীন আশ্রয় কেন্দ্র ও সাইক্লোন শেল্টার শিশু ও দুগ্ধ কন্যার প্রবেশগম্য টয়লেট রাখার পরিকল্পনা রাখা হয়েছে। এগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা হবে।’
প্রতিবন্ধী বিষয়ক কোটা রাখা বা না রাখা সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটা নিয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়নি। তবে আপনাদের জানার জন্য বলি, আইনে যে প্রভিশন আছে ওটা কিন্তু কার্টেল (বাদ দেয়া) হয়নি। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অর্ডার (প্রশাসনিক আদেশ) দিয়ে আইন কখনও সুপারসিড হয় না। (প্রতিবন্ধীদের কোটা আইনানুযায়ী) যা ছিল, তাই আছে।’
এছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংবাদ পত্র এবং সংবাদ সংস্থায় কর্মরত সাংবাদিক এবং সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত ‘নবম মজুরি বোর্র্ড রোয়েদাদ ২০১৮’ এর পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নতুন কমিটি পুনর্গঠনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং রাষ্ট্রপতির ভাষণের অনুমোদন করা হয়।
এদিন মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের শুরুতেই আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মুত্যুতে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মুত্যুতে তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। শোক প্রস্তাবে বলা হয়, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন বীর মুত্তিযোদ্ধা এবং আদর্শবান রাজনীবিদকে হারালো।