সোনার বাংলা গড়তে জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির
জৈষ্ট্য প্রতিনিধি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে দেশ থেকে সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’ আজ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব এ দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করা। একাত্তরের শহীদদের কাছে আমাদের অপরিশোধ্য ঋণ রয়েছে। আসুন, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এবং দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মধ্য দিয়ে আমরা লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।’ রাষ্ট্রপতি জনগণের প্রত্যাশা পূরণের প্রতিষ্ঠান জাতীয় সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলসহ সকলকে সম্মিলিতভাবে যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, কর্মচঞ্চল, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ সকলের কাম্য। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাঙ্খার সফল বাস্তবায়নে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি ১৮৭ পৃষ্ঠার বক্তব্যে বিভিন্ন খাতে সরকারের সাফল্য ও উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরে বলেন, ‘২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তারিখে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের বিপুল সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য-আয়ের বাংলাদেশ গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু হয়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে জননন্দিত নির্বাচনী ইশতেহার ‘দিনবদলের সনদ’ রূপকল্প-২০২১-এর বাস্তবায়নে শুরু হয় উন্নয়নের মহাসড়কে অভিযাত্রা। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৪ উপলক্ষ্যে বিরোধী শক্তি নাশকতামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে নানা অপতৎপরতা শুরু করে। বিভিন্ন প্রতিকূলতা প্রতিহত করে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। শুরু হয় ‘উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে বিশ্বের বিস্ময় বাংলাদেশ’-এর সুদীপ্ত অগ্রযাত্রা।’ চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নব-নির্বাচিত সংসদ সদস্যবৃন্দ ও দেশবাসীকে তিনি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য তিনি নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সশস্ত্রবাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনী ও ব্যক্তিবর্গ এবং এ কর্মযজ্ঞে সহায়তা প্রদানের জন্য গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য সকল ভোটার, বিশেষত মহিলা ও নবীন ভোটারদের তিনি অভিনন্দন জানান। মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে তাঁরচ স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরের কাজে আত্মনিয়োগ করেন, তখনই কুচক্রীমহল জাতির পিতাকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশের আত্মবিকাশকে রুদ্ধ করে দেয়। পঁচাত্তর-পরবর্তী সরকারের সকল গ্লানি, কলঙ্ক, ব্যর্থতা পিছনে ফেলে সুদীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়, যার ফলে স্বৈরশাসন, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ধারার অবসান হয়। বিশ্বসমাজে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। কিন্তু ২০০১ সালে গঠিত সরকার উন্নয়নের বিপরীতে নিজেদের গোষ্ঠীস্বার্থে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের ধারাই অব্যাহত রাখে। ফলে, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পাঁচবছরের শাসনামলে সৃষ্ট অমিত সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটে।’ তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি’ আইন বাতিল করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় কার্যকর করা হয়েছে। পলাতক আসামীদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলা এবং বিডিআর হত্যাকান্ড মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে এবং আদালত কর্তৃক দোষীদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। মাদক, জঙ্গিবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে এবং জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ‘রূপকল্প-২০২১’, দিনবদলের সনদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ আর্থসামাজিক উন্নয়নের সকল সূচকে রূপকল্পে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশি সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের শ্রেণিতে উত্তরণের সকল যোগ্যতা অর্জন করেছে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা বিপুলভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। সরকারের দক্ষ পরিচালনায় অর্থনীতির সকল সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।