ভোলায় ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
জেলায় ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এখানে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৯০ হেক্টর জমি। আর গতকাল পর্যন্ত আবাদ সম্পন্ন হয়েছে ২৩’শ ৫৫ হেক্টর জমি। যা টার্গেটের চেয়ে ১৪’শ ৬৫ হেক্টর জমি বেশি। আর গত বছরের তুলনায় আবাদ বেড়েছে প্রায় দিগুণ জমিতে। ভুট্টা চাষে পরিশ্রম কম, লাভজনক ও সরকারি প্রণোদণা প্রদানের ফলে চাষিরা ভুট্টা চাষে আগ্রী হয়ে উঠছে। চলতি রবি মৌসুমে জেলায় ভুট্টার ব্যাপক আবাদ হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। সামনের দিনগুলোতে আবাদ আরো বাড়বে বলে কৃষি বিভাগ জানায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মৃত্যুঞ্জয় তালুকদার বাসস’কে বলেন, জেলায় কৃষকদের ভুট্টা চাষে আগ্রহী গড়ে তুলতে সরকারিভাবে ৩ হাজার ৮০০ কৃষকের মধ্যে উন্নত জাতের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। প্রতি কৃষককে ২ কেজি উন্নত বীজ, ২০ কেজি বিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ভুট্টার উৎপাদন বৃদ্ধি করতে ২১০টি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জেলায় এবছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।
কৃষকরা জানান, সাধারনত কার্তীক অগ্রাহায়ণ মাসে মাঠের ধান তোলার পরই জমি পরিচর্যা করা হয়। পৌষের দিকে লাগানো হয় ভুট্টার বীজ। মাঘের শেষ পর্যন্ত আবাদ চলে। বৈশাখ মাসের শেষ দিকে ফসল ঘরে তোলা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে জেলায় ভুট্টার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর আবাদ বাড়ছে। বিভিন্ন ফাস্টফুড ও চাইনিজে ভুট্টার চাহিদা রয়েছে। এছাড়া প্রাণি খাদ্য হিসেবেও ভুট্টা ব্যবহার করা হয় ব্যাপক। ভুট্টা চাষে কম পরিশ্রম, বিগত বছর ভুট্টার ফলন ও লাভ ভালো হওয়ায় অনেক কৃষকই এবার ভুট্টা চাষ করছেন।
সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের চরছিফলী গ্রামের কৃষক মো. ইব্রাহীম ৫০ শতাংশ জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। নিজ জমি সরকারিভাবে বীজ ও সার পাওয়াতে এবার তার খরচ অনেকটাই কম হয়েছে। তিনি বলেন, ৩ বছর হলো তিনি প্রথম ভুট্টার চাষ করেছেন। ভুট্টা চাষে লাভ বেশি হয় বলে তিনি এতে আকৃষ্ট হয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোন রোগ-বালাইর প্রভাব নেই তার ফসলে। আশা করছেন অধিক ফলনের মাধ্যমে লাভবান হবেন।
একই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের আব্দুল মালেক বাসস’কে জানান, তিনি ২০ শতাংশ জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। সরকারি প্রণোদনা পাওয়াতে তিনি প্রচন্ড খুশি। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বাসস’কে জানান, কৃষকদের মাঝে সরকারি প্রণোদনা বীজ থেকে হেক্টর প্রতি ৭ থেকে ৮ মে:টন ভুট্টা উৎপাদন সম্ভব। আর সাধারন বীজ থেকে আড়াই থেকে ৩ মে:টন উৎপাদন হয়। তাই উচ্চফলনশীল এসব বীজ থেকে কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন। সামনের দিনে এর আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরো জানান, এবছর সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাও ভুট্টা চাষে কৃষকদের সহায়তা দিয়ে আসছে। তাই এবার আবাদ বেশি হয়েছে। গত বছর জেলায় ৮৯০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছে ৫ হাজার ৩৪০ মে:টন ভুট্টা। আর চলতি মৌসুমে গত মৌসুমের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ জমিতে আবাদ হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এবার উৎপাদনও প্রায় দ্বিগুণ হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিনয় কৃষœ দেবনাথ বলেন, আগামী কয়েকদিন পর্যন্ত মাঠে ভুট্টার আবাদ চলবে। এ জেলায় হাইব্রিডের মধ্যে সাধারণত কহিনুর, ডন-১১১, এনকে-৪০, কাবেরি, সুপার সাইন জাতের চাষ বেশি করা হয়। আর রোগের মধ্যে ফল আর্মি ওয়ান ও কাটুই পোকার আক্রমণ হয়। তাই কৃষকদের রোগ দমনে করনীয়, বীজ রোপণ, পরিচর্য়া বিষয়ের সঠিক নির্দেশনা ও সব ধরনের পরামর্শ সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।