আইন-আদালতশীর্ষ খবর

স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা কোচিং করাতে পারবেন না

সরকারি-বেসকারি সব ধরনের স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ২০১২ সালে প্রণীত সরকারের নীতিমালা বৈধ ঘোষণা করেছে হাই কোর্ট। সরকারের ওই নীতিমালা নিয়ে কয়েকটি রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানির পর বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় দেয়।

আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেছুর রহমান। রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যরিস্টার তানিয়া আমির ও মো. নাসিরুদ্দিন।

এ রায়ের ফলে সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ কার্যকর হচ্ছে বলে মোখলেছুর রহমান জানান।

২০১২ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা ওই নীতিমালায় বলা হয়, কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ছাত্রছাত্রীর তালিকা, রোল, নাম ও শ্রেণি উল্লেখ করে জানাতে হবে।

নীতিমালায় বলা হয়, অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন।

“এক্ষেত্রে মহানগরী এলাকার প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসে তিনশ টাকা, জেলা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দুইশ টাকা এবং উপজেলা ও অন্যান্য এলাকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দেড়শ টাকা নেওয়া যাবে।”

তবে প্রতিষ্ঠান প্রধান ইচ্ছা করলে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের এই অতিরিক্ত কোচিংয়ের টাকা কমাতে বা মওকুফ করতে পারবেন বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী অতিরিক্ত ক্লাসের ক্ষেত্রে একটি বিষয়ে মাসে কমপক্ষে ১২টি ক্লাস নিতে হবে, প্রতি ক্লাসে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারবে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, “সরকার রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সময়ে সময়ে পরিপত্র, নীতিমালা, গাইডলাইন, সার্কুলার, বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে। এটা সরকারের সাংবিধানিক অধিকার। এজন্য জাতীয় সংসদে আইন পাশ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।

“কোচিং বাণিজ্য অনুসন্ধান এবং তদন্ত করার এখতিয়ার দুদকের আছে। তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি অগ্রধিকার তালিকা থাকতে হবে, কোন বিষয়ে কমিশন তদন্ত বা অনুসন্ধান করবে। কেননা দুদকের পর্যাপ্ত জনবল সঙ্কট রয়েছে।

“কাস্টমস হাউজ, ব্যাংক, বন্দর, ভূমি অফিসের দুর্নীতির বিষয়ে ছোটো পরিসরে তদন্ত বা অনুসন্ধানের সুযোগ নেই দুদকের। এসব খাতে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অগ্রাধিকারভিত্তিতে এ ধরনের অভিযোগে নজর দিতে হবে।”

এই রায়কে যুগোপযোগী ও ঐতিহাসিক অভিহিত করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “যেহেতু নীতিমালাটি বৈধ ঘোষণা হল, সেহেতু কোচিং বাণিজ্য ঢালাওভাবে যেটা হচ্ছিল, সেটা বন্ধ হল।”

কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে মো. জিয়াউল কবির দুলু ২০১১ সালে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এই রিট আবেদনে আদালত রুল জারি করেছিল। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ২০১২ সালে এই নীতিমালা করে।

কোচিং বাণিজ্য নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুদক থেকে ভিকারুননিসা স্কুল ও কলেজের শিক্ষক ড. ফারহানা খানম, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ কবীর চৌধুরী, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের শিক্ষক শাহজাহান সিরাজ এবং অভিভাবক মো. মিজানুর রহমানকে নোটিশ দেয়।

এই নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পৃথক পৃথক রিট আবদেন করেন তারা। ওই রিট আবেদনেও হাই কোর্ট রুল জারি করে। এসব রুলের ওপর চুড়ান্ত শুনানি শেষে রায় দিয়েছে আদালত।

এর মধ্যে ভিকারুননিসা স্কুল ও কলেজের শিক্ষক ফারহানা খানমকে দেওয়া নোটিশ অবৈধ বলে রায় দিয়েছে আদালত। আর ২০১১ সালে করা রিট আবেদন অকার্যকর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি তিনটি রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *