অন্তঃসত্তা ইউএনওকে ওএসডি নিয়ে সংসদে আলোচনা
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসনে আরা বেগমকে অন্তঃসত্তা অবস্থায় ওএসডি করার কারণ জানতে চেয়েছেন দুই সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকী ও এ কে এম শামীম ওসমান। পাশাপাশি এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তারা।
নারায়ণগঞ্জের ইউএনও হিসেবে যোগ দেওয়ার মাত্র ৯ মাসের মাথায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি হোসনে আরাকে ওএসডি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সন্তানসম্ভবা ওই কর্মকর্তা খবর পেয়েই সংজ্ঞা হারান। এতে তার গর্ভের সন্তানের কাছে অক্সিজেন সরবরাহ প্রায় বন্ধ হতে বসে। হাসপাতালে ভর্তি হলে ডাক্তার উপায়ান্তর না দেখে অস্ত্রোপচার করেন। ৩১ সপ্তাহের অপরিণত সন্তানটিকে এখন নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুটির জীবন শঙ্কার মুখে রয়েছে। এ খবর তিনি নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান তিনি।
সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলেন সাবেক নারী ও শিশু প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী। তিনি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান। পরে তার সেই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান।
পয়েন্ট অব অর্ডারে মেহের আফরোজ চুমকী বলেন, আজকের পত্রিকায় দেখলাম, একজন নারী ইউএনও এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন- মা হওয়াটাই অপরাধ। সেই নারী ইউএনও তার স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘ ৯ বছর পর মা হতে যাচ্ছিলেন। সেই নারী একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার কাজে কোনো গাফিলতি ছিল না, বরং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রশংসা করেছেন। তার সন্তান প্রসাব করার সময় ছিল আগামী এপ্রিল মাসে। এরই মধ্যে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে তিনি অকস্মাৎ জানতে পারেন, তাকে ওএসডি করা হয়েছে।
ওই নারী ইউএনও’র স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে চুমকী বলেন, সেদিন ওএসডি হওয়ার খবর শুনে মানসিক চাপে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অকালপক্ক সন্তান প্রসাব করায় তার বাচ্চাটা এখন মৃত্যু পথযাত্রী।
চুমকী বলেন, তিনি দীর্ঘ ৯ বছর পর মা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা উপলবদ্ধি করতে পেরেছেন। তিনি যদি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন, তাহলে একজন সন্তানসম্ভবা নারীকে কেন ওএসডি করা হলো? এ ঘটনায় আমি বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।
পরে সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেন, বিষয়টিতে আমি লজ্জিত। কেননা ঘটনাটি আমার নির্বাচনি এলাকায়। তিনি আমার এলাকার সদরের ইউএনও। একজন সৎ কর্মজীবী, অত্যন্ত কর্মঠ ও ভালো একজন কর্মকর্তা বলেই তাকে জানি।
শামীম ওসমান বলেন, নির্বাচনে ঠিক আগ মুহূর্তে যখন অনেকেই চান তাদের পছন্দমতো লোক বসাতে, তখন আমাকেও বলা হয়েছিল। আমি সে সময় মেয়েটিকে বলেছিলাম, আপনি পারবেন কি না। তখন তিনি অন্তঃসত্তা। তিনি বলেছিলেন, আমি কাজ করতে পারলে সুস্থ থাকব। তখন আমি তাকে একজন ভাই হিসেবে বলেছিলাম, আপনি কাজ করতে পারেন, তবে এক শর্তে। বেশি কাজ করবেন না।
তিনি আরও বলেন, আমি জানতে চাই, কার নির্দেশে তাকে ওএসডি করা হলো? বদলি করলে একটা কথা ছিল। ওএসডি করার পর বাচ্চা প্রসাব করল, সেই বাচ্চাটির যে অবস্থা, আমি শঙ্কিত বাচ্চাটি বাঁচবে কি না। যদি খারাপ কিছু হয়, তাহলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।