একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে দেশবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহবান
ঢাকা, লিগ্যাল ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
আগামীকাল ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার দেয়া এক বাণীতে তিনি এই আহবান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে বিপুলভাবে বিজয়ী করেছে। আমাদের ওপর দেশের মানুষ যে দৃঢ় আস্থা রেখেছেন, আমরা তার পরিপূর্ণ মূল্যায়ন করব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের আগেই উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করব, ইনশাআল্লাহ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে ধারণ করে গত ১০ বছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, কূটনৈতিক সাফল্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ প্রতিটি সেক্টরে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’।’
‘মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে বাংলাসহ বিশ্বের সকল ভাষা ও সংস্কৃতির জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মহান একুশে ফেব্রুয়ারি সেই রক্ত¯œাত গৌরবের সুর বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মানুষের প্রাণে অনুরণিত হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কানাডা প্রবাসী সালাম ও রফিকসহ কয়েকজন বাঙালি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ সরকার এ বিষয়ে জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন করে। যার ফলে ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আজ সারাবিশ্বের সকল নাগরিকের সত্য ও ন্যায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণার উৎস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের ২৬ কোটিরও বেশি মানুষের ভাষা বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদানের জন্য আমরা ইতোমধ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দাবি উত্থাপন করেছি। আমরা বিশ্বের সকল ভাষা সংক্রান্ত গবেষণা ও ভাষা সংরক্ষণের জন্য ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি মুক্তি পান। ১৯ এপ্রিল আবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। জুলাই মাসের শেষে তিনি মুক্তি পান। ১৪ অক্টোবর ঢাকায় বঙ্গবন্ধুকে আবারও গ্রেফতার করা হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারাগার থেকেই তাঁর দিকনির্দেশনায় আন্দোলন বেগবান হয়। সেই দুর্বার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শাসকগোষ্ঠীর জারী করা ১৪৪ ধারা ভাঙতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন ভাষা শহিদরা।’
তিনি বলেন, মহান একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জীবনে শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতীক। ১৯৫২ সালের এ দিনে ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে প্রাণ দিয়েছিলেন রফিক, শফিক, জব্বার, বরকত, শফিউদ্দিন, সালামসহ আরো অনেকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ, তমুদ্দুন মজলিস ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সংগ্রাম পরিষদ ধর্মঘট ডাকে। এদিন সচিবালয়ের সামনে থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক ছাত্রনেতা গ্রেফতার হন। ১৫ মার্চ তাঁরা মুক্তি পান। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় অনুষ্ঠিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।
তিনি এ দিনে ভাষা শহিদের স্মৃতির প্রতি ও বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সকল ভাষা সৈনিকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।