কবিরহাটে ‘ধর্ষিতাকে’ আইনি সহায়তা দেবেন মওদুদ
নোয়াখালীর কবিরহাটে ‘ধর্ষণের শিকার’ নারীকে সব ধরনের আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। ঘটনার এক সপ্তাহ পর শুক্রবার সকালে নোয়াখালী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই গৃহবধূর সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ বলেন, ‘আমরা তো এই মহিলার জন্য সর্বপ্রকার সহযোগিতা করব। তার আইনের দিকটা আমরা দেখব এবং হাইকোর্ট, আপিল বিভাগ পর্যন্ত আমরা দেখব। এটাতে ছাড় দেওয়া হবে না। কোনোভাবেই এটার ছাড় পাবে না। যারা এটার সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি পেতেই হবে।’
গত ১৮ জানুয়ারি রাতে কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের নবগ্রামে স্বামীর অনুপস্থিতিতে সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে তিন সন্তানের জননী এক গৃহবধুকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। পরদিন দুপুরে ওই নারী জাকির হোসেন নামে স্থানীয় একজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ছয়জনকে আসামি করে কবিরহাট থানায় মামলা দায়ের করেন।
ওই নারীর স্বামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত ২৩ ডিসেম্বর বিস্ফোরক আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। ধানের শীষের কর্মী বলে মামলায় জড়িয়ে তার স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে তার ভাষ্য।
এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘ধানসিঁড়ি ইউনিয়নে আমাদের একজন নেতা যখন জেলখানায়, তার স্ত্রী একাকি বাড়িতে থাকে। তার তিনটা বাচ্চা ছিল, মা ছিল। তাদেরকে বেঁধে রেখে ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করা হয়েছে।”
এই ঘটনায় দোষীদের রক্ষা করতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করে আইনজীবী মওদুদ বলেন, “মামলার প্রধান আসামি স্থানীয় যুবলীগ নেতা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পরও চিকিৎসকদের রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করে ভুক্তভোগীর ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।”
দলবেঁধে ধর্ষণের এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতাররা হলেন- জাকির হোসেন, মান্না, হারুন, সেলিম ও জামাল উদ্দিন। এদের মধ্যে মান্না ওই গৃহবধূর স্বামীর সৎ ভাই।
এলাকাবাসীর দাবি, ঘটনার প্রধান আসামি জাকির হোসেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা। তবে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা অস্বীকার করেন কবিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল আমিন রুমি ও সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক রায়হান।
ইতোমধ্যে নোয়াখালীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নবনিতা গুহ-এর আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন জাকির হোসেন।
মওদুদ বলেন, “স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে যুবলীগের নেতা তিনি স্বীকার করেছেন এবং তিনি বলেছেন যে, তার সাথে কারা ছিলেন, কীভাবে হয়েছে।
“আজকে শুনলাম যে, মেডিকেল রিপোর্টে কিছু পাওয়া যায়নি। এটা মেডিকেল রিপোর্ট ছিল না, এটা রাজনৈতিক রিপোর্ট ছিল। রাজনৈতিক কারণে ডাক্তারদের প্রভাবিত করে এই ধরনের মিথ্যা রিপোর্ট দিয়েছেন। এর বিচার অবশ্যই আদালতে হবে।”
এই মেডিকেল প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দেন বিএনপির নেতা মওদুদ।
ওই নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন বুধবার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানান নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক খলিল উল্যাহ। তবে প্রতিবেদনে কী আছে, তা প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি।