বাংলাদেশ বিশ্বে এক অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত : গৃহায়নমন্ত্রী

সংসদ ভবন : রাষ্ট্রপতির ভাষণের জন্য আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশকে আজ এক অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর এ আলোচনা শুরু হয়। ওই দিন চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করলে সরকারি দলের সদস্য আ স ম ফিরোজ তা সমর্থন করেন।
গত ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম ও বছরের প্রথম অধিবেশনের শুরুর দিন সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সংসদে ভাষণ দেন।
রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আজ ৮ম দিনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম, সরকারি দলের মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরোত্তম, উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, তানভীর ইমাম, বিরোধী দলের শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও বিকল্প ধারার আব্দুল মান্নান আলোচনায় অংশ নেন।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর হৃদয়ের বিশালতা দিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্ব মানবতায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, দেশের রাজনীতিতে এক প্রাচীনতম দল আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিশ্ব দরবারে। যিনি বিশ্বের নিপীড়িত, নির্যাতিত, অসহায় মানুষের কাছে একজন মা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
মন্ত্রী বলেন, আমরা নির্বাচন করতে গিয়ে মানুষের কাছে জানতে চেয়েছি, কোন শিবিরে ভোট দেবেন? এক শিবিরের নেত্রী দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাদন্ডপ্রাপ্ত। আরেক শিবিরের নেত্রী বিশ্বের জরিপে শ্রেষ্ঠ সৎ রাষ্ট্রনায়ক। এক শিবিরের নেত্রী স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিষ্ঠিত করেছে, তাদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছেন। আরেক শিবিরের নেত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এক শিবিরের নেত্রীর পুত্র হত্যা ও দুর্নীতির দায়ে কারাদন্ডে দন্ডিত। আরেক শিবিরের নেত্রীর পুত্র বিশ্বখ্যাত তথ্য প্রযুক্তিবিদ। মানুষ বেছে নিয়েছেন এবং আস্থা রেখেছেন শেখ হাসিনার প্রতি। তাই তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন জোটকে ভোট দিয়েছেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার আবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ইতোমধ্যে দেশের সকল বিচারপতির জন্য শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করেছে। সংসদ সচিবালয়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য শতভাগ আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মাত্র ৮ শতাংশের আবাসন ব্যবস্থা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ১০ শতাংশের আবাসন ব্যবস্থা হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে এদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কেউ আবাসনবিহীন থাকবেন না।
তিনি বলেন, অনেক বুদ্ধিজীবী টকশোসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করেন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের কোন দোষ তাদের নজরে পড়ে না। তারা একটিবার জিজ্ঞেস করেন না, আকন্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত একজন ব্যক্তি কিভাবে একটা দলের প্রধান থাকে। দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত একজন মানুষ কিভাবে দলের দ্বিতীয় ব্যক্তি হন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পরও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কিভাবে ওই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য থাকেন, অর্থাৎ তারা তাকে স্বীকার করেন।
মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশে অগ্রগতি প্রশংসিত হয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্য পরিমানে বেড়েছে। বাজেটের আকার বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ এখন বহিঃবিশ্ব থেকে খাদ্য আমদানী করছে না। খাদ্যে দেশ এখন স্বয়ংসম্পন্নতা অর্জন করেছে। এটি দেশের স্থিতিশীলতা অন্যতম একটি নিয়ামক। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, যোগাযোগ, বিদ্যুৎসহ দেশের প্রতিটি খাতে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাতা সরাসরি উপকারভোগীর ব্যাংক একাউন্টে দেয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ বা অন্য কোন মাধ্যমে দিলে তা অনেক ক্ষেত্রে উপকারভোগীদের কাছে পৌঁছে না।
উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ বলেন, ভাষণে অত্যন্ত সুন্দর, প্রাঞ্জল ও সাবলিল ভাষায় রাষ্ট্রপতি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, দুর্নীতিকে যদি কঠোরভাবে দমন করা যায় তাহলে দেশ উন্নয়নের দিকে আরো তীব্র গতিতে এগিয়ে যাবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে সরকার পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে।
ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের শপথ না নেয়ার জন্য ড. কামালের নিষেধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন সাহেব নিজেকে একজন সংবিধান প্রণেতা হয়ে কিভাবে একজনকে বলেন যে, শপথ নিবেন না, শপথ না নিতে বলাও সংবিধানিক অপরাধ, সংবিধানের ১৪৮ ধারার প্রতি অবজ্ঞা।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে রাষ্ট্রপতির ভাষণে অনেক ভালো বিষয় রয়েছে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিস্তারিত দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তবে অনেক ব্যর্থতা ও সীমাবদ্ধতার দিকগুলো এতে তুলে ধরা হয়নি। হলে ভাষণটি পূর্ণাঙ্গ হতো। বিশেষ করে নতুন কর্মসংস্থান, পরিবেশ দূষণ, যানজট, ব্যাকিং খাতে অব্যবস্থা ও অর্থপাচারের মতো আরো অনেক বিষয় ভাষণে তুলে ধরা হয়নি।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *