সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের আগুন নিয়ন্ত্রণে, আংশিক চালু

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের কার্যক্রম আংশিক চালু করা হয়েছে। হাসপাতালের মাঠে রাখা রোগীদের ভবনে তোলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতাল চালুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। এর আগে বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে লাগা আগুন ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ঘটনাস্থল তৃতীয় তলার কয়েকটি ওয়ার্ড বাদে অন্যান্য ওয়ার্ডে চিকিৎসাসেবা রাতেই চালু হচ্ছে। ইতোমধ্যে জরুরি বিভাগ খুলে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের মাঠে অবস্থান করা রোগীদের ভবনে তোলা হয়েছে। আগুন লাগার পর এই হাসপাতাল থেকে যে ১১শ’র মতো রোগীকে আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে তারা চাইলে এখন হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে পারেন। আর যদি তারা সেখানে থেকেই চিকিৎসা নিতে চান তাও পারেন। আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।’

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জি এম সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘৯ নম্বর ওয়ার্ডে আগুনের সূত্রপাত। আগুন লাগার পরপরই ফায়ার সার্ভিস কাজ শুরু করে। সর্বশেষ তাদের ১৭টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।’ তিনি বলেন, ‘সবার সহযোগিতায় সোয়া ঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। প্রায় ১১শ’ রোগী ছিল। তাদের আধা ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার করে ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আমাদের আইসিইউতে ১০ জন রোগী ছিল, তাদের সবার আগে স্থানান্তর করা হয়েছে। তারাসহ সব রোগীকে কোনও ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়াই উদ্ধার ও নিরাপদে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে হঠাৎ ধোঁয়া। এর পর পরই পুরো হাসপাতালে আতঙ্ক। ছোটাছুটি শুরু হয় রোগীর স্বজনদের মধ্যে। এর মধ্যেই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। আড়াই ঘণ্টার বেশি চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

গতকালের এ অগ্নিকাণ্ডের পর পরই হাসপাতাল থেকে রোগীদের দ্রুত নিচে নামিয়ে আনা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী রোগীদের তাদের পছন্দের হাসপাতালে দ্রুত সরিয়ে নেয়ার জন্য বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থাও করা হয়। রোগীদের পছন্দ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি নেয়ার জন্যও সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অনেকেরই বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়ার মতো আর্থিক সংগতি নেই। তারা অবস্থান করছেন হাসপাতালের নিচতলার বারান্দায়।

আগুন লাগার পর পরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমেদ খান। তিনি বলেন, বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুনের খবর পেয়ে প্রথমে সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পরে আরো ১০টি ইউনিট সেখানে যুক্ত হয়ে রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। হাসপাতালের তৃতীয় তলার স্টোররুম থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে সংসদ অধিবেশন থেকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আগুনে হতাহতের কোনো খবর আমরা পাইনি। যত রোগী ছিল, তাদের সবাইকে বের করে আনা হয়েছে।

তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ভবনে যত রোগী ছিল সবাইকে বাইরে আনা হয়েছে। শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, নার্স ও রোগীর স্বজনের সহযোগিতায় রোগীদের বাইরে আনা সম্ভব হয়েছে। ভেতরে আর কোনো রোগী নেই।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়াকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন থেকে সাতদিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখব। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *