তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত গেদিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, ইস্তাম্বুল- এর কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নের প্রেক্ষাপট এবং বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। উক্ত আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সুশীল সমাজ ও এনজি ও কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন ।

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে আজ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির ক্ষেত্রে যে বিপ্লব ঘটেছে তার পেছনে রয়েছে নারীদের বলিষ্ঠ ভূমিকা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ।

তিনি বলেন, নারীর বর্তমান অবস্থা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি উজ্জ্বল। নারীরা এখন তাদের মায়েদের চেয়ে অধিকতর শিক্ষিত এবং অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম। পোশাক শিল্পের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক নারী নিয়োজিত রয়েছে অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ নির্বাচিত আসন মিলিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী সংসদ সদস্য রয়েছে । বাংলাদেশের নারীরা এখন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি রক্ষায় অবদান রেখে চলেছে । তিনি আরও যোগ করেন, বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭% এর ওপর । নিম্ন আয়ের দেশ হতে মধ্য আয়ের দেশে রূপান্তরের পথে অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নারীর অংশগ্রহণ । নারীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করার ফলে বাংলাদেশ আজ এ সুফল ভোগ করছে।

নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে কনসাল জেনারেল সরকারের গৃহীত বিভিন্ন নীতি ও কার্যক্রমের কথা বিশদভাবে বর্ণনা করেন । ১২ গ্রেড পর্যন্ত মেয়েদের বিনা বেতনে পাঠদান, শিক্ষা উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন স্কিমের কথা তুলে ধরেন যা জ্ঞান- নির্ভর সমাজ গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখছে বলে দৃঢ়তার সাথে ব্যক্ত করেন । স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ, শিশু- ও মাতৃ মৃত্যুর হার কমাতে সক্ষম হয়েছে । ড. ইসলাম উল্লেখ করেন, নারীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও বিস্তৃত করেছে সরকার । বিধবা, বয়স্ক ও দুঃস্থ মহিলাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ মানব পাচার ও গৃহ নির্যাতনসহ নারীর বিরুদ্ধে অন্যান্য নির্যাতন ও নিপীড়ন রোধে রয়েছে উপযুক্ত প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা।

নারীর ক্ষমতায়নে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ বর্ণনা করে ড. ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে আন্তর্জাতিক মহলে এখন এক অনুসরনীয় দৃষ্টান্ত । দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নারীর ক্ষমতায়নের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রথম স্থানে রয়েছে ।

প্রসঙ্গক্রমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য অবদানের জন্য বিশ্ব স্বীকৃতির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে নারীর শিক্ষা ও নারী উদ্যোগের জন্য ‘গ্লোবাল উইমেন′স লিডারশিপ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ।

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশ- তুরস্ক দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ওপর তাগিদ দিয়ে উপস্থিত তুর্কি নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণ ও পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য অনুরোধ করেন কনসাল জেনারেল । উল্লেখ্য, বাংলাদেশের নারীর ব্যাপক অগ্রগতি ও সাফল্যের গল্প জানতে পেরে তুর্কি নাগরিকরা উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *