গ্রামীণ বৈশিষ্ঠ্য বজায় রেখেই গ্রাম উন্নয়ন নীতিমালার দাবি

ঢাকা, লিগ্যাল ভয়েস: বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইসতেহারে উল্লেখিত অন্যতম প্রধান অঙ্গিকার গ্রামকে আধুনিকায়ন করা। এই অঙ্গিকার বাস্তবায়নে সরকার বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। নিঃসন্দেহে গ্রাম প্রধান এদেশের জন্য এটি একটি আশা জাগানিয়া প্রতিশ্রুতি, একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। একই সাথে এটি বাস্তবায়নে আমরা যদি যথেষ্ট সতর্কতা এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পরিকল্পনার আশ্রয় না নিই তাহলে আমরা বৈচিত্র্যপূর্ণ ইকোসিস্টেমসম্পন্ন গ্রামীণ জীবনব্যবস্থাকে যেমন হারাবো তেমনিভাবে পরিবেশ বিপর্যয়ে সারাদেশ নিমজ্জিত হবে। সারা বিশ্বে এবং বাংলাদেশেও গ্রাম উন্নয়নের বিভিন্ন মতবাদ ও মডেল রয়েছে। এই সমস্ত মতবাদ ও মডেলকে বিবেচনায় নিয়ে গ্রামীণ বৈশিষ্ঠ্যকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের উপযোগী গ্রাম উন্নয়ন নীতিমালা করতে হবে।

রোববার (২৭ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বারসিক-এর যৌথ উদ্যোগে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলোনায়তনে ‘গ্রামীণ মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও গ্রাম উন্নয়ন নীতিমালা’-শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
সরকারের গ্রাম উন্নয়ন উদ্যোগকে জনপ্রিয় করার জন্য গ্রামের কর্মসংস্থান, চাষাবাদ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন, খেলাধুলা, জৈব কৃষি, রিসাইকেল এনার্জি কিভাবে কাজে লাগাতে হতে এসব বিষয়ে আলোচনা সামনে আনার জন্য পবা ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাবে। সরকারের উচিত নীতিমালা ভিত্তিতে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা।

বক্তারা বলেন, গ্রাম উন্নয়নে গ্রামের সাধারন মানুষদের জীবনযাত্রার সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে সেই সাথে অঞ্চলভেদে বৈচিত্র্যপূর্ণ যে গ্রামীণ ইকোসিস্টেম বজায় রয়েছে তা যাতে কোন ভাবেই বিঘ্নিত না হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। মানুষ সহ বিভিন্ন প্রাণবৈচিত্র্যের বসবাসের জন্য শহর অপেক্ষা গ্রাম অধিক উপযোগী এবং শান্তিময়। সুতরাং গ্রামকে শহরে রূপান্তর করার কোন পরিকল্পনা গ্রহণ অপেক্ষা আমাদেরকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে গ্রামে যেসব সুযোগ সুবিধার অভাব রয়েছে তা দূর করা। শহরকেন্দ্রিক সব সুযোগ সুবিধা অল্পপরিসরে হলেও গ্রামগুলোতে থাকা প্রয়োজন। এক কথায় শহর ও গ্রামের মধ্যে সুযোগ সুবিধার বৈষম্য কমানো দরকার।

বক্তারা আরও বলেন-গ্রামীণ উন্নয়নে কৃষিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কৃষি খাতের উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। কৃষিকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। গ্রামে কৃষিজাত পণ্য-দ্রব্য সঠিকভাবে সংরক্ষনের জন্য পর্যাপ্ত সংরক্ষনাগার থাকতে হবে। প্রান্তিক কৃষকের সমস্যাগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে সেগুলো সমাধানের টেকসই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার জন্য এবং কৃষিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিটি গ্রামে কমপক্ষে একজন কৃষককে “আদর্শ চাষী সম্মানী” প্রদান করা যেতে পারে। একটি গ্রামে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর নাগরিক প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে সুযোগ সুবিধা এবং অবকাঠামো থাকা অতি প্রয়োজন যেমন স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, পাঠাগার, খেলার মাঠ, ব্যায়ামাগার, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ইত্যাদি। বাংলাদেশের গ্রামগুলোর আবাসন, অবকাঠামো এবং দূষণের ক্ষেত্রে পরিবেশগত উন্নয়নের চিন্তা এবং গবেষণার প্রয়োজনে স্থানীয় মেধাকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে। গ্রামের হাসপাতালগুলোকে আধুনিকায়ন করতে হবে। সার্বক্ষনিক পর্যাপ্ত ডাক্তার এবং ্ঔষুধের সরবরাহ থাকতে হবে। সর্বোপরি স্বাস্থ্যসেবার মান সুনিশ্চিত করতে হবে। গ্রামে দায়িত্বরত ডাক্তারদের নিরাপত্তা এবং সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে। গ্রামের শিক্ষাকে আনন্দদায়ক করতে হবে। মানসম্পন্ন অভিজ্ঞ শিক্ষক যেন গ্রামে বসবাস করার অনুপ্রেরনা পান সেজন্য তাদের সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা দিতে হবে, এমনকি সেটি শহরের সুযোগ সুবিধার কোন অংশে কম করা যাবে না। গ্রামে ‘ক্লিন এনার্জি’ যেমন: বাতাস, সৌরশক্তি, বায়োগ্যাস, মাইকো-হাইড্রো এর ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষে স্থাণীয়ভাবে সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতে পারে। গ্রামগুলোতে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে, বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে হবে। আমরা জানি প্রতিটি অঞ্চল একে অপরের থেকে নিজস্ব রীতিনীতি, ভাবধারা কিংবা পরিবেশগত কারণে ভিন্নতর। অথচ এখনো আমাদের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল, শহর, মফস্বল কিংবা গ্রামকেন্দ্রিক স্থাপত্যের নিজস্ব প্যাটার্ন বা রূপরেখা নেই। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই গ্রাম কিংবা মফস্বলের অস্তিত্ব্ বিলীন হয়ে যাবে। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে বাংলাদেশের গ্রামগুলোর জন্য প্রয়োজন “টেকঁসই গ্রাম উন্নয়ন পরিকল্পনা” নীতিমালা।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক স্থপতি সজল চৌধুরী, সঞ্চালনা করেন পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল। বক্তব্য রাখেন- বুয়েটের স্থাপত্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদা নিলুফার, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিন, ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেলিম রশিদ, পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী, বারসিকের সমন্বয়কারী সৈয়দ আলি বিশ্বাস, সহ-সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম, মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আতিক মোরশেদ, প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম তাহিন, ক্যামেলিয়া চৌধুরী, মাহবুল আলম প্রমুখ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *